বল কাকে বলে? বল কত প্রকার? বল এর বৈশিষ্ট্য?

বল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়। বল হচ্ছে যে শক্তি যা কোন বস্তুকে অবস্থান বা গতি পরিবর্তন করতে সক্ষম।

বল ছাড়া কোন বস্তু নিজে থেকে গতিশীল হতে পারে না। একটি স্থির বস্তুর উপর প্রয়োগ করা হলে বল তাকে গতিশীল করে এবং কোন গতিশীল বস্তুর উপর প্রয়োগ করা হলে তার গতি পরিবর্তন করে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বলের বিভিন্ন রূপ দেখা যায় যেমন মানুষের শারীরিক শক্তি, যানবাহনের ইঞ্জিনের শক্তি, বাতাসের ঝড়ের শক্তি ইত্যাদি।

বলের ইংরেজি শব্দ হল Force। বলের পরিমাপ হল নিউটন। বল যত বেশি হবে বস্তুর উপর সেটার প্রভাব তত বেশি হবে। বলের দিক ও পরিমাপ নির্ণয় করা যায় ভেক্টরের মাধ্যমে।

এই ব্লগ পোস্টে আমি বল কাকে বলে, বলের বিভিন্ন ধরণ এবং তার প্রভাব, বল এর একক, সূত্র, বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয় নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি এই ব্লগ পোস্ট আপনাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দেবে এবং বলের কাজ সম্পর্কে আপনাদের বোঝার মত সাহায্য করবে।

বল কাকে বলে :-

যা কোন স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করতে চায় বা কোন গতিশীর বস্তুর উপর ক্রিয়া করে এর গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায়, তাকে বল বলা যায়।

এক কথায় বল কাকে বলে এর উত্তরে বলা যায়, যা কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করে এর জড়তার পরিবর্তন করে বা করতে চায়, তাকে বলে বল।

নিউটনের প্রথম চলন সূত্রে বল সম্পর্কে বলা হয়েছে:

"An object at rest stays at rest and an object in motion stays in motion with the same speed and in the same direction unless acted upon by an unbalanced force."

এখানে "unbalanced force" বা অসমবলিত বলকেই বোঝায়।

অর্থাৎ, কোন বস্তু যদি নিশ্চল অবস্থায় থাকে তাহলে সে সেই অবস্থায়ই থাকবে। আবার যদি কোন দিকে এক নির্দিষ্ট বেগে গতিশীল হয়, সেও সেই গতিতেই এক দিকে অগ্রসর হবে - যদি না কোন বল সের উপর প্রভাব ফেলে।

সংক্ষেপে, বল হল একটি শক্তি যা কোন বস্তুর গতির পরিবর্তন বা গতি সৃষ্টি করতে পারে।

বল এর উদাহরণ :-

ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান ব্যাট দিয়ে বলকে হিট করেন এবং সেই বলটি মাঠের বাইরে যায়। এখানে ব্যাটসম্যান ব্যাট ব্যবহার করে বলে একটি বল প্রয়োগ করেছেন যার ফলে সেই বলটি গতিশীল হয়েছে।

সুতরাং, বল হচ্ছে যে শক্তি যা কোন বস্তুর ওপর প্রয়োগ করা হলে সেই বস্তুর গতির পরিবর্তন সাধিত হয়।

বলের রাশি কি?

বলের রাশি হল একটি ভেক্টর রাশি (vector quantity)।

কোনও বলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে:

1. মাত্রা (Magnitude) - বলের পরিমাণ বা শক্তির পরিমাপ

2. দিক (Direction) - বলের কর্মকাণ্ডের দিক

3. বিন্দু প্রয়োগ (Point of application) - বল কর্মকাণ্ড করার জায়গা

এই তিনটি উপাদান বিবেচনা করে বলকে একটি ভেক্টর রাশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে মাত্রা, দিক এবং বিন্দু প্রয়োগ অন্তর্ভুক্ত থাকে। সুতরাং বলের রাশি হিসাবে ভেক্টর রাশিকে বিবেচনা করা হয়।

বলের একক কী কী?

বলের বিভিন্ন পরম একক গুলি নিম্নে দেওয়া হল। যেমন:

1. সিআই একক: নিউটন (N)

2. এমকেএস একক: কিলোগ্রাম-মিটার/সেকেন্ড^2 (kg m/s^2)

3. সিজিএস একক: ডাইন/সেন্টিমিটার (dyn/cm)

4. ইম্পিরিয়াল একক: পাউন্ড (lb)

5. মেট্রিক একক: নিউটন (N)

6. ইঞ্জিনিয়ারিং একক: পাউন্ডাল (lbf)

7. প্ল্যানেটারি একক: পাউন্ড (lbf)

এছাড়াও জ্বালানি, ওজন, দ্রুতি ইত্যাদির এককও বলের একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বলের মাত্রা কি?

বলের মাত্রা হল [MLT^-2]

এখানে,

M = দ্রব্যমাত্রা (Mass)

L = দৈর্ঘ্যমাত্রা (Length)

T = সময়মাত্রা (Time)

বলের SI একক হল নিউটন (N)।

1 নিউটন = 1 কিলোগ্রাম x মিটার/সেকেন্ড^2

অর্থাৎ, যেহেতু বলের এককে দ্রব্যমাত্রা, দৈর্ঘ্যমাত্রা এবং সময়মাত্রার এককগুলো ব্যবহৃত হয়, তাই বলের মাত্রার একক [MLT^-2] হিসেবে পাওয়া যায়।

বলের সূত্র:

F = ma

এখানে,

F = বল (নিউটন এককে)

m = দ্রব্যমাত্রা (কিলোগ্রাম এককে)

a = ত্বরণ (মিটার/সেকেন্ড^2 এককে)

অর্থাৎ, বল হল দ্রব্যমাত্রা এবং ত্বরণের গুণফল।

এই সূত্রটি নিউটনের দ্বিতীয় চলন সূত্র হিসেবেও পরিচিত। এর অর্থ হল যে কোন বস্তুর উপর যত বেশি বল প্রয়োগ করা হবে, তার ত্বরণ তত বেশি হবে।

সুতরাং বল F = দ্রব্যমাত্রা x ত্বরণ এই সূত্রে প্রকাশিত হয়।

বলের বৈশিষ্ট্য :-

বলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল:

১) বল একটি ভেক্টর রাশি - বলের দিক এবং পরিমাণ উভয়ই থাকে। একটি নির্দিষ্ট দিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বলের কাজ করাকে বলা হয়।

২) বলের একক নিউটন - আন্তর্জাতিক একক ব্যবস্থায় বলের একক হল নিউটন।

৩) বল দুই প্রকারের - স্পর্শকাতর বল এবং দূরবর্তী বল। যেমন ঠোঁটে ফুঁ করা, হাতে টানা ইত্যাদি স্পর্শকাতর বলের উদাহরণ।

৪) বল শূন্যের চেয়ে ছোট হতে পারে না - বলের পরিমাণ শূন্যের চেয়ে সবদাই ডানদিকে থাকে।

৫) বল গতি সৃষ্টি করে - বল ছাড়া কোন বস্তু নিজে থেকে গতিশীল হতে পারে না।

৬) বল গতির দিক ও বেগ পরিবর্তন করে - বল প্রয়োগের আগে ও পরে বস্তুর গতির দিক ও বেগে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

৭) বল সরাসরি অনুপাতিক ত্বরণের - বল যত বেশি হবে ত্বরণ তত বেশি হবে।

৮) দুইটি বলের ফলাফল ভেক্টর যোগ দ্বারা পাওয়া যায় - একাধিক বল কাজ করলে তাদের ফলাফলের ভেক্টর যোগ করতে হয়।

বলের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব:

বলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতা রয়েছে, যেমন:

১. বল ছাড়া কোনও বস্তু নিজে থেকে গতিশীল হতে পারে না। বলই গতি সৃষ্টি করে।

২. বল বস্তুর বেগ এবং দিক পরিবর্তন করে। যাতে বস্তুর গতির পরিবর্তন ঘটে।

৩. বল বস্তুকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। যেমন গাড়ি, লিফট, রকেট ইত্যাদি।

৪. বল বিভিন্ন যান্ত্রিক কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন হামার, ড্রিল, ক্রেন ইত্যাদি।

৫. বল পৃথিবীর উপর সকল জীব-জন্তু এবং বস্তুকে আকর্ষণ করে রাখে (গুরুত্বাকর্ষণ বল)।

৬. বিভিন্ন খেলাধুলা যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, বিলিয়ার্ডস ইত্যাদিতে বলের প্রয়োগ থাকে।

৭. বল দিয়েই পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ভ্রমণ করে।

সুতরাং বল আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বলের ব্যবহার অপরিহার্য।

বলের প্রকারভেদ :-

দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে বলকে সাধারণভাবে দু'ভাগে ভাগ করা যায়।

(i) স্পর্শ বল
(ii) অস্পর্শ বলে।

(i) স্পর্শ বল কাকে বলে:-

যে সকল বল প্রয়োগের জন্য বস্তুর সংস্পর্শ প্রয়োজন হয় তাকে স্পর্শ বল বলে।

অর্থাৎ যে বল সৃষ্টির জন্য দুইটি বস্তুকে প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসতে হয় তাকে স্পর্শ বল বলে।

স্পর্শ বল আবার বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন- টান বল, ঘর্ষণ বল, সংঘর্ষ বল।

টান (Tension) :

টান (Tension) হল একটি সরু রশি বা তার মাধ্যমে কোনও বস্তুকে টানার জন্য প্রয়োজনীয় বল।

যখন কোনও বস্তুকে একটি সরু রশি বা তার দ্বারা টানা হয়, তখন সেই রশির উপর একটি বল কাজ করে। এই বলকেই টান বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা একটি রশি দিয়ে কোনও বাক্সকে টানি, তখন সেই রশির উপর যে টানজনক বল কাজ করে তাকেই বলা হয় টান। সুতরাং টান হচ্ছে বস্তুকে টানার জন্য প্রয়োজনীয় বল।

চাপ (Pressure):

চাপ (Pressure) হচ্ছে কোনও বস্তুকে অন্য কোনও বস্তুর উপর রাখার ফলে প্রথম বস্তুটি দ্বারা দ্বিতীয় বস্তুর উপর প্রয়োগকৃত বল।

যখন একটি বস্তুকে অন্য একটি বস্তুর উপর রাখা হয়, তখন নিচের বস্তুর উপর উপরের বস্তু থেকে একটি বল কাজ করে। এই বলকেই চাপ বল বলা হয়। চাপের একক হল পাস্ক্যাল।

সুতরাং, চাপ হল দুটি বস্তুর স্পর্শ সীমানায় কাজ করা বল।

ঠেলা বা ধাক্কা (Thrust or Impulse):

ঠেলা বা ধাক্কা (Thrust or Impulse) হল একটি বস্তুকে একক্ষণিক বল প্রয়োগ করে এগিয়ে নেওয়া বা সরানো।

যেমন আপনার উদাহরণে, বাসটিকে সরানোর জন্য কয়েকজন লোক একক্ষণিক বল প্রয়োগ করে ঠেলে দেয়। সেই ঠেলা বা ধাক্কাকেই Thrust বা Impulse বলা হয়।

সুতরাং, ঠেলা হচ্ছে একটি ক্ষণিক বল যা দিয়ে বস্তুকে এগিয়ে নেওয়া বা সরানো হয়।

ঘর্ষণ (Friction):

দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে যদি একটি উপর দিয়ে অপরটি চলতে চেষ্টা করে, তবে বস্তু দু'টির স্পর্শতলে একটি রাধার উৎপত্তি সৃষ্টি হয়, এ বাধাকে ধর্ষণ বলে। আর যে বল গতিশীল বস্তুটির গতির পথে বাধা সৃষ্টি করে, তাকে ঘর্ষণ বল বলে।

ঘর্ষণ বলের কিছু উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হল:
  • হাতে লেখার জন্য কলমের উপর আঙ্গুলের চাপ দেওয়া। কলম এবং কাগজের মধ্যে যে ঘর্ষণ বল সৃষ্টি হয় তা দিয়ে লেখা হয়।
  • হাতে বস্তা ধরার সময় হাত ও বস্তার মধ্যে ঘর্ষণ বলের সৃষ্টি হয়।
  • পা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা ও মাটির মধ্যে ঘর্ষণ বল কাজ করে।
  • বাইক চালানোর সময় পিছনের টায়ার ও রাস্তার মাঝখানে ঘর্ষণ বল সৃষ্টি হয়।

সংঘর্ষ বল:

সংঘর্ষ বল হল দুইটি স্পর্শকাতর বস্তুর মধ্যে যে বল কাজ করে, যা দুটি বস্তুর পারস্পরিক সর্বনিম্ন গতিকে বাধা দেয়।

সংঘর্ষ বলের কিছু উদাহরণ:
  • - হাতে কলম ধরার সময় হাত ও কলমের মধ্যে সংঘর্ষ বল কাজ করে।
  • - টেবিলের উপর বই সরানোর সময় বই ও টেবিলের মধ্যে সংঘর্ষ বল লাগে।
  • - কাঁচা মাটিতে হাঁটার সময় পা ও মাটির মধ্যে সংঘর্ষ বলের সৃষ্টি হয়।
  • - টায়ার ও রাস্তার মধ্যে সংঘর্ষ বল কার্যকর থাকে।
  • - ব্রেক প্রয়োগের সময় ব্রেক প্যাড ও টায়ার মধ্যে সংঘর্ষ বল কাজ করে।

এগুলো সংঘর্ষ বলের কিছু উদাহরণ।

(ii) অস্পর্শ বল:

যে বল সৃষ্টির জন্য দুইটি বস্তুকে প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসতে হয় না তাকে অস্পর্শ বল বলে।

আকর্ষণ (Attraction) :

আকর্ষণ বল হচ্ছে দুইটি বস্তুর মধ্যে কোন বাহ্যিক বল ছাড়াই যে আন্তরিক বলের কারণে তারা পরস্পরের দিকে আকৃষ্ট হয় বা একে অপরের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।

আপনার উদাহরণগুলো খুবই ভালো। যেমন লৌহখণ্ড চুম্বকের আকর্ষণে চুম্বকের দিকে এগিয়ে যায়। এর মধ্যে কোন বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা হয়নি, তবুও লৌহখণ্ডটি আকৃষ্ট হচ্ছে চুম্বকের দিকে।

সুতরাং আকর্ষণ বল হল দুই বস্তুর মধ্যে থাকা একটি অদৃশ্য আন্তরিক আকর্ষণের বল।

বিকর্ষণ (Reputation):

বিকর্ষণ বল হল দুইটি বস্তুর মধ্যে কোন বাহ্যিক বল প্রয়োগ ছাড়াই যে আন্তরিক বলের কারণে তারা পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়।

আপনার উদাহরণটি খুবই ভালো। দুইটি চুম্বকের সমজাতীয় ধ্রুব কাছাকাছি এলে তারা পরস্পর থেকে সরে যায়। কোন বাহ্যিক বল ছাড়াই চুম্বকগুলোর মধ্যে একটি অদৃশ্য বিকর্ষণ বল কাজ করে।

সুতরাং, বিকর্ষণ বল হচ্ছে দুইটি বস্তুকে পরস্পর থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার আন্তরিক বল।

মহাকর্ষ বল :

দু’টি কণার মধ্যবর্তী আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বল বলা হয়।

মহাকর্ষ বলের কিছু উদাহরণ:

1. পৃথিবী এবং তার উপর থাকা বস্তুগুলোর মধ্যে মহাকর্ষ বল কাজ করে। এর ফলেই বস্তুগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রে আকৃষ্ট হয়।

2. চাঁদ এবং পৃথিবীর মধ্যে মহাকর্ষ বলের কারণেই চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে ভ্রমণ করে।

3. সূর্য এবং তার চারপাশে অবস্থিত গ্রহগুলোর মধ্যে মহাকর্ষ বল কাজ করে, যার ফলে গ্রহগুলো সূর্যের চারপাশে ভ্রমণ করে।

4. প্রোটন ও ইলেক্ট্রনের মধ্যে কার্যকর মহাকর্ষ বলই পরমাণুকে একসাথে রাখে।

এগুলো মহাকর্ষ বলের কিছু উদাহরণ।

তড়িৎ বল :

দুটি আহত বস্তুর মধ্যে কাজ করা বিকর্ষণ বলকে তড়িৎ বল বলা হয়।

তড়িৎ বলের কিছু উদাহরণ:

1. দুটি একই প্রকারের চুম্বকের মধ্যে তড়িৎ বল কাজ করে। এর ফলে তারা পরস্পর থেকে সরে যায়।

2. ইলেক্ট্রনগুলোর মধ্যে তড়িৎ বলের কারণেই তারা পরস্পর থেকে দূরে থাকে।

3. হাতে একই প্রকারের দুটি চুম্বক ধরা হলে তাদের মধ্যে তড়িৎ বল সক্রিয় হয়।

4. প্রতি-প্রতিবিম্বের মধ্যে তড়িৎ বল কাজ করে।

5. গ্রহগুলোর মধ্যে তড়িৎ বলের কারণেই তারা পরস্পর সংঘর্ষে না জড়িয়ে ভ্রমণ করে।

এগুলো তড়িৎ বলের কিছু উদাহরণ।

চৌম্বক বল:

চুম্বক এবং চৌম্বক পদার্থের মধ্যে যে আকর্ষণ-বিকর্ষণ বল কাজ করে তাকেই চৌম্বক বল বলা হয়।

কোন চুম্বককে কোন চৌম্বক পদার্থের (যেমন লৌহ, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদি) কাছে রাখলে চুম্বকটির ভিতর থেকে চৌম্বক ক্ষেত্ররেখা বের হয় এবং সেই ক্ষেত্ররেখা চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষণ-বিকর্ষণের মাধ্যমে প্রভাবিত করে। এই আকর্ষণ-বিকর্ষণ বলকেই চৌম্বক বল বলা হয়।

চৌম্বক বলের কিছু উদাহরণ:

1. চুম্বক এবং লৌহের মধ্যে কার্যকর চৌম্বক আকর্ষণ বলের কারণেই লৌহখণ্ড চুম্বকের কাছে আকৃষ্ট হয়।

2. চুম্বক এবং নিকেলের মধ্যে চৌম্বক বলের কারণে নিকেল চুম্বকের কাছে আকর্ষিত হয়।

3. চুম্বক এবং কোবাল্টের মধ্যে চৌম্বক বলের প্রভাবে কোবাল্টও চুম্বকে আকৃষ্ট হয়।

এছাড়াও আরও কিছু বল এর প্রকারভেদ নীচে আলোচনা করা হয়েছে -


একক বল :

একক ভরের কোন বস্তুর উপর একক ত্বরণ সৃষ্টি করতে যে বল প্রযুক্ত হয় তাকে একক বল বলে।

একক বল হল ঐ বল যার কার্যকারী বিন্দু একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে সীমিত। অর্থাৎ যেখানে শুধুমাত্র একটি বিন্দুতে বলটি কাজ করে।

যেমন:
  • - একটি বস্তার ওজন শুধুমাত্র বস্তার ভারকেন্দ্র বিন্দুতেই কাজ করে।
  • - টানের ক্ষেত্রে বলটি কাজ করে শুধুমাত্র টানবদ্ধ সেই বিন্দুতেই।
  • - চাপের ক্ষেত্রে প্রয়োগ বিন্দু হল যে বিন্দুতে দুটি বস্তুর সংঘর্ষ ঘটে।

সুতরাং, একক বল হল এমন বল যা কেবল একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতেই কাজ করে।

ঘূর্ণন বল :

যখন কোনও কণা ঘূর্ণন করে (অর্থাৎ ঘোরাঘোরি ঘুরে), তখন সেই কণার ব্যাসার্দ্ধ ভেক্টর (ঘূর্ণন কেন্দ্র থেকে কণার লম্বদিকের দূরত্ব) এবং কণার উপর কার্যকর বলের ভেক্টরের গুণফলকে ঘূর্ণন বল বা টর্ক বলা হয়।

সহজ ভাবে বললে, স্ক্রুকে খোলার জন্য একটি মোচড়বল প্রয়োগ করা হলে একধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। এরূপ বলকে ঘূর্ণন বল বলে।

সাধারণত এর একক হল নিউটন-মিটার (Nm)। এই ঘূর্ণন বলই সেই কণাটির ঘূর্ণনের গতি এবং দিক নির্ধারণ করে।

সাম্য বল:

একাধিক বল কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করলে যদি বলের লব্ধি শূন্য হয় অর্থাৎ বস্তুটির কোন ত্বরন না হয়, তখন আমরা বলি বস্তুটি সাম্যাবস্থায় আছে। আর যে বলগুলো এ সাম্যবস্থার তৈরি করে তাদেরকে সাম্য বল বলে।

অসাম্য বল:

একাধিক বল কোন বস্তুর উপর ক্রিয়া করলে যদি বলের লব্ধি শূন্য না হয় তবে বস্তুটির অবস্থার পরিবর্তন ঘটে তখন আমরা বলি বস্তুটি অসাম্যাবস্থায় আছে। যে বলগুলো এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় তাকে অসাম্য বল বলে।

মৌলিক বল :

মৌলিক বল হল যে বলগুলি অন্য কোনও বল থেকে উৎপন্ন হয় না এবং এগুলোকে আরও সাধারণ বলে ভাগ করা যায় না। মৌলিক বলের কিছু উদাহরণ:

1. গুরুত্বাকর্ষণ বল - পৃথিবীর আকর্ষণে যে বল কাজ করে তাকে গুরুত্বাকর্ষণ বল বলা হয়। এটি একটি মৌলিক বল।

2. বিদ্যুৎ বল - প্রোটন এবং ইলেক্ট্রনের মধ্যে যে আকর্ষণ-বিকর্ষণ বল কাজ করে তাকে বিদ্যুৎ বল বলা হয়। এটিও মৌলিক বলের একটি উদাহরণ।

3. পার্শ্ববর্তী বল - দ্রব্যমাত্রার স্থানান্তরণের সময় যে বল কাজ করে তাকে পার্শ্ববর্তী বল বলা হয়। এটিও মৌলিক বলের একটি উদাহরণ।

সুতরাং মৌলিক বল হচ্ছে যে বলগুলি অন্য কোনও বল থেকে উৎপন্ন নয় এবং আরও সাধারণ বলে ভাগ করা সম্ভব নয়।

যৌগিক বল :

যৌগিক বল হল এমন বল যা একাধিক মৌলিক বলের ফলাফল। অর্থাৎ যৌগিক বল হল মৌলিক বলগুলোর যোগফল। যৌগিক বলের কিছু উদাহরণ:

1. টান - যখন একটি রশি বা তার দ্বারা কোনও বস্তুকে টানা হয়, তখন সেই রশির উপর কার্যকর বলকে টান বলা হয়। এটি মৌলিক বলগুলোর ফলাফল।

2. বাতাসের চাপ - বাতাসের ঘনত্ব এবং গ্রাভিটেশনাল আকর্ষণের ফলাফলে তৈরি হয় বাতাসের চাপ। এটিও যৌগিক বলের একটি উদাহরণ।

3. বায়ুর প্রতিরোধ - একটি বস্তুর বায়ুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয় বায়ুর প্রতিরোধ বল। এটিও যৌগিক বলের একটি উদাহরণ।

সুতরাং, যৌগিক বল হচ্ছে মৌলিক বলগুলোর ফলাফল যা একাধিক মৌলিক বলের সমষ্টি।

সবল নিউক্লিয় বল :

প্রোটন এবং নিউট্রনের মধ্যে যে সবল আকর্ষণ বল কাজ করে, যা পরমাণু কেন্দ্রকে একসাথে রাখে, তাকেই সবল নিউক্লিয় বল বলা হয়।

এটি একটি খুবই শক্তিশালী বল যা প্রোটন ও নিউট্রনকে একে অপরের সাথে আবদ্ধ করে রাখে। ফলে পরমাণুর কেন্দ্রক ধ্বংস হয় না।

সবল নিউক্লিয় বলই পরমাণুকে স্থিতিশীল করে এবং পরমাণু থেকে উৎপন্ন হয় অসাধারণ পরিমাণ শক্তি।

সুতরাং, সবল নিউক্লিয় বল হচ্ছে পরমাণু কেন্দ্রককে একসাথে রাখার জন্য কাজ করা শক্তিশালী আকর্ষণ বল।

দুর্বল নিউক্লিয় বল :

প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে যে দুর্বল আকর্ষণ বল কাজ করে, যা রেডিওঅ্যাক্টিভ অপর্যপ কেন্দ্রকগুলোকে একসাথে রাখে, তাকেই দুর্বল নিউক্লিয় বল বলা হয়।

এটি সবল নিউক্লিয় বলের চেয়ে অনেক দুর্বল। তবুও রেডিওঅ্যাক্টিভ অপর্যপ কেন্দ্রকগুলো এর মাধ্যমে একসাথে আবদ্ধ থাকে।

দুর্বল নিউক্লিয় বলের কারণেই রেডিওঅ্যাক্টিভ পদার্থ অসংখ্য বছর ধরে অপর্যপ থাকতে পারে।

সুতরাং, দুর্বল নিউক্লিয় বল হচ্ছে রেডিওঅ্যাক্টিভ কেন্দ্রকগুলোকে একসাথে রাখার জন্য কাজ করা দুর্বল আকর্ষণ বল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ