তল কাকে বলে? তল কত প্রকার ও কি কি?

আজকের আমাদের পোস্টে আমরা আলোচনা করব ঘনবস্তুর তল সম্পর্কে। যেকোন জিনিসের যদি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থাকে, কিন্তু উচ্চতা বা বেধ না থাকে, তাকেই তল বলে। ঘনবস্তুর যে অংশটি দিয়ে সে মাটিতে বা অন্য কোন পৃষ্ঠতলে ঝুলে থাকে, সেটিই বলে ঘনবস্তুর তল। তল ছাড়া কোন ঘনবস্তু স্থিতিশীল হতে পারে না।

আমাদের চারপাশে অনেক ঘনবস্তুর সাথে পরিচিত আমরা। যেমন মেঝ, টেবিল, কুর্সি, বাস, গাড়ি ইত্যাদির সবার তল আছে। যদি সব ঘনবস্তুর তল সরিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে কোনটিই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। গোলকের তল একটি বৃত্ত, ক্যাপসুলের তল আংশিক বৃত্তাকার, ত্রিভুজের তল হলো ত্রিভুজ আয়তন।

তলের ধরন অনুযায়ী ঘনবস্তুর স্থিতিশীলতা ভিন্ন হয়। আমরা তা বুঝতে পারি যখন বিভিন্ন আকৃতির তল বিবেচনা করি। আশা করি এই পোস্ট থেকে তল সম্পর্কে আপনার ধারণা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

তো চলুন শুরু করা যাক!

তল কাকে বলে :-

ঘনবস্তুর উপরিভাগকে তল (Surface) বলা হয়। প্রত্যেক ঘনবস্তু এক বা একাধিক তল দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে।

যেকোন ঘনবস্তুর যে অংশটি দিয়ে সে মাটির সপৃষ্টে বা অন্য কোন পৃষ্ঠতলে ঝুলে থাকে, সেটিকেই বলা হয় তল।

অন্যভাবে বললে, যে জিনিসের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে কিন্তু উচ্চতা বা বেধ নেই, সেটিই হলো তল।

আরও পড়ুনঃ বর্গ কাকে বলে?

উদাহরণস্বরূপ:

১) মেঝের তল হলো মেঝের নিচের অংশটি যা দিয়ে মেঝ মাটিতে ঝুলে থাকে।

২) টেবিলের তল হলো টেবিলের নিচের সবচেয়ে নিম্নতম অংশ।

৩) কাঠের তলা হলো কাঠের তলার পৃষ্ঠভাগ।

৪) বাসের তল হলো যে অংশে বাসটি রাস্তায় ঝুলে থাকে।

সংক্ষেপে, যেকোন ঘনবস্তুর সবচেয়ে নিম্নতম পৃষ্ঠভাগকেই বলে তার তল।

যেমন, একটি ইট বা বাক্সের ছয়টি পৃষ্ঠ ছয়টি তলের প্রতিরূপ। আবার, বল বা গোলকের উপরিভাগও একটি তল। তবে বাক্সের পৃষ্ঠতল ও গোলকের উপর তল ভিন্ন প্রকারের। বাক্সের পৃষ্ঠতল হচ্ছে সমতল (Plane Surface) এবং গোলকের উপর তল হচ্ছে বক্রতল (Curved Surface)।

তলের শুধু দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে, কোনো উচ্চতা নাই। কাজেই তল দ্বিমাত্রিক (Two-dimensional)।

তল কত প্রকার ও কি কি :-

তল সাধারণত দুই প্রকার। যথা-
  1. সমতল (Plane Surface) এবং
  2. বক্রতল (Curved Surface)।

আরও পড়ুনঃ রম্বস কাকে বলে?

সমতল কাকে বলে :-

যেখানে তলের সব অংশ একই উচ্চতায় থাকে, সেগুলোকে বলা হয় সমতল তল।

কোনো তলে একটি সরলরেখা আঁকা হলে, যদি সেই সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু ঐ তলের সঙ্গে সংলগ্ন থাকে, অর্থাৎ সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু তলের সঙ্গে স্পর্শ করে, তাহলে সেই তলটিকে বলা হয় সমতল তল।

এর উদাহরণ হলো - চতুর্ভুজ, বৃত্ত, বর্গ ইত্যাদি। সমতল তল সাধারণত স্থিতিশীল হয়।

উদাহরণস্বরূপ, একটি মেঝের উপরের তল যদি সম্পূর্ণ সমতল হয়, তাহলে মেঝের উপর থেকে একটি সরলরেখা আঁকলে সেই সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু মেঝের উপরের তলের সঙ্গে সংলগ্ন থাকবে।

আবার একটি ফুটবলের মতো গোলাকার বস্তুর উপর থেকে যদি একটি সরলরেখা আঁকা হয়, তাহলে সেই সরলরেখার সব বিন্দু বস্তুর তলের সঙ্গে সংলগ্ন হবে না, কারণ বস্তুটির তল গোলাকার এবং আঁকাবাঁকা। সুতরাং এটি একটি অসমতল তল।

এভাবে সমতল ও অসমতল তলের মধ্যে পার্থক্য করা যায়। সমতল তলকে সহজে চিহ্নিত করা যায় এই সরলরেখা পরীক্ষা দিয়ে।

বক্রতল কাকে বলে :-

যেকোন তল যদি সম্পূর্ণরূপে সমতল না হয়, অর্থাৎ যদি তলটিতে কোন উঁচু-নিচু থাকে, তাহলে সেই তলকে বক্রতল বলা হয়।

অন্যভাবে বললে, যেকোন অসমতল তলই বক্রতলের মধ্যে পড়ে।

অর্থাৎ যেখানে তলের সব অংশ একই উচ্চতায় না থেকে উঁচু-নিচু থাকে, সেগুলোকে বলা হয় বক্রতল তল। এর উদাহরণ হলো - ত্রিভুজ, অনিয়মিত আয়তন ইত্যাদি।

উদাহরণস্বরূপ,

১) একটি বলের তল গোলাকার বা বক্রতল।

২) একটি অনিয়মিত আয়তনের তল বক্রতল হিসেবে গণ্য হয়।

৩) একটি পাহাড়ের আকারের তল পূর্ণরূপে সমতল নয়, সুতরাং এটিও বক্রতলের মধ্যে পড়ে।

সুতরাং সমতল তল ব্যতীত অন্য সকল তলই বক্রতলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। বক্রতল সাধারণত অস্থিতিশীল হয়।

আরও পড়ুনঃ আয়ত কাকে বলে?

স্পর্শ তল কাকে বলে :-

কোন ঘনবস্তু যখন কোন পৃষ্ঠতলের সঙ্গে স্পর্শ করে তখন যে অংশটি দিয়ে সে স্পর্শ করে সেটিকে বলা হয় স্পর্শ তল।

উদাহরণস্বরূপ:

১. মেঝ যখন মাটির সঙ্গে স্পর্শ করে তখন মেঝের নিচের অংশটিকে বলা হয় মেঝের স্পর্শ তল।

২. গাড়ি যখন রাস্তার সঙ্গে স্পর্শ করে তখন গাড়ির চাকাগুলো স্পর্শ তলের কাজ করে।

৩. বাস যখন রাস্তায় চলে তখন বাসের টায়ারগুলো রাস্তার সঙ্গে স্পর্শ তল হিসেবে কাজ করে।

সুতরাং, স্পর্শ তল হলো যে অংশ দিয়ে কোন বস্তু অন্য কোন পৃষ্ঠতলের সঙ্গে সংলগ্ন হয়।

নততল কাকে বলে :-

কোন মসৃণ পাটার সমতলকে যদি অনুভূমিক না রেখে ভূমির সঙ্গে সূক্ষ্মকোণ করে রাখা হয়, তাহলে সেই তলটিকে নততল বলা হয়।

এখানে মসৃণ পাটার তলটি যদিও সমতল, কিন্তু ভূমির সঙ্গে একটি কোণ বসিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে তা আংশিকভাবে নত হয়ে গিয়েছে।

তলের মাত্রা :

তলের মাত্রা বলতে তলের আয়তন বা পরিমাপ বুঝায়। তলের মাত্রা নির্ণয় করা যায় তলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মাপার মাধ্যমে।

সমতল তলের ক্ষেত্রে:
  • - বর্গাকার তলের মাত্রা হলো বর্গের প্রতিটি পাশের দৈর্ঘ্যের গুণফল।
  • - বৃত্তাকার তলের মাত্রা হলো পাশাপাশি বৃত্তের ব্যাসের ক্ষেত্রফল।
  • - ত্রিভুজ তলের মাত্রা হলো ত্রিভুজের আয়তন।

বক্রতল তলের ক্ষেত্রে:
  • - মাত্রা নির্ণয় করা কঠিন হয়।
  • - অনুমান করার চেষ্টা করা হয় বিভিন্ন সমতলের মাত্রা গণনা করে যোগ, বিয়োগ, গুণন বিভাজন করে।
  • - ক্ষেত্রফল ব্যবহার করা হয় মাত্রা নির্ণয় করতে।

তলের মাত্রা জানা থাকা প্রয়োজন বস্তুর স্থিতিশীলতা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করতে।

আরও পড়ুনঃ জ্যামিতি কাকে বলে?

তলের বৈশিষ্ট্য :-

তলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

১. আকৃতি:

তলের আকৃতি হতে পারে বর্গাকার, বৃত্তাকার, ত্রিভুজাকার ইত্যাদি। আকৃতি অনুসারে তলের মাত্রা ও স্থিতিশীলতা ভিন্ন হয়।

২. আয়তন:

তলের আয়তন বা মাত্রা তার স্থিতিশীলতা নির্ধারণ করে। বৃহত্তর আয়তনের তল সাধারণত স্থিতিশীল হয়।

৩. উপরের দিক:

তলের উপরের অংশের উপর ঘনবস্তুর ওজনের প্রভাব পড়ে। উপরের ভার অনুযায়ী স্থিতিশীলতা পরিবর্তিত হয়।

৪. তলের উচ্চতা:

তলের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বিন্দুর মধ্যে যত উচ্চতার পার্থক্য থাকবে স্থিতিশীলতা তত কম হবে।

৫. পৃষ্ঠতল:

তল যে পৃষ্ঠতলের সঙ্গে সংলগ্ন রয়েছে তার উপর নির্ভর করে স্থিতিশীলতা ভিন্ন হয়।

৬. সমতা:

সমতল তল অসমতল তলের চেয়ে স্থিতিশীল।

৭. ঘর্ষণ:

উচ্চ ঘর্ষণযুক্ত তল কম ঘর্ষণযুক্ত তলের চেয়ে স্থিতিশীলতা বেশি প্রদান করে।

এসব বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করেই তলের মাত্রা ও স্থিতিশীলতা নির্ধারিত হয়।

তলের ব্যবহার ও গুরুত্ব :-

তল অনেক বিষয়ে ব্যবহৃত হয় এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিছু উদাহরণ নিম্নে তুলে ধরা হল:

১. জ্যামিতি:

জ্যামিতিতে বিভিন্ন আকারের তলের (যেমন: বর্গ, বৃত্ত, ত্রিভুজ ইত্যাদি) ক্ষেত্রফল ও আয়তন নিরূপণ করা হয়।

২. পদার্থ বিজ্ঞান:

পদার্থ বিজ্ঞানে তলের ভিত্তিতে বস্তুর স্থিতিশীলতা বিশ্লেষণ করা হয়।

৩. প্রকৌশল বিজ্ঞান:

নির্মাণ কাজে ভবনের তলদেশ এবং ফাউন্ডেশনের জন্য তলের বিবেচনা করা জরুরি।

৪. চিত্রশিল্প:

চিত্রকলায় বস্তুর তলাংশ এবং পার্স্পেক্টিভ তৈরিতে তলের ভূমিকা অগ্রগণ্য।

এভাবে তল গণিত, বিজ্ঞান ও কলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফুটবলের তল কয়টি?

ফুটবলের একটাই বক্রতল রয়েছে, যা তার বাইরের গোলাকার অংশ।

ফুটবলের উপরিভাগ কোন তল?

ফুটবলের উপরিভাগটি ফুটবলের একটি অংশ, কিন্তু এটি পৃথকভাবে কোনো তল নয়। ফুটবলের শুধুমাত্র একটি বক্রতল রয়েছে যা তার গোলাকার বাহ্যিক অংশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ