রেখা কাকে বলে? রেখা কত প্রকার ও কি? রেখার ব্যবহার কি?

রেখা কাকে বলে :-

রেখা হল এমন একটি জ্যামিতিক ধারা যার কেবল দৈর্ঘ্য রয়েছে কিন্তু প্রস্থ বা উচ্চতা নেই। এটি অসীম এবং সরাসরি। রেখার শুরু বা শেষ নেই, এটি চিরন্তন।

কতকগুলো বিন্দু পাশাপাশি অবস্থান করলে রেখার সৃষ্টি হয়। বিন্দু শুধু দৈর্ঘ্যের দিকেই চলতে পারে। তাই যার কেবলমাত্র দৈর্ঘ্য আছে কিন্তু প্রস্থ ও উচ্চতা নেই তাকে রেখা বলে।

রেখাকে সীমাহীনভাবে উভয় দিকে বাড়িয়ে দেওয়া যায়। দুইটি তল পরস্পরকে ছেদ করলে ছেদস্থলে একটি রেখা (Line) উৎপন্ন হয়।

যেমন, বাক্সের দুইটি পৃষ্ঠতল বাক্সের এক ধারে একটি রেখায় মিলিত হয়। এই রেখা একটি সরলরেখা (Straight Line)। একটি লেবু বা গোলাকার বস্তুকে একটি রেখা ( Line ) পাতলা ছুরি দিয়ে কাটলে, ছুরির সমতল যেখানে লেবুর বক্রতলকে ছেদ করে সেখানে একটি বক্ররেখা (Curved Line ) উৎপন্ন হয়।

রেখার শুধু দৈর্ঘ্য আছে, প্রস্থ ও উচ্চতা নাই। কাজেই রেখা একমাত্রিক (One-dimensional)। বাক্সের একটি পৃষ্ঠতলের প্রস্থ ক্রমশ হ্রাস পেয়ে সম্পূর্ণ শূন্য হলে, ঐ তলের একটি রেখা শুধু অবশিষ্ট থাকে। এভাবে তলের ধারণা থেকে রেখার ধারণায় আসা যায়।

আরও পড়ুনঃ বিন্দু কাকে বলে?

রেখার মাত্রা কয়টি :-

রেখার মাত্রা হল: - দৈর্ঘ্য

রেখার কেবলমাত্র একটি মাত্রা রয়েছে এবং তা হল দৈর্ঘ্য।

রেখার দৈর্ঘ্য থাকে কিন্তু প্রস্থ বা উচ্চতা থাকে না। রেখা একডাইমেনশনাল জ্যামিতিক শব্দ বলে এটির কেবল একটি মাত্রা - দৈর্ঘ্য রয়েছে।

তাই রেখার মাত্রার সংখ্যা হল ১, যা হল দৈর্ঘ্য। অন্য কোন মাত্রা রেখার জন্য প্রযোজ্য নয়।

রেখা কত প্রকার ও কি কি :-

জ্যামিতিতে, আমরা বিভিন্ন ধরনের লাইন ব্যবহার করি। রেখাগুলি জ্যামিতির ভিত্তি। জ্যামিতিক ভিত্তিতে রেখাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, তবে এছাড়াও আরও অনেক ধরনের লেখা আছে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। রেখা দুই প্রকার; যথা :

১. সরলরেখা এবং
২. বক্ররেখা।
রেখা কাকে বলে

সরলরেখা (Straight line) :

যে রেখা এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে যাওয়ার সময় একবারও দিক পরিবর্তন করে না, সর্বদা সোজা পথে চলে তাকে সরলরেখা বলে। সরলরেখা একমাত্রিক। এর কেবল দৈর্ঘ্য আছে অন্য কোন মাত্রা নেই।

বক্ররেখা (Curveline):

যে রেখা এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে যাওয়ার সময় বারবার দিক পরিবর্তন করে অর্থাৎ রেখাটি বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয় তাকে বক্ররেখা বলে ।

এছাড়াও আরও অনেক রেখা আছে। যা নীচে আলোচনা করা হলো -


সমান্তরাল রেখা ( Parallel Line ) :

যখন দুটি সরলরেখা একই সমতলে এমনভাবে অবস্থান করে যে তাদেরকে বর্ধিত করলে কখনও একটি অপরটিকে ছেদ করে না এবং উভয়ের মধ্যে সমান ব্যবধান বজায় রাখে, তখন তাদেরকে সমান্তরাল রেখা বলে ।

যেমন : রেল লাইন, মই ইত্যাদি সমান্তরাল রেখার প্রতিরূপ ।

অনুভূমিক রেখা :

একটি অনুভূমিক রেখা বাম থেকে ডানে যায়। এটি কোনো বিন্দু স্পর্শ না করেই x-অক্ষ বরাবর চলে। অনুভূমিক রেখার উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে মহাসাগর এবং আকাশের মধ্যবর্তী রেখা (দিগন্ত), নোটবুকের কাগজের একটি শীটে রেখা এবং একটি টেবিলের প্রান্ত।

উল্লম্ব রেখা :

উল্লম্ব রেখাগুলি সরল রেখা যা উপরে এবং নীচে যায়। তারা y-অক্ষ বরাবর ছুটে চলে এবং অনুভূমিক রেখার মতো, তারা কখনই অক্ষের একটি বিন্দুকে স্পর্শ করে না। আপনি স্থাপত্য স্তম্ভে উল্লম্ব রেখা, গাছের গুঁড়ি এবং আকাশচুম্বী ভবনের লাইন দেখতে পাবেন। অর্থাৎ বেড়ার মধ্যে বাঁশের লাঠি উল্লম্ব রেখার উদাহরণ। হাইওয়েতে লম্বা গাছের সারি, বৈদ্যুতিক খুঁটি উল্লম্ব লাইনের কয়েকটি উদাহরণ।

তির্যক রেখা :

যে সরল রেখাগুলি অনুভূমিক বা উল্লম্ব নয় তাদেরকে তির্যক রেখা বলে । এই রেখাগুলো x এবং y-অক্ষ অতিক্রম করে। যখন একটি তির্যক রেখা একটি বহুভুজের দুটি শীর্ষে মিলিত হয় , তখন তাকে একটি তির্যক রেখা বলে।

ছেদক রেখা:

দুটি অ-সমান্তরাল রেখা একই বিন্দুতে মিলিত হতে পারে এবং সেই রেখাগুলিকে ছেদকারী রেখা বলা হয়। ছেদকারী লাইনগুলি হল দুটি লাইন যা ঠিক একটি বিন্দু ভাগ করে। এই ভাগ করা বিন্দুটিকে ছেদ বিন্দু বলা হয়।

বাস্তব-জীবন ছেদকারী লাইনগুলির একটি উদাহরণ নীচে দেখানো হয়েছে:

কাঁচি, কাঁচির দুটি ব্লেড একে অপরকে ছেদ করে যাতে এটি কার্যকরভাবে কাজ করে। রাস্তার সাইনবোর্ডগুলি লাইনের ছেদ দেখানোর অন্যতম সেরা উদাহরণ।

আরও পড়ুনঃ সামান্তরিক কাকে বলে?

লম্ব রেখা :

লম্ব রেখাগুলি ঘটে যখন একটি উল্লম্ব রেখা এবং একটি অনুভূমিক রেখা একে অপরকে অতিক্রম করে এবং একটি 90° কোণ তৈরি করে (একটি সমকোণ হিসাবেও পরিচিত)। লম্ব রেখাগুলির প্রতীক হল ⊥, এবং আপনি সম্ভবত সেগুলিকে একটি গ্রিডে বা যেখানে লাইনগুলি একত্রিত হয়ে একটি T আকৃতি তৈরি করতে দেখতে পাবেন৷

ট্রান্সভার্সাল লাইন বা রেখা :

একটি রেখা যা একটি সমতলে দুটি বা ততোধিক প্রদত্ত রেখাকে বিভিন্ন বিন্দুতে ছেদ করছে তাকে প্রদত্ত রেখার ট্রান্সভার্সাল বলে

বাস্তব জীবনের ট্রান্সভার্সাল লাইনের একটি উদাহরণ নীচে দেখানো হয়েছে:

এগুলি হল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ট্রান্সভার্সাল লাইনের কিছু উদাহরণ, যেমন অ্যান্টেনা, সিঁড়ির রেলিং ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও আরও কয়েক ধরনের লাইন আছে, যেমন স্কু লাইন, কপ্ল্যানার লাইন, কনকারেন্ট লাইন ইত্যাদি।

রেখার বৈশিষ্ট্য:-

রেখার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
  • - একডাইমেনশনাল: রেখার কেবল দৈর্ঘ্য আছে। এর প্রস্থ বা উচ্চতা নেই।
  • - অসীম: রেখার কোন নির্দিষ্ট শুরু বা শেষ নেই। এটি চিরন্তন।
  • - সরাসরি: রেখা সরাসরি হয়ে থাকে, এর কোন বেগ বা কম্পাস থাকে না।
  • - অবিচ্ছিন্ন: রেখার কোন ভাগ খালি বা বিচ্ছিন্ন থাকে না।
  • - অতি সংক্ষিপ্ত পথ: রেখা হল দুই বিন্দুর মধ্যে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথ।
  • - অনন্ত বিন্দু: রেখার উপর অসংখ্য বিন্দু অবস্থিত।
  • - বৃত্তাকার নয়: রেখার কোন অংশই বৃত্তাকার নয়।

এসব বৈশিষ্ট্য রেখাকে একটি একক জ্যামিতিক শব্দ হিসেবে বিবেচনা করতে সাহায্য করে।

রেখার ব্যবহার (Use of Line) :-

রেখার সাহায্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের জ্যামিতিক আকার তৈরি করতে পারি। যেমন: সরলরেখার সাহায্যে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, আয়তক্ষেত্র, রম্বস, সামান্তরিক, পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ ইত্যাদি তৈরি করতে পারি। তেমনি আবার বক্ররেখার সাহায্যে তৈরি করতে পারি বৃত্ত, উপবৃত্ত, অধিবৃত্ত, ইত্যাদি।

রেখাংশ (The part of a line) :

রেখা হল সীমাহীন। আর রেখাংশ হল রেখার অংশ বিশেষ। অতএব, কোন রেখার সীমাবদ্ধ অংশকে রেখাংশ বলে।

বিন্দু (Point):

দুইটি রেখা পরস্পর ছেদ করলে বিন্দুর সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, দুইটি রেখার ছেদস্থান বিন্দু (Point) দ্বারা নির্দিষ্ট হয়। যেমন, বাক্সের দুইটি ধার বাক্সের এক কোনায় একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। বিন্দুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা নাই, শুধু অবস্থান আছে। একটি রেখার দৈর্ঘ্য ক্রমশ হ্রাস পেয়ে অবশেষে শূন্য হলে, একটি বিন্দু শুধু অবশিষ্ট থাকে। বিন্দুকে শূন্য মাত্রার সত্ত্বা (Entity) বলে গণ্য করা হয়।

রশ্মি (Ray) :

কোন রেখার এক প্রান্ত স্থির রেখে অন্য প্রান্ত সীমাহীনভাবে বিস্তৃত হলে তাকে রশ্মি বলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ