অপারেশন সার্চলাইট কি:-
পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে গণহত্যার অভিযান চালিয়েছিল তার নাম দিয়েছিল "অপারেশন সার্চলাইট'।
২৫শে মার্চ মধ্যরাতে এ অপারেশন সংঘটিত হলেও মূলত এর প্রস্তুতি চলতে থাকে মার্চের প্রথম থেকে। ৩রা মার্চ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত অস্ত্র ও রসদ বোঝাই এম. ভি. সোয়াত জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৫ই মার্চ থেকে ২৪শে মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার ভান করে আসলে অভিযানের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন ও অপারেশন সার্চলাইট চূড়ান্ত করেন।
অপারেশন সার্চলাইট অনুযায়ী ঢাকা শহরে গণহত্যার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমেই ঢাকা শহরের পিলখানার ইপিআর হেডকোয়ার্টার এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনের নিয়ন্ত্রণভার পাকিস্তানি সেনাদের গ্রহণ করার কথা ছিল।
২৫শে মার্চ মধ্যরাতে এ অপারেশন সংঘটিত হলেও মূলত এর প্রস্তুতি চলতে থাকে মার্চের প্রথম থেকে। ৩রা মার্চ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত অস্ত্র ও রসদ বোঝাই এম. ভি. সোয়াত জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৫ই মার্চ থেকে ২৪শে মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার ভান করে আসলে অভিযানের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন ও অপারেশন সার্চলাইট চূড়ান্ত করেন।
অপারেশন সার্চলাইট অনুযায়ী ঢাকা শহরে গণহত্যার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমেই ঢাকা শহরের পিলখানার ইপিআর হেডকোয়ার্টার এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনের নিয়ন্ত্রণভার পাকিস্তানি সেনাদের গ্রহণ করার কথা ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আক্রমণ, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, রেডিও- টেলিভিশন নিয়ন্ত্রণ, স্টেট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ, আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেফতার, ঢাকা শহরের যাতায়াত ব্যবস্থাসহ শহর নিয়ন্ত্রণ ছিল হানাদার সৈন্যদের প্রাথমিক দায়িত্ব।
অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় রাজশাহী, যশোর, খুলনা, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লায় সেনাবাহিনী, ইপিআর, আনসার, পুলিশের বাঙালি সদস্যদের নিরত্র করার কথা উল্লেখ ছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখলে রাখাও তাদের লক্ষ্য ছিল। ঢাকার বাইরে এ অপারেশনের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা। সার্বিকভাবে এ পরিকল্পনার তত্ত্বাবধান করেন গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান ।
অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় গণহত্যা :-
পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৫শে মার্চ রাত ১১.৩০ টায় ঢাকা সেনানিবাস থেকে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। এ সময় তাদের প্রথম আক্রমণের শিকার হয় ঢাকার ফার্মগেইট এলাকায় রাস্তায় মিছিলরত মুক্তিকামী বাঙালিরা।একই সাথে আক্রমণ চালানো হয় পিলখানা ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। বাঙালি সৈন্যরা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
কিন্তু মারাত্মক অস্ত্রশসে সজ্জিত সৈন্যদের পরিকল্পিত আক্রমণ ঠেকানোর মতো অসূত্র ও প্রস্তুতি ছিল না তাদের। ফলে পাকিস্তানি সেনারা সে রাতে তাদের অনেককেই নির্মমভাবে হত্যা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আক্রমণ পরিচালিত হয় গভীর রাতে। ইকবাল হল (জহুরুল হক হল) ও জগন্নাথ হলেও ঢুকে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে অনেক ঘুমন্ত ছাত্রকে হত্যা করে।
ঢাকা হলসহ (শহীদুল্লাহ হল) বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকা এবং রোকেয়া হলেও তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়।
মার্চের এই গণহত্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষকসহ ৩০০ ছাত্র ও কর্মচারী নিহত হন। জহুরুল হক হল সংলগ্ন রেলওয়ে বস্তিতে সেনাবাহিনী আগুন দিলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়। শুধু ২৫শে মার্চ রাতেই ঢাকায় ৭ থেকে ৮ হাজার লোক নিহত হয়।
ঢাকার বাইরে সারা দেশে সেনানিবাস, ইপিলার ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বেশ কিছু বাঙালি সেনাকে হত্যা করে। এভাবে আক্রমণের শুরুতেই পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের পুলিশ ও ইপিআর ঘাঁটিগুলোর উপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এসব এলাকায় বহু নিরীহ লোক নিহত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট অনুযায়ী, ২৫শে মার্চ রাত দেড়টায় (২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) বঙ্গবন্দুকে তাঁর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী গ্রেফতার করে। তবে গ্রেফতারের আগেই তিনি স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে দেশবাসীকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
অপারেশন সার্চলাইটের উদ্দেশ্য :-
- - পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করা এবং জনগণকে ভয়ে ফেলে তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করা।
- - বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা ধ্বংস করা এবং তাদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা।
- - পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নির্মমভাবে দমন করা এবং বাঙালিদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করা ছিল প্রধান লক্ষ্য।
- - পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশকে অস্ত্রহীন করা এবং তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করা।
- - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়ন্ত্রণ লাভ করা।
- - রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দকে ধরপাকড় করা এবং শাস্তি দেয়া।
- - সাধারণ মানুষ এবং বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হত্যা, ধর্ষণ, লুঠপাট করা।
- - শেখ মুজিবকে জীবিত অবস্থায় ধরপাকড় করা এবং শাস্তি দেয়া।
- - মোটকথা, পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানের অংশ রেখে দিয়ে বাঙালিদের স্বাধীনতা চাওয়ার মনোভাব ধ্বংস করা।
অপারেশন সার্চলাইট এর ফলাফল :-
অপারেশন সার্চলাইট-এর ভয়াবহ ফলাফল নিম্নরূপ:- - কয়েক লাখ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। আহত ও ধর্ষিতার সংখ্যা অজ্ঞাত।
- - লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ত্যাগ করে ভারতে অভিবাসন করে।
- - লাখের বেশি মহিলারা ধর্ষিত হয়। অনেকের গর্ভপাত করানো হয়।
- - অসংখ্য বাড়িঘর, দোকানপাট, মন্দির ও গুরুদ্বার পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
- - অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 23 বিলিয়ন ডলার।
- - শিক্ষানবিশ ধ্বংস হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে।
- - দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংস হয়।
- - মুক্তিযুদ্ধের জ্বালা আরও শক্তিশালী হয় এবং স্বাধীনতার দাবি শক্তিশালী হয়।
- - মোটকথা, এটি ছিল একটি মানবতাবিরোধী ঘটনা যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়েছে।
অপারেশন সার্চলাইট-এর ক্ষতিকর দিক :-
অপারেশন সার্চলাইট-এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিম্নে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হল:মানবিক ক্ষতি:
- - প্রায় কয়েক লাখ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।
- - লাখেরও বেশি মানুষ উচ্ছেদিত হয় এবং দেশত্যাগ করে।
- - লাখেরও বেশি নারীরা ধর্ষিত হন।
- - অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত হারানো হয়।
- - মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষতি:
- - 23 বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
- - অসংখ্য দোকানপাট, বাড়িঘর, কারখানা-কলকারখানা ধ্বংস হয়।
- - শিল্প-বাণিজ্য ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শিক্ষাগত ক্ষতি:
- - বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে, ছাত্র-শিক্ষক হত্যা হয়।
- - অনেক স্কুল-কলেজ ধ্বংস হয়।
- - শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সাংস্কৃতিক ক্ষতি:
- - অসংখ্য মন্দির, গুরুদ্বার, চর্চ ধ্বংস হয়।
- - ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধ্বংসিত হয়।
- - মানবিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.