বিপ্রতীপ কোণ কাকে বলে? বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্য?

বিপ্রতীপ কোণের ধারণা :-

বিপ্রতীপ কোণ একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্যামিতি পরিবেশনা যা খুবই সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। এটি জ্যামিতি প্রশ্নে অসংখ্য বার ব্যবহৃত হয়। বিপ্রতীপ কোণ সম্পর্কে জানতে হলে একটি উদাহরণ দিতে পারেন। যদি দুইটি সরলরেখা পরস্পর ছেদ করে দুইটি সমান কোণ উৎপন্ন করে তবে এদের মধ্যে একটি কোণ বিপ্রতীপ কোণ হবে।

বিপ্রতীপ কোণ একটি মৌলিক জ্যামিতি পরিবেশনা যা কোন পরীক্ষায় অবশ্যই থাকে। এটি সরলরেখার বিপরীত দিকে অবস্থিত দুটি কোণের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে বলা হয়। এটি কোন প্রশ্নে অবশ্যই প্রশ্নকর হিসেবে থাকে এবং সমাধান করার জন্য একটি প্রথম ধাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিপ্রতীপ কোণ হল এক ধরনের কোণ যখন দুটি রেখা ছেদ করে, এবং তারা একটি সাধারণ শীর্ষবিন্দু ভাগ করে কিন্তু একটি সাধারণ দিক নয়। এগুলি গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা এবং প্রকৌশল, পদার্থবিদ্যা এবং স্থাপত্যের মতো ক্ষেত্রগুলিতে অসংখ্য ভূমিকা রয়েছে। এই নিবন্ধে, আমরা বিপ্রতীপ কোণগুলির বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারগুলি সম্পর্কে আলোচনা করব।

বিপ্রতীপ কোণ কাকে বলে :-

কোনো কোণের বাহুদ্বয়ের বিপরীত রশ্মিদ্বয় যে কোণ তৈরি করে তা ঐ কোণের বিপ্রতীপ কোণ (Vertical angle ) বলে।

দুটি রেখা একটি শীর্ষবিন্দুতে পরস্পরকে ছেদ করলে একটি কোণ তৈরি হয়। সাধারণ শীর্ষবিন্দুর উভয় পাশে গঠিত এই কোণটিকে বিপ্রতীপ কোণ বা উল্লম্বভাবে বিপরীত কোণ বলা হয়।

আরও পড়ুনঃ একান্তর কোণ কাকে বলে?

চিত্রে OA ও OB পরস্পর বিপরীত রশ্মি। আবার OC ও OD পরস্পর বিপরীত রশ্মি। <BOD ও <AOC পরস্পর বিপ্রতীপ কোণ।
বিপ্রতীপ কোণ
আবার <BOC ও <DOA একটি অপরটির বিপ্রতীপ কোণ। দুইটি সরলরেখা কোনো বিন্দুতে পরস্পরকে ছেদ করলে, ছেদ বিন্দুতে দুই জোড়া বিপ্রতীপ কোণ উৎপন্ন হয়।

বিপ্রতীপ কোণ কত ডিগ্রি :-

বিপ্রতীপ কোণের মাত্রা হিসেবে ডিগ্রি ব্যবহৃত হয়।

বিপ্রতীপ কোণের মাত্রা হিসাবে নিম্নের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
  • - বিপ্রতীপ কোণের মাত্রা 0 ডিগ্রি থেকে 90 ডিগ্রির মধ্যে থাকে।
  • - 0 ডিগ্রি বিপ্রতীপ কোণকে শূন্য কোণ বলে।
  • - 90 ডিগ্রি বিপ্রতীপ কোণকে সমকোণ বলে।
  • - 45 ডিগ্রি বিপ্রতীপ কোণকে অর্ধসমকোণ বলে।
  • - 60 ডিগ্রি, 30 ডিগ্রি, 70 ডিগ্রি ইত্যাদি এভাবে বিপ্রতীপ কোণের মাত্রা ডিগ্রিতে প্রকাশ করা হয়।
  • - কোন কোণের মাপ যদি 90 ডিগ্রি'র বেশি হয় তাহলে সেটি বিপ্রতীপ কোণ হিসেবে গণ্য হয় না।

সুতরাং, বিপ্রতীপ কোণের মাপ সবসময় 0 থেকে 90 ডিগ্রির মধ্যে থাকে এবং ডিগ্রিতে প্রকাশ করা হয়।

বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্য :-

1. বিপ্রতীপ কোণ দুটির শীর্ষবিন্দু সাধারণ হয়:

বিপ্রতীপ কোণ দুটি একই শীর্ষবিন্দু থেকে উৎপন্ন হয়। একই বিন্দুতে দুটি রেখা মিললে সেখানে দুটি কোণ তৈরি হয় যার শীর্ষবিন্দু একই। সুতরাং বিপ্রতীপ কোণ দুটির শীর্ষবিন্দু একই থাকে।

2. বিপ্রতীপ কোণদ্বয় পরস্পর সমান:

একই শীর্ষবিন্দু থেকে উৎপন্ন হওয়ায় বিপ্রতীপ কোণ দুটির মাপ সমান থাকে। এক্ষেত্রে উভয় কোণের মাপ একই পরিমাণের হয়।

আরও পড়ুনঃ সমকোণ কাকে বলে? 

3. বিপরীত দিকে অবস্থান:

বিপ্রতীপ কোণ দুটি পরস্পর বিপরীত দিকে থাকে। একটি ডান দিকে থাকলে অপরটি বাম দিকে থাকে। কোণ দুটির মধ্যে 180 ডিগ্রি পার্থক্য থাকে।

4. মিলিত বিন্দুতে ৪টি বিপ্রতীপ কোণ:

দুটি সরলরেখার মিলনবিন্দুতে মোট ৪টি বিপ্রতীপ কোণ উৎপন্ন হয়। প্রতিটি রেখার উভয় পাশে দুটি করে মোট ৪টি কোণ বন্ধ হয়।

5. বিপরীত কোণদ্বয়ের সম্পর্ক:

বিপরীত দিকে অবস্থিত কোণ দুটিকে বিপ্রতীপ কোণ বলে। একটি সূক্ষ্মকোণ হলে অপরটি স্থূলকোণ হয়।

6. চ্ছেদন বিন্দুতে কোণ সম্পূরক:

দুটি রেখার চ্ছেদন বিন্দুতে যে বিপ্রতীপ কোণদ্বয় উৎপন্ন হয়, সেগুলো পরস্পর সম্পূরক।

7. মিলনবিন্দুতে কোণদ্বয় সমকোণ/স্থূলকোণ:

মিলনবিন্দুতে উৎপন্ন এক জোড়া সূক্ষ্মকোণ হলে অপর জোড়া স্থূলকোণ হয়।

8. একাধিক কোণ একসাথে বিপ্রতীপ:

একই সময়ে একাধিক কোণকে পরস্পরের বিপ্রতীপ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

9. মিলনবিন্দুতে কোণদ্বয় সমকোণ:

দুটি রেখার মিলনবিন্দুতে উৎপন্ন বিপ্রতীপ কোণদ্বয় পরস্পর সমকোণ হয়।

এগুলো বিপ্রতীপ কোণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা বোঝা প্রয়োজন।

বিপ্রতীপ কোণের গুরুত্বপূর্ণ দিক :-

বিপ্রতীপ কোণের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল:

1. জ্যামিতিতে গুরুত্বপূর্ণ:

জ্যামিতিতে বিপ্রতীপ কোণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন আকার-আকৃতির কোণ মাপ করতে বিপ্রতীপ কোণের প্রয়োজন হয়। ত্রিভুজ, বহুভুজ ইত্যাদির কোণ মাপ করতে বিপ্রতীপ কোণ ব্যবহার হয়।

2. পদার্থ বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ:

পদার্থ বিজ্ঞানে বিপ্রতীপ কোণ ব্যবহার করে বিভিন্ন পদার্থের স্বভাবগত অবস্থা মাপ করা হয়। যেমন পানির স্বভাবগত অবস্থায় বিপ্রতীপ কোণ 104.5 ডিগ্রি।

3. দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ:

নির্মাণ কাজে বিপ্রতীপ কোণ ব্যবহার করা হয়। যেমন- বাড়ি নির্মাণ, ফার্নিচার তৈরি ইত্যাদি।

বিপ্রতীপ কোণ সঠিক মাপ না করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। সুতরাং দৈনন্দিন জীবনে বিপ্রতীপ কোণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এভাবে বিপ্রতীপ কোণ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ