বিন্দু কাকে বলে? বিন্দু কত প্রকার ও কি কি?

গণিতে বিন্দু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। বিন্দু হল একটি নির্দিষ্ট স্থান বা অবস্থান। বিন্দুর কোন প্রস্থ বা আয়তন থাকে না, শুধুমাত্র একটি স্থান বা অবস্থান থাকে। তবে সাধারণত বিন্দুকে একটি ছোট গোলাকার চিহ্নের মাধ্যমে প্রদর্শিত করা হয়।

বিন্দুর উদাহরণ হিসেবে আমরা একটি ছোট গোলাকার চিহ্নকে ব্যবহার করি। বিন্দুর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি শূন্য আয়তনের একটি জায়গা।

বিন্দুর প্রকারভেদ হিসেবে - উল্লেখযোগ্য বিন্দু, অবস্থান বিন্দু, শূন্যবিন্দু ইত্যাদি।

বিন্দু দিয়ে রেখা, সরলরেখা, বৃত্তাকার রেখা ইত্যাদি গঠিত হয়। বিন্দুর সাহায্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি ও চিত্রায়ন করা যায়। জ্যামিতি, ট্রাইগনমেট্রি, ক্যালকুলাস ইত্যাদি বিষয়ে বিন্দুর ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে।

সারাংশে, গণিতে বিন্দু একটি মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা বিভিন্ন গণিতিক রচনা ও প্রমাণের ভিত্তিহিসাবে কাজ করে। তো চলুন জেনে নিই এই পোস্টে বিন্দু কাকে বলে উদাহরণ দিয়ে, বিন্দু কত প্রকার ও কি কি, এর বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার ও গুরুত্ব সম্পর্কে।

বিন্দু কাকে বলে :-

যার কেবল অবস্থান আছে কিন্তু দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা বলতে কিছুই নেই তাকে বিন্দু বলে।

অর্থাৎ যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা নেই অর্থাৎ কোনো বিস্তার নেই, কেবলমাত্র অবস্থান আছে, তাকে বিন্দু বলে। যেমন: (.) একটি বিন্দু।

আরও পড়ুনঃ রেখা কাকে বলে?

বিন্দু হল এমন একটি জ্যামিতিক বস্তু যার কোন পরিমাপ নেই। বিন্দুর কোন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা বা আয়তন থাকে না, শুধুমাত্র একটি অবস্থান বা স্থান থাকে। বিন্দু হল শূন্য আয়তনের একটি জ্যামিতিক স্থান।

বিন্দুকে আমরা একটি অদৃশ্য জিনিস হিসেবে কল্পনা করতে পারি যার শুধুমাত্র অবস্থান আছে, তবে যার কোন পরিমাপযোগ্য গুণ নেই। একটি বিন্দু হল এমন একটি সামান্য জায়গা যার আকার আমাদের চোখে পড়বে না।

বিন্দু কি :-

যখন একটি রেখার দৈর্ঘ্য ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত শূন্যে নেমে আসে, তখন সেটি একটি বিন্দুতে পরিণত হয়। অর্থাৎ যখন রেখার দৈর্ঘ্য শূন্য হয়, তখন সেটি আর রেখা নয়, বরং একটি বিন্দু হয়ে যায়।

একটি সরল রেখার উপর অসংখ্য সংখ্যক বিন্দু অবস্থিত থাকে। কারণ রেখা হল অসংখ্য সংখ্যক বিন্দুর সমষ্টি।

প্রাথমিক জ্যামিতিতে বিন্দু খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিন্দু ছাড়া রেখা, সরল রেখা, সমতল ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব নয়। সুতরাং জ্যামিতির ভিত্তিই হল বিন্দু।

বিন্দুর উদাহরণ :-

একটি ছোট গোলাকার চিহ্ন (●) বিন্দুর একটি সাধারণ উদাহরণ। যদিও এটি কোন আয়তন বহন করে, তবুও একটি নির্দিষ্ট স্থান বা অবস্থান প্রদর্শন করে।

দুটি সরল রেখা যখন একে অপরের সাথে পার্শ্বস্থিতি বজায় রাখে, তখন সেই পার্শ্বস্থিতির স্থানটিকে বিন্দু বলা হয়। এক্ষেত্রে দুটি রেখার মধ্যবর্তী স্পর্শস্থলটিই হচ্ছে বিন্দু। যেমন কার্টেসিয় কোর্ডিনেট সিস্টেমে x এবং y অক্ষ পরস্পর প্রতিচ্ছেদ করে এবং সেই প্রতিচ্ছেদস্থলটিকে বিন্দু O বলা হয়।

আর তিনটি রেখা বা ধার একত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মিলিত হলে সেই মিলনস্থলটিকেও বিন্দু বলা হয়। কারণ এখানেও তিনটি রেখার মধ্যবর্তী একটি নির্দিষ্ট স্পর্শস্থল বা স্থান তৈরি হচ্ছে। যেমন একটি বইয়ের তিনটি পাশাপাশি ধার যে স্থানে মিলছে সেটিই হলো একটি বিন্দু।

অর্থাৎ যেকোন প্রকার রেখা বা ধারের মধ্যবর্তী স্পর্শস্থল বা পার্শ্বস্থিতির স্থানই হচ্ছে বিন্দু।
 
আরও পড়ুনঃ বৃত্ত কাকে বলে?

বিন্দু কত প্রকার ও কি কি :-

নীচে বিভিন্ন প্রকার বিন্দু কাকে বলে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো -

সমরেখ বিন্দু কাকে বলে:

যখন তিনটি বা ততোধিক বিন্দু একই সরল রেখার উপর অবস্থিত থাকে, অর্থাৎ একই সরল রেখার সাথে সমান্তরাল থাকে, তখন সেই বিন্দুগুলোকে সমরেখ বিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, যদি কোন একটি সরল রেখার সাথে তিনটি বা ততোধিক বিন্দুর সমান্তরালতা থাকে, সেক্ষেত্রে ঐ বিন্দুগুলোকে সমরেখ বিন্দু (collinear points) বলে।
সমরেখ বিন্দু কাকে বলে

PQ সরলরেখার ওপর A, B, C ও D বিন্দু চারটি অবস্থিত, তাই ওই চারটি বিন্দু সমরেখ।

অ-সমরেখ বিন্দু কাকে বলে :-

যে সকল বিন্দু একই রেখায় থাকে না তাকে অ-সমরেখ বিন্দু (No collinear points) বলে। আমরা এই বিন্দুগুলির মাধ্যমে একটি একক সরলরেখা আঁকতে পারি ন
অ-সমরেখ বিন্দু কাকে বলে

সমবিন্দু কাকে বলে:

যখন দুটি বা দুটির বেশি সরল রেখা একই বিন্দুতে সমষ্টি হয় অর্থাৎ প্রতিচ্ছেদ করে, তখন সেই বিন্দুটিকে সমবিন্দু (Concurrent points) বলা হয়।

এবং যে সরলরেখাগুলো এই সমবিন্দুতে মিলছে, সেগুলোকে সমবিন্দু সরলরেখা বলা হয়।
সমবিন্দু কাকে বলে

PQ, RS, MN রেখা তিনটি বিন্দুগামী। O বিন্দু হল সমবিন্দু এবং তিনটি রেখা হল সমবিন্দু সরলরেখা। সমবিন্দুকে সাধারণ বিন্দুও বলা হয়।

আরও পড়ুনঃ কোণ কাকে বলে?

সামতলিক বিন্দু কাকে বলে:-

যখন চারটি বা তার বেশি সংখ্যক বিন্দু একই সমতলের উপর অবস্থিত থাকে, অর্থাৎ একই সমতলের সাথে সমান্তরাল থাকে, তখন সেই সকল বিন্দুকে সামতলিক বিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, যে সকল বিন্দু একই সমতলের উপর অবস্থিত, সেগুলোই হচ্ছে সামতলিক বিন্দু (Coplanar point)।
সামতলিক বিন্দু কাকে বলে

দুটি বা তিনটি বিন্দু সর্বদা সামতলিক থাকে, কারণ দুটি বিন্দু দিয়ে সর্বদা একটি সরলরেখা গড়া যায়। আর একটি সরলরেখা সবসময় একটি সমতলের মধ্যে থাকে।

সুতরাং নির্দিষ্ট দুটি বা তিনটি বিন্দু অসংখ্য সমতলের মধ্যে অবস্থান করতে পারে। তাই দুটি বা তিনটি বিন্দু সবসময় সামতলিক।

অসামতলিক বিন্দু কাকে বলে :-

যখন চারটি বা তার বেশি সংখ্যক বিন্দু একই সমতলে অবস্থিত না হয়, অর্থাৎ একে অপরের সামতলিক না হয়, তখন সেই সকল বিন্দুকে অসামতলিক বিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, যে সকল বিন্দু একই সমতলে অবস্থিত নয়, সেগুলোই হচ্ছে অসামতলিক বিন্দু।
অসামতলিক বিন্দু কাকে বলে

A, B, C, এবং E হল চারটি অসামতলিক বিন্দু।

শীর্ষবিন্দু কাকে বলে:

একই সমতলে দুটি রেখার প্রান্তবিন্দুর মিলনস্থলকে শীর্ষবিন্দু বলা হয়।

যেখানে দুটি রেখা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়, সেই সংযোগস্থলকেই শীর্ষবিন্দু বলা হয়।

অন্যভাবে বলতে গেলে, দুটি রেখার প্রান্তবিন্দু যেখানে মিলিত হয় সেই সাধারণ বিন্দুকেই শীর্ষবিন্দু বলা হয়।

একইভাবে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ বা বহুভুজের ক্ষেত্রে দুটি বাহুর মিলনবিন্দুকে শীর্ষবিন্দু বলা হয়।

ছেদবিন্দু কাকে বলে:

যে বিন্দুতে দুটি রেখা পরস্পরের সাথে ছেদ করে সেই বিন্দুকে ছেদবিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, যদি দুটি রেখা এমনভাবে হয় যে তারা একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পরস্পরের সাথে ছেদ করে তাহলে সেই বিন্দুকে ছেদবিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, দুটি রেখার পার্শ্ববর্তী বিন্দু যেখানে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয় সেই বিন্দুকেই ছেদবিন্দু বলা হয়।

প্রান্তবিন্দু কাকে বলে :

রেখা হলো অসংখ্য সংখ্যক বিন্দুর সমষ্টি। রেখার প্রান্ত বা শেষে যে বিন্দুটি অবস্থিত, সেই বিন্দুকে রেখার প্রান্তবিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, যে বিন্দুতে রেখার অবসান ঘটে, সেই বিন্দুকে সেই রেখার প্রান্তবিন্দু বা শেষ বিন্দু বলা হয়।

অন্তঃস্থ বিন্দু কাকে বলে:

কোনো রেখার প্রান্ত বিন্দু ছাড়া অপর সকল বিন্দুকে সেই রেখার অন্তঃস্থ বিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, যে সকল বিন্দু রেখার মধ্যে অবস্থিত এবং প্রান্তবিন্দু নয়, সেগুলোকে অন্তঃস্থ বিন্দু বলা হয়।

কোনো রেখাংশের প্রান্ত বিন্দু ছাড়া অপর সকল বিন্দুই সেই রেখাংশের অন্তঃস্থ বিন্দু।

বহিঃস্থ বিন্দু কাকে বলে:

যে বিন্দুর অবস্থান কোনো রেখা, রেখাংশ, ক্ষেত্র বা আকারের মধ্যে না হয়ে বাইরে থাকে, সেই বিন্দুকে বহিঃস্থ বিন্দু বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো বৃত্তের বাইরে অবস্থিত বিন্দুকে সেই বৃত্তের বহিঃস্থ বিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ যে বিন্দু কোনো নির্দিষ্ট রেখা, আকার বা ক্ষেত্রের বাইরে অবস্থিত সেটিকে বহিঃস্থ বিন্দু বলা হয়।

মধ্যবিন্দু কাকে বলে:

যে বিন্দু কোনো সরলরেখাকে দুটি সমান অংশে ভাগ করে সেটিকে সেই সরলরেখার মধ্যবিন্দু বলা হয়।

লম্ববিন্দু কাকে বলে:

ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষ থেকে বিপরীত দিকে অঙ্কিত লম্বসমূহের সংক্রেষ্টবিন্দুকে লম্ববিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, ত্রিভুজের উচ্চতারেখা যেখানে পরস্পর ছেদ করে সেই বিন্দুকে লম্ববিন্দু বলা হয়।

সুতরাং, ত্রিভুজের উচ্চতারেখার ছেদবিন্দুই হচ্ছে লম্ববিন্দু।

কৌণিক বিন্দু কাকে বলে:

কোনো কোণে যে বিন্দু উপস্থিত থাকে, সেই বিন্দুকে কৌণিক বিন্দু বলা হয়।

অর্থাৎ, দুটি রেখার মিলনবিন্দুকে কৌণিক বিন্দু বলা হয়, যেখানে কোণ উপস্থিত থাকে।

বিন্দুর মাত্রা :-

জ্যামিতিতে বিন্দু হলো মৌলিক উপাদান যার শুধুমাত্র অবস্থান রয়েছে। বিন্দুর কোনো দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা বা অন্য কোনো ধরনের পরিমাপ বা মাত্রা থাকে না। বিন্দুর কোনো আয়তন বা পরিসীমা থাকে না, এর কোনো পরিধি বা ক্ষেত্রফল থাকে না।

সুতরাং, বিন্দুর মাত্রা হলো শূন্য। বিন্দু হলো একটি অ-মাত্রিক জিনিস যার মাত্রা শূন্য। শুধুমাত্র অবস্থান ব্যতীত বিন্দুর আর কিছুই নেই। সুতরাং, বিন্দুকে শূন্য-মাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্ভুক্ত বলা হয়।

বিন্দুর বৈশিষ্ট্য :-

  • বিন্দুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা বলতে কিছুই নেই।
  • বিন্দুর একটি বৈশিষ্ট্য হলো বিন্দুর কোনো মাত্রা নেই অর্থাৎ, বিন্দুর মাত্রা শুণ্য।
  • বিন্দু হলো জ্যামিতির মৌলিক উপাদান যার কোন পরিমাপ নেই। এর কেবল অবস্থান আছে।
  • দ্বিমাত্রিক জ্যামিতিতে বিন্দুর অবস্থানকে (x, y) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  • ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে বিন্দুর অবস্থানকে (x, y, z) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
  • বিন্দুর চলার পথ হলো রেখা। সোজা পথ হলে সরলরেখা এবং বাঁকা পথ হলে বক্ররেখা হয়।
  • দুইটি বিন্দুর মাঝে সর্বনিম্ন দূরত্বকে সংযোগরেখা বলে। এটিই হলো দুই বিন্দুর মধ্যে সর্বনিম্ন দূরত্ব।
  • তিনটি বা ততোধিক সমান্তরাল সরলরেখার সমষ্টিকে সমান্তরাল বলা হয়।
  • একই সরলরেখায় অবস্থিত সকল বিন্দু সমভিন্ন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ