পরস্পর সমান্তরাল দুটি রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করলে সেই ছেদক রেখার বিপরীত দিকে সমান্তরাল দুটি রেখার মাঝে যে কোণটি তৈরি হয়, সেটিকেই একান্তর কোণ বলা হয়।
জ্যামিতিতে একান্তর কোণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একান্তর কোণের ধারণা সম্পর্কে স্পষ্টতা আসা জ্যামিতির বিভিন্ন প্রমেয়, নিয়ম ও প্রতিপাদ্য প্রমাণ করতে সাহায্য করে।
আজকে আমরা একান্তর কোণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। একান্তর কোণের সংজ্ঞা ও ধারণা সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি এর বৈশিষ্ট্য, গুণ ও বিভিন্ন ধরন সম্পর্কেও আলোচনা করব। একান্তর কোণ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমেয় ও প্রতিপাদ্যও দেখা হবে। শেষে একান্তর কোণের প্রয়োগ নিয়েও আলোচনা করা হবে। তবে তার আগে একান্তর কোণ কাকে বলে উদাহরণ সহ তা আলোচনা করা।
অর্থাৎ, যদি রেখা P এবং Q সমান্তরাল হয় এবং রেখা R এগুলিকে ছেদ করে, তাহলে P এবং Q এর মাঝে যে কোণ তৈরি হয়, সেটিকেই একান্তর কোণ বলা হয়।
উপরের ছবিতে সরলরেখা AB এবং CD দুটিকে সরলরেখা PQ যথাক্রমে R এবং S বিন্দুতে ছেদ করেছে।
ফলে, R ও S হলো PQ সরলরেখার সাথে অন্য দুটি সরলরেখার ছেদবিন্দু।
এখানে, PQ হলো উভয় AB ও CD সরলরেখাকে ছেদ করা ছেদক রেখা।
আরও পড়ুনঃ বহিঃস্থ কোণ কাকে বলে?
∠BRQ এবং ∠CSP পরস্পর একান্তর কোণ হওয়ার কারণে তারা পরস্পর সমান।
∴ ∠BRQ = ∠CSP.
অর্থাৎ, একান্তর কোণ হওয়ার কারণেই ∠BRQ এবং ∠CSP পরস্পর সমান।
আবার, ∠ARQ এবং ∠DSP পরস্পর একান্তর কোণ বলে কোণ দুইটি পরস্পর সমান।
∴ ∠ARQ = ∠DSP.
অর্থাৎ, একান্তর কোণ হওয়ার কারণেই ∠ARQ এবং ∠DSP পরস্পর সমান।
অন্তঃস্থ ও বহিঃস্থ একান্তর কোণের উদাহরণ :-
উপরের ছবিতে, ∠ARQ এবং DSP কোণ দুইটি পরস্পর অন্তঃস্থ একান্তর কোণ। তেমনিভাবে, ∠BRQ এবং ∠CSP কোণদ্বয় পরস্পর অন্তঃস্থ একান্তর কোণ।
উপরের ছবিতে, ∠BRP এবং ∠CSQ কোণ দুইটি পরস্পর বহিঃস্থ একান্তর কোণ। তেমনিভাবে, ∠ARP এবং ∠DSQ কোণদ্বয় পরস্পর বহিঃস্থ একান্তর কোণ বলে।
1. শীর্ষবিন্দু ভিন্ন থাকা:
একান্তর কোণ বলতে দুটি কোণকে বোঝায় যাদের শীর্ষবিন্দু আলাদা আলাদা। একই শীর্ষবিন্দু থাকলে সেগুলি একান্তর কোণ হিসেবে গণ্য হবে না।
আরও পড়ুনঃ সন্নিহিত কোণ কাকে বলে?
2. সমতার ক্ষেত্রে অন্য রেখাগুলির সমান্তরালতা:
যদি একান্তর দুটি কোণ পরস্পর সমান হয়, তাহলে ছেদক রেখা ব্যতীত অন্যান্য রেখাগুলি অবশ্যই পরস্পর সমান্তরাল হবে।
3. বিপরীত দিকে অবস্থিত থাকা:
একান্তর কোণগুলি ছেদক রেখার বিপরীত দিকে থাকবে, এক দিকে নয়। এটি একান্তর কোণের একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য।
4. কোন সাধারণ বিন্দু থাকতে পারে না:
একান্তর কোণগুলির মধ্যে কোন সাধারণ বিন্দু থাকতে পারে না, ছেদক বিন্দুর ছাড়া।
5. অন্তর্ভুক্ত/বহির্ভুক্ত হওয়া:
একটি কোণ যদি অন্তর্ভুক্ত/বহির্ভুক্ত হয়, তাহলে অপরটিও সেভাবেই হবে।
6. লম্বস্থ ছেদকরেখায় 90 ডিগ্রি কোণ:
যদি ছেদকরেখা অন্য রেখার উপর লম্বস্থ হয়, তাহলে একান্তর কোণগুলি 90 ডিগ্রি হবে।
7. একই সমতলে অবস্থিত:
একান্তর কোণগুলি একই সমতলের মধ্যে থাকবে, আলাদা সমতলে নয়।
8. সমতার ক্ষেত্রে সমান্তরালতা:
যদি একান্তর কোণ দুটি সমান হয়, তাহলে অন্য রেখাগুলি সমান্তরাল হবে।
9. বহির্ভুক্ত/অন্তর্ভুক্ত হওয়া:
একটি যদি বহির্ভুক্ত/অন্তর্ভুক্ত হয়, অপরটিও সেরকমই হবে।
10. সমতার ক্ষেত্রে অন্য জোড়ার সমতা:
যদি এক জোড়ার একটি কোণ অপরের সমান হয়, তাহলে অন্য জোড়ার ও সেরকম হবে।
১. পরিমাপের দিক থেকে:
অনুরূপ কোণের ক্ষেত্রে কোণ দুটির পরিমাপ একই হতে হবে। কিন্তু একান্তর কোণের ক্ষেত্রে কোণগুলোর পরিমাপ একই হতে হবে না, পার্থক্য থাকতে পারে।
২. অবস্থানের দিক থেকে:
অনুরূপ কোণ একই সমতলে অবস্থান করতে পারে অথবা আলাদা সমতলেও থাকতে পারে। কিন্তু একান্তর কোণ একই সমতলে অবস্থান করে।
৩. কোণের ধরন অনুসারে:
অনুরূপ কোণ হতে পারে - সূক্ষ্মকোণ, স্থুলকোণ, সমকোণ ইত্যাদি। কিন্তু একান্তর কোণ সবসময়ই সমকোণ হয়।
৪. সমপার্শ্বতার দিক থেকে:
অনুরূপ কোণ সমপার্শ্বিক হতে হবে না। কিন্তু একান্তর কোণ সর্বদা সমপার্শ্বিক হয়।
এগুলো হলো অনুরূপ কোণ ও একান্তর কোণের মূল পার্থক্যগুলো।
জ্যামিতিতে একান্তর কোণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একান্তর কোণের ধারণা সম্পর্কে স্পষ্টতা আসা জ্যামিতির বিভিন্ন প্রমেয়, নিয়ম ও প্রতিপাদ্য প্রমাণ করতে সাহায্য করে।
আজকে আমরা একান্তর কোণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। একান্তর কোণের সংজ্ঞা ও ধারণা সম্পর্কে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি এর বৈশিষ্ট্য, গুণ ও বিভিন্ন ধরন সম্পর্কেও আলোচনা করব। একান্তর কোণ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমেয় ও প্রতিপাদ্যও দেখা হবে। শেষে একান্তর কোণের প্রয়োগ নিয়েও আলোচনা করা হবে। তবে তার আগে একান্তর কোণ কাকে বলে উদাহরণ সহ তা আলোচনা করা।
একান্তর কোণ কাকে বলে :-
যদি দুটি সমান্তরাল রেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করে, তাহলে ছেদক রেখার বিপরীত দিকে সমান্তরাল দুটি রেখার মধ্যে যে কোণ তৈরি হয়, সেটিকে একান্তর কোণ বলে।অর্থাৎ, যদি রেখা P এবং Q সমান্তরাল হয় এবং রেখা R এগুলিকে ছেদ করে, তাহলে P এবং Q এর মাঝে যে কোণ তৈরি হয়, সেটিকেই একান্তর কোণ বলা হয়।
উপরের ছবিতে সরলরেখা AB এবং CD দুটিকে সরলরেখা PQ যথাক্রমে R এবং S বিন্দুতে ছেদ করেছে।
ফলে, R ও S হলো PQ সরলরেখার সাথে অন্য দুটি সরলরেখার ছেদবিন্দু।
এখানে, PQ হলো উভয় AB ও CD সরলরেখাকে ছেদ করা ছেদক রেখা।
আরও পড়ুনঃ বহিঃস্থ কোণ কাকে বলে?
∠BRQ এবং ∠CSP পরস্পর একান্তর কোণ হওয়ার কারণে তারা পরস্পর সমান।
∴ ∠BRQ = ∠CSP.
অর্থাৎ, একান্তর কোণ হওয়ার কারণেই ∠BRQ এবং ∠CSP পরস্পর সমান।
আবার, ∠ARQ এবং ∠DSP পরস্পর একান্তর কোণ বলে কোণ দুইটি পরস্পর সমান।
∴ ∠ARQ = ∠DSP.
অর্থাৎ, একান্তর কোণ হওয়ার কারণেই ∠ARQ এবং ∠DSP পরস্পর সমান।
অন্তঃস্থ একান্তর কোণ কাকে বলে :-
যদি দুইটি সরলরেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করে এবং ছেদবিন্দুতে যে দুই জোড়া অন্তঃস্থ কোণ তৈরি হয়, সেগুলির শীর্ষবিন্দু ভিন্ন এবং ছেদক রেখার বিপরীত দিকে অবস্থিত হলে সেই দুই কোণকে পরস্পর অন্তঃস্থ একান্তর কোণ বলে।বহিঃস্থ একান্তর কোণ কাকে বলে :-
যদি দুইটি সরলরেখাকে আরেকটি রেখা ছেদ করে এবং ছেদবিন্দুতে যে দুই জোড়া বহিঃস্থ কোণ তৈরি হয়, সেগুলির শীর্ষবিন্দু ভিন্ন এবং ছেদক রেখার বিপরীত দিকে থাকলে সেই দুই কোণকে পরস্পর বহিঃস্থ একান্তর কোণ বলে।অন্তঃস্থ ও বহিঃস্থ একান্তর কোণের উদাহরণ :-
উপরের ছবিতে, ∠ARQ এবং DSP কোণ দুইটি পরস্পর অন্তঃস্থ একান্তর কোণ। তেমনিভাবে, ∠BRQ এবং ∠CSP কোণদ্বয় পরস্পর অন্তঃস্থ একান্তর কোণ।
উপরের ছবিতে, ∠BRP এবং ∠CSQ কোণ দুইটি পরস্পর বহিঃস্থ একান্তর কোণ। তেমনিভাবে, ∠ARP এবং ∠DSQ কোণদ্বয় পরস্পর বহিঃস্থ একান্তর কোণ বলে।
একান্তর কোণের বৈশিষ্ট্য :-
গণিতের একান্তর কোণগুলির কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখন আমরা একান্তর কোণের সেই প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করব। একান্তর কোণের এই বৈশিষ্ট্যগুলি সঠিকভাবে বোঝা গণিতে কোণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। নীচে একান্তর কোণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো।1. শীর্ষবিন্দু ভিন্ন থাকা:
একান্তর কোণ বলতে দুটি কোণকে বোঝায় যাদের শীর্ষবিন্দু আলাদা আলাদা। একই শীর্ষবিন্দু থাকলে সেগুলি একান্তর কোণ হিসেবে গণ্য হবে না।
আরও পড়ুনঃ সন্নিহিত কোণ কাকে বলে?
2. সমতার ক্ষেত্রে অন্য রেখাগুলির সমান্তরালতা:
যদি একান্তর দুটি কোণ পরস্পর সমান হয়, তাহলে ছেদক রেখা ব্যতীত অন্যান্য রেখাগুলি অবশ্যই পরস্পর সমান্তরাল হবে।
3. বিপরীত দিকে অবস্থিত থাকা:
একান্তর কোণগুলি ছেদক রেখার বিপরীত দিকে থাকবে, এক দিকে নয়। এটি একান্তর কোণের একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য।
4. কোন সাধারণ বিন্দু থাকতে পারে না:
একান্তর কোণগুলির মধ্যে কোন সাধারণ বিন্দু থাকতে পারে না, ছেদক বিন্দুর ছাড়া।
5. অন্তর্ভুক্ত/বহির্ভুক্ত হওয়া:
একটি কোণ যদি অন্তর্ভুক্ত/বহির্ভুক্ত হয়, তাহলে অপরটিও সেভাবেই হবে।
6. লম্বস্থ ছেদকরেখায় 90 ডিগ্রি কোণ:
যদি ছেদকরেখা অন্য রেখার উপর লম্বস্থ হয়, তাহলে একান্তর কোণগুলি 90 ডিগ্রি হবে।
7. একই সমতলে অবস্থিত:
একান্তর কোণগুলি একই সমতলের মধ্যে থাকবে, আলাদা সমতলে নয়।
8. সমতার ক্ষেত্রে সমান্তরালতা:
যদি একান্তর কোণ দুটি সমান হয়, তাহলে অন্য রেখাগুলি সমান্তরাল হবে।
9. বহির্ভুক্ত/অন্তর্ভুক্ত হওয়া:
একটি যদি বহির্ভুক্ত/অন্তর্ভুক্ত হয়, অপরটিও সেরকমই হবে।
10. সমতার ক্ষেত্রে অন্য জোড়ার সমতা:
যদি এক জোড়ার একটি কোণ অপরের সমান হয়, তাহলে অন্য জোড়ার ও সেরকম হবে।
অনুরূপ কোণ ও একান্তর কোণের পার্থক্য :-
অনুরূপ কোণ এবং একান্তর কোণের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য রয়েছে:১. পরিমাপের দিক থেকে:
অনুরূপ কোণের ক্ষেত্রে কোণ দুটির পরিমাপ একই হতে হবে। কিন্তু একান্তর কোণের ক্ষেত্রে কোণগুলোর পরিমাপ একই হতে হবে না, পার্থক্য থাকতে পারে।
২. অবস্থানের দিক থেকে:
অনুরূপ কোণ একই সমতলে অবস্থান করতে পারে অথবা আলাদা সমতলেও থাকতে পারে। কিন্তু একান্তর কোণ একই সমতলে অবস্থান করে।
৩. কোণের ধরন অনুসারে:
অনুরূপ কোণ হতে পারে - সূক্ষ্মকোণ, স্থুলকোণ, সমকোণ ইত্যাদি। কিন্তু একান্তর কোণ সবসময়ই সমকোণ হয়।
৪. সমপার্শ্বতার দিক থেকে:
অনুরূপ কোণ সমপার্শ্বিক হতে হবে না। কিন্তু একান্তর কোণ সর্বদা সমপার্শ্বিক হয়।
এগুলো হলো অনুরূপ কোণ ও একান্তর কোণের মূল পার্থক্যগুলো।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.