তদ্ভব শব্দ কাকে বলে? তদ্ভব শব্দ কত প্রকার ও কি কি?

এই পোস্টে আমরা তদ্ভব শব্দ কাকে বলে তা নিয়ে আলোচনা করব তবে তার আগে তদ্ভব শব্দ কোথা থেকে উৎপন্ন হলো সে সম্পর্কে জেনে নেই।

কোন ভাষার সার্থকতা নির্ভর করে তার প্রকাশ ক্ষমতার উপর। যে ভাষা যত বিচিত্র ভাব ও বস্তু এবং যত গভীর অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম সে ভাষা তত উন্নত। ভাষার এই প্রকাশ ক্ষমতার মূল আধার হল শব্দ।

একটি ভাষায় যতগুলি শব্দ থাকে, সবগুলি নিয়েই তৈরি হয় সেই ভাষার শব্দভাণ্ডার। কোন ভাষার শব্দভাণ্ডারে যত বেশি শব্দ থাকে সেই ভাষাকে তত সমৃদ্ধ ভাষা হিসাবে ধরা হয়।

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষা বর্তমানে পৃথিবীর একটি সমৃদ্ধতম ভাষা। এই ভাষায় প্রচুর শব্দ আছে।

এই শব্দগুলিই বাংলা শব্দভান্ডারের উপাদান। একটি ভাষায় তিনভাবে শব্দ গৃহীত হয়—

১) উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া,

২) অন্যভাষা থেকে গ্রহণ করা এবং

৩) নতুনভাবে সৃষ্টি করা।

বাংলা ভাষাতেও এই তিনভাবে শব্দ এসেছে। তাই বাংলা শব্দভাণ্ডারের প্রধান প্রধান উপাদানগুলিকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

১) মৌলিক শব্দ,

২) আগুন্তক শব্দ বা কৃতঋণ শব্দ এবং

৩) মিশ্র বা সংকর শব্দ।

আরও পড়ুনঃ অর্ধ-তৎসম শব্দ কাকে?

মৌলিক শব্দ :

প্রাচীনভারতীয় আর্যভাষা থেকে বিবর্তনের নানা স্তর পেরিয়ে বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটেছে। তাই প্রাচীনভারতীয় আর্যের বিশেষত সংস্কৃতের অনেক শব্দই সরাসরি বা রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে। এই শব্দগুলিকেই মৌলিক শব্দ বলে।

এই মৌলিক শব্দ তিন প্রকার যথা-

ক) তৎসম শব্দ

খ) অর্ধ-তৎসম শব্দ এবং

গ) তদ্ভব শব্দ।

তাহলে তদ্ভব শব্দ হলো মৌলিক শব্দের একটি ভাগ। তাহলে এখন তদ্ভব শব্দ কাকে বলে সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

তদ্ভব শব্দ কাকে :-

যে সমস্ত শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্য বা সংস্কৃতি থেকে সোজাসুজি বাংলা ভাষায় আসেনি মধ্যবর্তী প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তন লাভ করে বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের তদ্ভব শব্দ বলা হয়।

অর্থাৎ যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে মধ্যবর্তী স্তরে প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তন লাভ করে বাংলায় এসেছে, সেগুলিকে তদ্ভব শব্দ বলে।

তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত কিন্তু বাংলা ভাষায় তাদের পরিবর্তিত রূপ ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ, এসব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত এবং তৎ-পরবর্তী স্তর অপভ্রংশে ব্যবহৃত হতো, পরে আবার সেগুলো আরও পরিবর্তিত হয়ে তদ্ভব শব্দ হিসেবে বাংলা শব্দ ভাণ্ডারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
 
আরও পড়ুনঃ সাধিত শব্দ কাকে বলে?

যেমন--- সংস্কৃত- ধর্ম > প্রাকৃত- ধম্ম > বাংলা- ধাম ; সংস্কৃত- কৃষ্ণ > প্রাকৃত- কণ্‌ হ > বাংলা- কানু। তদ্ভব শব্দের আরও কয়েকটি উদাহরণ হলো মস্তক > মত্থ > মাথা, চর্মকার> চম্মআর> চামার, হস্ত > হত্থ > হাত ইত্যাদি।

তদ্ভব শব্দ কত প্রকার ও কি কি :-

খাঁটি বাংলার মূল শব্দ সম্পন্ন হল তদ্ভব শব্দ। এই শব্দ আবার দুই প্রকার যথা- নিজস্ব তদ্ভব ও বিদেশি তদ্ভব।

নিজস্ব তদ্ভব :- 

যেসব তদ্ভব শব্দ যথার্থই বৈদিক সংস্কৃতির নিজস্ব শব্দের পরিবর্তনের ফলে বাংলা ভাষায় এসেছে সেগুলিকে নিজস্ব তদ্ভব শব্দ বলা হয়ে থাকে। যেমন- ইলাগার ইন্দাআর ইন্দরা, উপাধ্যায় উদ্রকায় ওকা, একাদশ এগারহ - এগারো।

বিদেশি তদ্ভব শব্দ : 

যেসব শব্দ প্রথমে বৈদিক বা সংস্কৃত ভাষায় ইন্দো-ইউরোপীয় বংশের অন্য ভাষা থেকে বা ইন্দো- ইউরোপীয় ছাড়া অন্য বংশের ভাষা থেকে কৃতঋণ শব্দ হিসাবে এসেছিল এবং পরে প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তন লাভ করে বাংলায় এসেছে সে সব শব্দকে বিদেশি তদ্ভব শব্দ বলা হয়ে থাকে। যেমন

ক. ইন্দো-ইউরোপীয় বংশ থেকে – দ্রামে (গ্রিক) দ্রম্য (সংস্কৃত) দম্ম (প্রাকৃত) দাম (বাংলা)।

খ. ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ ভিন্ন অন্য বংশ থেকে- পিটল্ল (তামিল) পিল্লিক (সংস্কৃত) পিল্লিঅ (প্রাকৃত) পিলে (বাংলা) ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ