মনের ভাব আমরা যতদূর সংক্ষেপে প্রকাশ করতে পারি, ততই আমাদের কৃতিত্ব। এই কথা মনে রেখেই ‘সন্ধি-সমাস' সৃষ্টি হয়েছে। 'সন্ধি' শব্দটির অর্থ যেমন মিলন, তেমনি 'সমাস' বলতে বুঝি সংক্ষেপকরণ।
অর্থাৎ সমাস মানে সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। এখন প্রশ্ন হলো সমাস কাকে বলে?
পরস্পরের সঙ্গে অর্থ-সম্বন্ধযুক্ত দুই বা তার বেশি পদকে একপদে পরিণত করাকে বলা হয় 'সমাস'।
এখানে মনে রাখতে হবে শব্দগুলির মধ্যে পরস্পর অর্থ-সম্পর্ক না থাকলে তা কখনই সমাসে পরিণত হবে না। যেমন: ভাইবোন = ভাই ও বোন। এখানে দুটি পদের মধ্যে অর্থ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু যদি বলি মাতা সন্তানকে ভালোবাসেন। এখানে 'মাতা' ও 'সন্তানকে’ এই দুটি পদের অর্থ-সম্পর্ক নেই বলে এই দুটি পদের সমাস করা যাবে না।
যেমন- দেশের সেবা = দেশসেবা, বই ও পুস্তক = বইপুস্তক, নেই পরোয়া যার = বেপরোয়া। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সমাসের সৃষ্টি। সমাস দ্বারা দুই বা ততোধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবোধক পদ সৃষ্টি হয়। এটি শব্দ তৈরি ও প্রয়োগের একটি বিশেষ রীতি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। তবে খাঁটি বাংলা সমাসের দৃষ্টান্তও প্রচুর পাওয়া যায়। সেগুলোতে সংস্কৃতের নিয়ম খাটে না।
কুয়াশায় আচ্ছন্ন = কুয়াশাচ্ছন্ন;
বীণা পাণিতে যাঁর = বীণাপাণি;
দিন দিন = প্রতিদিন;
ভালো যে মানুষ - ভালোমানুষ;
দেশের গৌরব = = দেশগৌরব।
সমাস এর কয়েকটি নির্দিষ্ট পরিভাষা আছে। পরিভাষাগুলি হল যথাক্রমে—
(১) সমস্তপদ,
(২) সমস্যমানপদ,
(৩) ব্যাসবাক্য,
(৪) পূর্বপদ এবং
(৫) উত্তরপদ।
সমাসে যে নূতন পদ গঠিত হয়, তাকে বলা হয় সমস্তপদ।
যে সকল পদের যোগে সমাস হয়, সেগুলিকে বলা হয় সমস্যমানপদ ।
সমাস ঘটাতে বা তার অর্থ বিশ্লেষণ করতে যে বাক্য ব্যবহৃত হয়, তাকে কেউ বলেন ব্যাসবাক্য, কেউ বলেন বিগ্রহবাক্য, কেউ বা বলেন সমাসবাক্য।
সমস্যমান পদগুলির পূর্বে যে পদটি বসে, তাকে বলে পূর্বপদ।
সমস্যমান পদগুলির শেষে যে পদটি বসে, তাকে বলে উত্তরপদ বা পরপদ।
উদাহরণ- বিলাত ফেরত রাজকুমার সিংহাসনে বসলেন। এখানে বিলাত-ফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন এ তিনটিই সমাসবদ্ধ পদ। এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া ও রকম বিলাত হতে ফেরত, রাজার কুমার সিংহ চিহ্নিত আসন - এগুলো হচ্ছে ব্যাসবাক্য। এসব ব্যাসবাক্যে 'বিলাত ফেরত', 'রাজা, 'কুমার, 'সিংহ', 'আসন' হচ্ছে এক একটি সমস্যমান পদ। আর বিলাত-ফেরত, রাজকুমার এবং সিংহাসন সমস্ত পদ। বিগাত, রাজা ও সিংহ হচ্ছে পূর্বপদ এবং ফেরত কুমার ও আসন হচ্ছে পরপদ ।
দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কেও তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেছেন। এদিক থেকে সমাস মূলত চারটি : দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব।
কিন্তু সাধারণভাবে ছয়টি সমাসেরই আলোচনা করা হয়। এছাড়া, প্রাদি, নিত্য, অলুক ইত্যাদি কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। সংক্ষেপে সেগুলোরও আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বোঝাতে ব্যাসবাক্যে এবং, ও, 'আর'-এই তিনটি অব্যয়পদ ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: পিতা ও মাতা - পিতামাতা, ভাই ও বোন - ভাইবোন।
বিস্তারিত জানতে: দ্বন্দ্ব সমাস
উদাহরণ : নীল যে উৎপল - নীলোৎপল, কাঁচা অথচ মিঠা - কাঁচামিঠা।
উদাহরণ ছেলেকে ভুলানো - ছেলেভুলানো, নবীনকে বরণ - নবীন-বরণ।
উদাহরণ: বীণা পাণিতে যার- বীণাপাণি, হতভাগ্য যার- হতভাগ্য।
উদাহরণ : শত অব্দের সমাহার শতাব্দী, তিন ফলের সমাহার ত্রিফলা।
উদাহরণ: ভিক্ষার অভাব - দুর্ভিক্ষ, কূলের সমীপে - উপকূল ইত্যাদি।
উল্লিখিত প্রধান ছয়টি সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। প্রাদি, নিত্য, উপপদ ও অলুক সমাস। এসব সমাসের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। এ এগুলোকে অপ্রধান মনে করা হয়।
১. প্রাদি সমাস:
প্র, প্রতি, অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয়, তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস।
যথা: (প্রকৃষ্ট) যে কন - প্রবচন। এরূপ পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ - পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ - অনুতাপ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলোকিত) = প্রভাভ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে। গতি = প্রগতি ইত্যাদি।
২. নিত্যসমাস :
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্যসমাস বলে।
তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যোগে এগুলোর অর্থ বিশদ করতে হয়। যেমন - অন্য গ্রাম-গ্রামান্তর, কেবল দর্শন দর্শনমাত্র, অন্য গৃহ গৃহান্তর, (বিষাক্ত) কাল (যম) তুলা (কাল বর্ণের নয়) সাপ কালসাপ, তুমি আমি ও সে আমরা, দুই এবং নব্বই বিরানব্বই।
সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপণ, মিলন ও একাধিক পদের একপদীকরণ। সমাস শব্দের প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য হলো একত্রে অবস্থান বা সংক্ষেপণ। সুতরাং ভাষায় সমাসের প্রধান কাজ হলো শব্দ ও বাক্য সংক্ষিপ্তকরণ।
সমাস ভাষাকে শ্রুতিমধুর করে। ভাষার অলঙ্করণ, গুণ সংযোজন ও পরিভাষা রচনার ক্ষেত্রে সমাসের প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান। তাই বলা যায়, বাংলাভাষাকে সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর ও সাবলীল করার জন্য সমাজের ভূমিকা অপরিসীম।
সমাসের মাধ্যমেই বাক্য ও ভাষা সহজ, সরল, সুন্দর ও শ্রুতিমধুর হয়। যেমন- বিলাত থেকে ফেরত= বিলাতফেরত। এ বাক্যের শব্দগুলো সংক্ষিপ্ত হয়ে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে 'বিলাতফেরত'-এ হওয়ায় যেমন সংক্ষিপ্ত হয়েছে, তেমনি হয়েছে সাবলীল ও শ্রুতিমধুর।
অতএব সমাস বাক্যকে সংক্ষিপ্ত, সুন্দর ও শ্রুতিমধুর করে। এছাড়া অলঙ্করণ ও শব্দগঠনের ক্ষেত্রেও সমাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নতুন শব্দ গঠনে সমাস কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
এগুলো এখন পয়েন্ট আকারে আলোচনা করা হলঃ
১. বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য ও অপরিসীম। সমাসের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে ভাষাকে সহজ-সরল, সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ও শ্রুতিমধুর করা। ভাষার আবেদন শ্রুতিমধুর না হলে সেই ভাষা শুনতে যেমন বিরক্তিবোধ হয় তেমনই তা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। যেমন- 'বউ' পরিবেশিত যে ভাত না বলে যদি বলা হয় 'বৌ-ভাত' তাহলে ভাষা সুন্দর ও শ্রুতিমধুর হয়।
২. অল্প কথায় ভাবকে ব্যাপকভাবে প্রকাশ করতে হলে সমাসের একান্ত প্রয়োজন।
৩. পারিভাষিক শব্দ তৈরির ক্ষেত্রেও সমাস বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন- 'তিন ফলের সমাহার' না বলে বলা হয় 'ত্রি-ফলা"। ত্রি-ফলা একটি পারিভাষিক শব্দ।
৪. যথার্থভাবে গুরুগম্ভীর ভাবকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করতে সমাসবদ্ধ পদ ব্যবহৃত হয়।
৫. ভাষাকে প্রাঞ্জলতা দান ও সহজভাবে উচ্চারণের ক্ষেত্রে সমাসের জুড়ি মেলা ভার।
৬. সমাসের মাধ্যমে বক্তব্য অর্থবহ, তাৎপর্যপূর্ণ ও ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে।
সন্ধিতে পাশাপাশি দুটি বর্ণের মিলন হয়। যেমন- বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয়। এখানে আ+আ দুটি বর্ণমিলে একটি 'আ' বর্ণ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়েছে।
কিন্ত সমাসের ক্ষেত্রে, বিদ্যার আলয় = বিদ্যালয়। এখানে বিদ্যা এবং আলয় দুটি ভিন্নপদ এক হয়ে পূর্বপদের 'র' বিভক্তি লোপ পেয়ে বিদ্যালয় হয়েছে।
অর্থাৎ সমাস মানে সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। এখন প্রশ্ন হলো সমাস কাকে বলে?
সমাস কাকে বলে :-
অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।পরস্পরের সঙ্গে অর্থ-সম্বন্ধযুক্ত দুই বা তার বেশি পদকে একপদে পরিণত করাকে বলা হয় 'সমাস'।
এখানে মনে রাখতে হবে শব্দগুলির মধ্যে পরস্পর অর্থ-সম্পর্ক না থাকলে তা কখনই সমাসে পরিণত হবে না। যেমন: ভাইবোন = ভাই ও বোন। এখানে দুটি পদের মধ্যে অর্থ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু যদি বলি মাতা সন্তানকে ভালোবাসেন। এখানে 'মাতা' ও 'সন্তানকে’ এই দুটি পদের অর্থ-সম্পর্ক নেই বলে এই দুটি পদের সমাস করা যাবে না।
যেমন- দেশের সেবা = দেশসেবা, বই ও পুস্তক = বইপুস্তক, নেই পরোয়া যার = বেপরোয়া। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সমাসের সৃষ্টি। সমাস দ্বারা দুই বা ততোধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবোধক পদ সৃষ্টি হয়। এটি শব্দ তৈরি ও প্রয়োগের একটি বিশেষ রীতি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। তবে খাঁটি বাংলা সমাসের দৃষ্টান্তও প্রচুর পাওয়া যায়। সেগুলোতে সংস্কৃতের নিয়ম খাটে না।
সমাসের কয়েকটি উদাহরণ :
মেঘ ও রৌদ্র = মেঘরৌদ্র;কুয়াশায় আচ্ছন্ন = কুয়াশাচ্ছন্ন;
বীণা পাণিতে যাঁর = বীণাপাণি;
দিন দিন = প্রতিদিন;
ভালো যে মানুষ - ভালোমানুষ;
দেশের গৌরব = = দেশগৌরব।
সমাস এর কয়েকটি নির্দিষ্ট পরিভাষা আছে। পরিভাষাগুলি হল যথাক্রমে—
(১) সমস্তপদ,
(২) সমস্যমানপদ,
(৩) ব্যাসবাক্য,
(৪) পূর্বপদ এবং
(৫) উত্তরপদ।
সমাসে যে নূতন পদ গঠিত হয়, তাকে বলা হয় সমস্তপদ।
যে সকল পদের যোগে সমাস হয়, সেগুলিকে বলা হয় সমস্যমানপদ ।
সমাস ঘটাতে বা তার অর্থ বিশ্লেষণ করতে যে বাক্য ব্যবহৃত হয়, তাকে কেউ বলেন ব্যাসবাক্য, কেউ বলেন বিগ্রহবাক্য, কেউ বা বলেন সমাসবাক্য।
সমস্যমান পদগুলির পূর্বে যে পদটি বসে, তাকে বলে পূর্বপদ।
সমস্যমান পদগুলির শেষে যে পদটি বসে, তাকে বলে উত্তরপদ বা পরপদ।
উদাহরণ- বিলাত ফেরত রাজকুমার সিংহাসনে বসলেন। এখানে বিলাত-ফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন এ তিনটিই সমাসবদ্ধ পদ। এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া ও রকম বিলাত হতে ফেরত, রাজার কুমার সিংহ চিহ্নিত আসন - এগুলো হচ্ছে ব্যাসবাক্য। এসব ব্যাসবাক্যে 'বিলাত ফেরত', 'রাজা, 'কুমার, 'সিংহ', 'আসন' হচ্ছে এক একটি সমস্যমান পদ। আর বিলাত-ফেরত, রাজকুমার এবং সিংহাসন সমস্ত পদ। বিগাত, রাজা ও সিংহ হচ্ছে পূর্বপদ এবং ফেরত কুমার ও আসন হচ্ছে পরপদ ।
সমাস কত প্রকার ও কি কি :-
সমাস প্রধানত ছয় প্রকার :- দ্বন্দ্ব,
- কর্মধারয়,
- তৎপুরুষ,
- বহুব্রীহি,
- দ্বিগু ও
- অব্যয়ীভাব সমাস।
দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কেও তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেছেন। এদিক থেকে সমাস মূলত চারটি : দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব।
কিন্তু সাধারণভাবে ছয়টি সমাসেরই আলোচনা করা হয়। এছাড়া, প্রাদি, নিত্য, অলুক ইত্যাদি কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। সংক্ষেপে সেগুলোরও আলোচনা করা হয়েছে।
১. দ্বন্দ্ব সমাস:
যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বোঝাতে ব্যাসবাক্যে এবং, ও, 'আর'-এই তিনটি অব্যয়পদ ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: পিতা ও মাতা - পিতামাতা, ভাই ও বোন - ভাইবোন।
বিস্তারিত জানতে: দ্বন্দ্ব সমাস
২. কর্মধারয় সমাস :
পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত বিশেষ্য ও বিশেষণ পদে, কিংবা বিশেষ্য ও বিশেষ্য পদে, কিংবা বিশেষণ ও বিশেষণ পদের যে সমাস হয় এবং উত্তরপদ অর্থ প্রাধান্য লাভ করে তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।উদাহরণ : নীল যে উৎপল - নীলোৎপল, কাঁচা অথচ মিঠা - কাঁচামিঠা।
৩. তৎপুরুষ সমাস :
যে সমাসে পূর্বপদে বিভিক্তি লোপ হয় এবং পরপদ অর্থপ্রাধান্য লাভ করে তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।উদাহরণ ছেলেকে ভুলানো - ছেলেভুলানো, নবীনকে বরণ - নবীন-বরণ।
৪. বহুব্রীহি সমাস :
যে সমাসে পূর্ব বা পরপদ কোনোটির অর্থ প্রাধান্য পায় না, ভিন্ন একটি অর্থ প্রধান হয় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।উদাহরণ: বীণা পাণিতে যার- বীণাপাণি, হতভাগ্য যার- হতভাগ্য।
৫. দ্বিগু সমাস :
যে সমাসে পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ, পরপদটি বিশেষ্য এবং সমাসে পরপদেরই অর্থ প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বিগু সমাস বলে।উদাহরণ : শত অব্দের সমাহার শতাব্দী, তিন ফলের সমাহার ত্রিফলা।
৬. অব্যয়ীভাব সমাস:
যে সমাসের পূর্বপদ অব্যয় এবং যে সমাসে । বা অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য লাভ করে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে।উদাহরণ: ভিক্ষার অভাব - দুর্ভিক্ষ, কূলের সমীপে - উপকূল ইত্যাদি।
উল্লিখিত প্রধান ছয়টি সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। প্রাদি, নিত্য, উপপদ ও অলুক সমাস। এসব সমাসের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। এ এগুলোকে অপ্রধান মনে করা হয়।
বিস্তারিত জানতে: অব্যয়ীভাব সমাস
১. প্রাদি সমাস:
প্র, প্রতি, অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয়, তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস।
যথা: (প্রকৃষ্ট) যে কন - প্রবচন। এরূপ পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ - পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ - অনুতাপ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলোকিত) = প্রভাভ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে। গতি = প্রগতি ইত্যাদি।
২. নিত্যসমাস :
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্যসমাস বলে।
তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যোগে এগুলোর অর্থ বিশদ করতে হয়। যেমন - অন্য গ্রাম-গ্রামান্তর, কেবল দর্শন দর্শনমাত্র, অন্য গৃহ গৃহান্তর, (বিষাক্ত) কাল (যম) তুলা (কাল বর্ণের নয়) সাপ কালসাপ, তুমি আমি ও সে আমরা, দুই এবং নব্বই বিরানব্বই।
সমাসের প্রয়োজনীয়তা :-
বাংলা ব্যাকরণে রূপতত্ত্ব অংশে সমান আলোচিত হয়েছে। শব্দগঠনের তিনটি প্রক্রিয়া সংযোজন, বিয়োজন এ অর্থপরিবর্তন- এ তিনটির মধ্যে সমাস হলো সংযোজন প্রক্রিয়ার অন্তর্গত।সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপণ, মিলন ও একাধিক পদের একপদীকরণ। সমাস শব্দের প্রকৃত অর্থ ও উদ্দেশ্য হলো একত্রে অবস্থান বা সংক্ষেপণ। সুতরাং ভাষায় সমাসের প্রধান কাজ হলো শব্দ ও বাক্য সংক্ষিপ্তকরণ।
সমাস ভাষাকে শ্রুতিমধুর করে। ভাষার অলঙ্করণ, গুণ সংযোজন ও পরিভাষা রচনার ক্ষেত্রে সমাসের প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান। তাই বলা যায়, বাংলাভাষাকে সংক্ষিপ্ত, শ্রুতিমধুর ও সাবলীল করার জন্য সমাজের ভূমিকা অপরিসীম।
সমাসের মাধ্যমেই বাক্য ও ভাষা সহজ, সরল, সুন্দর ও শ্রুতিমধুর হয়। যেমন- বিলাত থেকে ফেরত= বিলাতফেরত। এ বাক্যের শব্দগুলো সংক্ষিপ্ত হয়ে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে 'বিলাতফেরত'-এ হওয়ায় যেমন সংক্ষিপ্ত হয়েছে, তেমনি হয়েছে সাবলীল ও শ্রুতিমধুর।
অতএব সমাস বাক্যকে সংক্ষিপ্ত, সুন্দর ও শ্রুতিমধুর করে। এছাড়া অলঙ্করণ ও শব্দগঠনের ক্ষেত্রেও সমাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নতুন শব্দ গঠনে সমাস কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।
এগুলো এখন পয়েন্ট আকারে আলোচনা করা হলঃ
১. বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য ও অপরিসীম। সমাসের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে ভাষাকে সহজ-সরল, সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ও শ্রুতিমধুর করা। ভাষার আবেদন শ্রুতিমধুর না হলে সেই ভাষা শুনতে যেমন বিরক্তিবোধ হয় তেমনই তা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। যেমন- 'বউ' পরিবেশিত যে ভাত না বলে যদি বলা হয় 'বৌ-ভাত' তাহলে ভাষা সুন্দর ও শ্রুতিমধুর হয়।
২. অল্প কথায় ভাবকে ব্যাপকভাবে প্রকাশ করতে হলে সমাসের একান্ত প্রয়োজন।
৩. পারিভাষিক শব্দ তৈরির ক্ষেত্রেও সমাস বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন- 'তিন ফলের সমাহার' না বলে বলা হয় 'ত্রি-ফলা"। ত্রি-ফলা একটি পারিভাষিক শব্দ।
৪. যথার্থভাবে গুরুগম্ভীর ভাবকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করতে সমাসবদ্ধ পদ ব্যবহৃত হয়।
৫. ভাষাকে প্রাঞ্জলতা দান ও সহজভাবে উচ্চারণের ক্ষেত্রে সমাসের জুড়ি মেলা ভার।
৬. সমাসের মাধ্যমে বক্তব্য অর্থবহ, তাৎপর্যপূর্ণ ও ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে।
সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য :-
বাংলা ভাষায় সন্ধি এবং সমাস দুটোর সাহায্যেই নতুন শব্দ গঠিত হয়। কিন্তু দুটোর মধ্যে প্রক্রিয়াগত পার্থক্য রয়েছে।সন্ধিতে পাশাপাশি দুটি বর্ণের মিলন হয়। যেমন- বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয়। এখানে আ+আ দুটি বর্ণমিলে একটি 'আ' বর্ণ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়েছে।
কিন্ত সমাসের ক্ষেত্রে, বিদ্যার আলয় = বিদ্যালয়। এখানে বিদ্যা এবং আলয় দুটি ভিন্নপদ এক হয়ে পূর্বপদের 'র' বিভক্তি লোপ পেয়ে বিদ্যালয় হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.