সাধিত শব্দ কাকে বলে?

সাধিত শব্দ কাকে বলে?

এই পোস্টে আমরা সাধিত শব্দ কাকে বলে উদাহরণ সহ সে বিষয়ে আলোচনা করব। তবে তার আগে শব্দ কি সে সম্পর্কে আলোচনা করা জরুরি।

এক বা একাধিক ধ্বনির সমন্বয়ে তৈরি অর্থবোধক ও উচ্চারণযোগ্য একককে বলা হয় শব্দ। অর্থাৎ কিছু ধ্বনি একসাথে মিলে যখন কোনো অর্থ প্রকাশ করে তাকে আমরা শব্দ বলে থাকি।

যদি অর্থ প্রকাশ না করে তবে তা শব্দ হবে না। যেমনঃ গোলাপ গোলাপ একটি শব্দ। কারণ, গোলাপ বলতে আমরা একটি ফুল এর নাম বুঝে থাকি, যা একটি অর্থ বোঝায়।। এই শব্দটি তৈরি করতে আমাদের গো, লা, প এই ৩টি ধ্বনিকে এক করতে হয়েছে। একইভাবে কলম, গাড়ি, আকাশ ইত্যাদি অনেক শব্দ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়।

শব্দের গঠন:

শব্দের গঠন বলতে বোঝায় শব্দ তৈরির বা নির্মানের প্রক্রিয়া। শব্দ কিভাবে সৃষ্টি হয় তা আমরা শব্দ গঠন থেকে জানতে পারি। নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে শব্দ গঠন বলা হয়।

গঠনগত দিক থেকে শব্দ দুইটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যথাঃ

১। মৌলিক শব্দ

২। সাধিত শব্দ

তাহলে আমার জানি শব্দকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে গঠনগত দিক থেকে শব্দকে দুইটি শ্রেণিতে বিভক্ত। এর মধ্যে সাধিত শব্দ অন্যতম। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো সাধিত শব্দ কাকে বলে? তা নিয়ে আলোচনা করা।

সাধিত শব্দ কাকে বলে :-

যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে বা ভাঙলে আলদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, তাকে সাধিত শব্দ বলে।

অর্থাৎ যে সব শব্দকে বিভাজন করলে এক বা একাধিক অর্থদ্যোতক কিংবা অর্থবাচক অংশ পাওয়া যায় সেসব শব্দকে সাধিত শব্দ বলে।

মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই ব্যাকরণিক বিধি অনুসরণ করে প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের সাহায্যে, উপসর্গ যোগে কিংবা সমাসের মাধ্যমে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। উদাহরণস্বরূপ চাঁদমুখ, মশারি, প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি ।

আরও পড়ুনঃ দেশি ও বিদেশি শব্দ কাকে বলে?

সাধিত শব্দ হলো এমন যার ভিতরে আরো অর্থবোধক শব্দ লুকিয়ে থাকে। সাধারণত কোন মৌলিক শব্দের সাথে বিভিন্ন ব্যাকরণিক উপাদান যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়।

যেমনঃ ডুবন্ত = ডুব + অন্ত। এখানে 'ডুবন্ত' শব্দকে ভেঙে আরো একটি অর্থবোধক শব্দ 'ডুব' এবং একটি ব্যাকরণিক উপাদান প্রত্যয় পাওয়া যায়। মাতাপিতা মাতা ও পিতা। এখানে মাতাপিতা' শব্দকে ভেঙে আরো দুইটি অর্থবোধক শব্দ 'মাতা' এবং 'পিতা' পাওয়া যায়।

সাধিত শব্দ গঠনের নিয়ম :-

সাধিত শব্দ গঠনের ২টি উপায় আছে। অর্থাৎ ২ ভাবে সাধিত শব্দ গঠিত হয়ে থাকে।

ক) প্রত্যয়ের সাহায্যে শব্দ গঠন:

শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমনঃ বিমান + ইক = বৈমানিক। এখানে 'বিমান' শব্দের পরে 'ইক' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়েছে। একইভাবে চল+ অন্ত= চলন্ত, ভ্রাতৃ+ত্ব= ভ্রাতৃত্ব প্রত্যয়- সাধিত শব্দের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়।

খ) সমাসের সাহায্যে শব্দ গঠন :

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা তার চেয়ে বেশি পদকে একটি পদে পরিণত করার মাধ্যমে নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমনঃ দিন দিন প্রতিদিন। এখানে দিন এবং দিন শব্দ দুটিকে এক করে প্রতিদিন শব্দটি পাওয়া যায়। একইভাবে মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি = মৌমাছি, সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন সমাস সাধিত শব্দের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :-

  • উপসর্গ শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া নয়, এটি শব্দ গঠনের একটি উপাদান। কারণ উপসর্গযুক্ত হলো মূলত শব্দ সমাস সাধিত শব্দ। এগুলো অব্যয়ীভাব সমাস অথবা প্রাদি সমাসের অন্তর্গত।
  • সন্ধি শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া নয়। কারণ সন্ধিবদ্ধ শব্দগুলো মূলত প্রত্যয়-সাধিত শব্দ অথবা সমাস সাধিত শব্দ।
  • পদ পরিবর্তন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া নয়। কারণ এটি মূলত প্রত্যয়ের সাহায্যেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।
  • বিভক্তি শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া নয়। কারণ বিভক্তিযুক্ত শব্দ ও ধাতু পদের অন্তর্গত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ