অর্থের উন্নতি বা অর্থোৎকর্ষ কাকে বলে?

অর্থের উন্নতি বা অর্থোৎকর্ষ কাকে বলে :-

যখন কোনো শব্দ তার মূল অর্থ (হীন বা সাধারণ) পরিত্যাগ করে কোনো উন্নত অর্থ গ্রহণ করে, তখন তাকে শব্দার্থের উন্নতি বা উৎকর্ষ বলে।

অন্যভাবে বলা যায়, কোনো শব্দের অর্থ যদি এমনভাবে পরিবির্তত হয় যে শব্দটিতে প্রথমে যে ভাব বা বস্তুকে বোঝাতো তার চেয়ে সম্মানিত বা আদৃত ভাব বা বস্তুকে নতুন অর্থে প্রকাশ করা হচ্ছে, তাবে তাকে অর্থের উন্নতি বা অর্থোৎকর্ষ বলে।

সাধারণ বাচ্যার্থ বা হীন-অপকৃষ্ট অর্থ শব্দ অতিক্রম করে এবং উচ্চতর ভাব তথা বিষয়গত উৎকর্ষকে দ্যোতিত করে। ফলে শব্দটির সংকীর্ণ- নর্থ অপসারিত হয়। তাকেই শব্দের অর্থোৎকর্ষ বা অর্থের উন্নতি বলে। যেমন-

(১) 'মন্দির' একটি শব্দ। এর আদি অর্থ ছিল গুহ বা ঘর বা ঘুমোবার স্থান (মন্দির বাহির কঠিন কপাট। গোবিন্দ দাস)। কিন্তু এখন এর অর্থ দাড়িয়েছে— দেবালয়। এখানে শব্দটির অর্থগত উন্নতি বা উৎকর্ষ ঘটেছে ধর্মীয় ভাবের সংযোগে। (ভকত মন্দির মাঝে দেবতা প্রবীণ — রবীন্দ্রনাথ)। (যে কোনো ঘর > দেবতার ঘর)


(২) 'তপন' একটি শব্দ। এর আদি অর্থ ছিল যা তপ্ত করে। কিন্তু এখন এর অর্থের উন্নতি ঘটেছে। এখন তপন মানে সূর্য।

(৩) 'দুহিতা' একটি শব্দ। এর আদি অর্থ ছিল দোহনকারিণী নারী। এখন এর অর্থের উন্নতি ঘটেছে। অর্থ দাঁড়িয়েছে কন্যা।

(৪) অর্থোৎকর্ষের আরও কিছু উদাহরণ :

১. যোগিনী একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ- তপস্যাকারিণী, উন্নতার্থ-যোগসিদ্ধা ।

২. অপরূপ একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ- কদাকার রূপ, উন্নতা - অনিন্দ্যসুন্দর।

৩. ধ্যান একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ—একাগ্র চিন্তা, উন্নতার্থ —ঐশ্বরিক সাধনা।

৪. নেতা একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ—নিয়ে যান যিনি, উন্নতার্থ—পরিচালনায় দক্ষ।

৫. বিধি একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ- নিয়মনীতি, উন্নতার্থ—ভগবান, ব্রহ্মা।

৬. তপন একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ- যা তপ্ত করে, উন্নতার্থ—সূর্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ