মূলধ্বনি বা স্বনিম কাকে বলে? স্বনিম কত প্রকার ও কি কি?

ইংরেজী Sound এর বাংলায় ধ্বনি শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। ধ্বনি বিভিন্ন ভাবে সৃষ্টি হতে পারে। যেমন যন্ত্রেয় সাহায্য, হাততালির মাধ্যমে বা মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে। এইসব রকমের ধ্বনিকে আমরা ‘Sound' বা ধ্বনি বলি।

তবে এরমধ্যে থেকে কেবলমাত্র মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনিকেই স্বন বা বাগধারা (Phone) বলে। বাগযন্ত্রের সাহায্যে সৃষ্টি সব ধ্বনি অন্বয় ভাষায় ব্যবহৃত হয় না। যেমন- পাগলের অর্থহীন প্রলাপ বা শিশুর অস্ফুষ্ট ধ্বনি। শুধু মাত্র মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত এবং ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনির মধ্যে কিছু ধ্বনি হল মূলধ্বনি। আর কিছু হল মূলধ্বনির উচ্চারণ বৈচিত্র।

আধুনিক বাংলাভাষায় ‘শ্লীল' শব্দে ‘শ” এর উচ্চারণ দন্ত্য ‘স' এর মতো কিন্তু ‘শীল' শব্দে 'শ' এর উচ্চারণ তালব্য শ’ই৷

এখানে মূলধ্বনি একটাই সেটি হল- “শ”।

কিন্তু বাংলায় আর দুটো উচ্চারন বৈচিত্র কখনো দন্ত্য ‘স’ এর মতো অথবা কখনো “শাই।

মূলধ্বনি বা স্বনিম কাকে বলে :-

অতএব দেখা গেল ভাষায় কিছু মূলধ্বনিকে এবং তাদের আবার একাধিক উচ্চারণ ঐচিত্র্য সহ প্রত্যেকটি মূলধ্বনিকেই বলে স্বনিম (বা ধ্বনিতা বা ধ্বনিমান বা ধ্বনিমূল) (Phoneme)।

মূলধ্বনির উচ্চারন বৈচিত্র্য দুরকম হতে পারে -

(ক) উপধ্বনি (বা পূরক ধ্বনি বা সহধ্বনি বা বিষন) (Allophone )

(খ) মুক্ত বেচিত্র্য বা স্বচ্ছন্দ বৈচিত্র্য (Force Variation)

এই মূলধ্বনি বা স্বনিমই হল ভাষার মল উপাদান। স্বনিমের তত্ত্ব প্রথম বাখ্যা করেন পোলিশ ভাষা বিজ্ঞানী জন বোটুঙ্গা দ্য কুর্তনে (Jan baudouin de courtenay) (1845-1929) তিনি বাগধ্বনি ও স্বনিমেয় মধ্যে পার্থক্য দেখিয়ে রুশীয় ভাষায় ‘Fonema’ শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন।

আধুনিক বর্ণনামুলক ভাষাবিজ্ঞানের জনক ফেদিনী দ্যা সোস্যুর Phoneme শব্দটি প্রয়োগ করেন এবং তখন থেকেই পাশ্চাত্যে বিভিন্ন ভাষাবিজ্ঞানি বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে ‘Phoneme' এর তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে আসছেন।

স্বনিমের সহজতর ব্যাখ্যা করেছেন ভাষা বিজ্ঞানী প্রিন্স ক্রবেৎসকয় (NS Trubetzkoy) - A phoneme is a phonological unit which can not be broken down into any smaller phonological units by phonemic units should be understood each member of a phonemic contrast. A Phonemic contrast is any sound contrast which, in the language in question, can be used as a means of differentiating intellectual meaning."

সাধারন ভাষাবিজ্ঞানও বাংলা ভাষা - রমেশ্বর শ, পৃ: ২৭৬ অর্থাৎ, যে সব ক্ষুদ্রতম ধ্বনিগত এককের মধ্যে পারস্পারিক স্বনিসীয় বা মূলধ্বনিগত বিরোধ থাকে সেই ধ্বনিগত এককগুলির প্রত্যেকটিকে ধ্বনিতা বা স্বনিম (Phoneme) বলে।

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক

পার্থক্যসাদৃশ্য 
কাল = ক্ + আ+ল্
ক্ +আ+ল্
খাল = খ্ + আ+ল্খ্ +আ+ল্

‘কাল' এবং ‘খাল' শব্দদুটি 'ক' ও 'খ' কে বাদ দিলে আর কোন ধ্বনির ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই অর্থাৎ আর সবই হুবহু এক। তাহলে দেখা যাচ্ছে 'ক' ও 'খ' এরজন্য শব্দ দুটিতে অর্থের পার্থক্য হচ্ছে। এই রকম যে নূনতম ধ্বনির পার্থক্যের জন্যে একাধিক শব্দের মধ্যে অর্থের পার্থক্য হয় সেই ধ্বনি গুলিকে স্বনিম বা মূলধ্বনি (Phoneme) বলে।

উপরের উদাহরণ অনুযায়ী 'ক' এবং 'খ' হল দুটি স্বনিম বা মূলধ্বনি।

আরও পড়ুনঃ ধ্বনির লোপ কাকে বলে? 

স্বনিমের প্রয়োজনীয় শর্ত :-

স্বনিম হওয়ার প্রয়োজনীয় দুটি শর্ত হল

১. শব্দ দুটি সুস্পষ্ট স্বতন্ত্র উচ্চারন। এবং

২. শব্দ দুটির মধ্যে অর্থের পার্থক্য সৃষ্টি করার ক্ষমতা।

স্বনিম কত প্রকার ও কি কি :-

স্বনিমের দুটি প্রকারভেদ আছে-

১. বিভাজ্য স্বনিম—যাদের আলাদা আলাদা ধ্বনিমূলক এককে বিভক্ত করা যায়।

বিভাজ্য স্বনিম দুই প্রকার—স্বর স্বনিম এবং ব্যঞ্জন স্বনিম। 

২. অবিভাজ্য স্বনিম—যাদের আলাদা আলাদা ধ্বনিমূলক এককে বিভক্ত করা যায় না।

অবিভাজ্য স্বনিম সাধারণত একাধিক বিভাজ্য স্বনিমের উপরই আধারিত এবং এর পৃথক উচ্চারণ সম্ভব নয়।

আর অবিভাজ্য স্বনিম পাঁচ প্রকার—শ্বাসাঘাত, স্বরাঘাত, যতি, দৈর্ঘ্য এবং নাসিকীভবন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ