মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে সকল স্বরধ্বনিকে আর বিশ্লিষ্ট করা যায় না এবং যারা অন্য কোনো ধ্বনির সঙ্গে সাদৃশ্য পূর্ণ নয়, তাদেরই বলা হয় মৌলিক স্বরধ্বনি।
মৌলিক স্বরধ্বনি কত প্রকার ও কি কি :-
বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি সাতটি। যথা-ই, এ, অ্যা, আ, অ, ও, উ ।
এই সাতটি স্বরধ্বনিকে বিভিন্ন দিক থেকে শ্রেণিবিভক্ত করা যায়। যেমন,
ই, এ, অ্যা, আ-এই চারটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা সম্মুখ দিকে আকৃষ্ট হয়। তাই এদের বলা হয় সম্মুখ স্বরধ্বনি।
পশ্চাৎ স্বরধ্বনি :
অ, ও, উ এই তিনটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পশ্চাৎ দিকে আকৃষ্ট হয়। তাই এদের বলা হয় পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
উচ্চ স্বরধ্বনি :
ই এবং উ স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখবিবরের মধ্যে জিহ্বার অবস্থান হয় সব থেকে উচ্চে। সেই জন্য এই দুই ধ্বনিকে বলা হয় উচ্চ স্বরধ্বনি।
এই সাতটি স্বরধ্বনিকে বিভিন্ন দিক থেকে শ্রেণিবিভক্ত করা যায়। যেমন,
(ক) জিহ্বার অবস্থান অনুসারে :
সম্মুখ স্বরধ্বনি :ই, এ, অ্যা, আ-এই চারটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা সম্মুখ দিকে আকৃষ্ট হয়। তাই এদের বলা হয় সম্মুখ স্বরধ্বনি।
পশ্চাৎ স্বরধ্বনি :
অ, ও, উ এই তিনটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পশ্চাৎ দিকে আকৃষ্ট হয়। তাই এদের বলা হয় পশ্চাৎ স্বরধ্বনি।
উচ্চ স্বরধ্বনি :
ই এবং উ স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখবিবরের মধ্যে জিহ্বার অবস্থান হয় সব থেকে উচ্চে। সেই জন্য এই দুই ধ্বনিকে বলা হয় উচ্চ স্বরধ্বনি।
আরও পড়ুনঃ ধ্বনির রূপান্তর কাকে বলে?
উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি :
এ এবং ও স্বরধ্বনিদ্বয় উচ্চারণের সময় জিহ্বা মুখবিবরের মধ্যে উপরের দিকে থাকলেও সর্বাধিক উচ্চতায় থাকে না, তাই এই দুই ধ্বনিকে বলা হয় উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি।
নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি :
অ্যা এবং অ স্বরধ্বনিদ্বয় উচ্চারণের সময় জিহ্বা মুখবিবরের নীচের দিকে থাকলেও সর্বাধিক নিম্নে থাকে না; তাই এই দুই ধ্বনিকে বলা হয় নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি।
নিম্ন-স্বরধ্বনি :
আ-ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় জিহ্বার অবস্থান হয় মুখ বিবরের একেবারে নীচে। এই জন্য আ-কে বলা হয় নিম্ন-স্বরধ্বনি।
কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি :
আ-ধ্বনিটি সম্মুখ স্বরধ্বনি ও পশ্চাৎ স্বরধ্বনির মধ্যে অবস্থিত ব'লে একে কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনিও বলা হয়।
ই, এ, অ্যা, আ—এই চারিটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠ ও অধর কম-বেশি প্রসারিত থাকে। তাই এদের প্রসারিত স্বরধ্বনি বলে।
কুঞ্চিত স্বরধ্বনি :
অ, ও, উ—এই তিনটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠাধর ক্রমশ কুঞ্চিত হ'তে থাকে বলে এদের বলা হয় কুঙ্খিত স্বরধ্বনি।
সংবৃত্ত স্বরধ্বনি :
ই এবং উ ধ্বনি উচ্চারণকালে মুখবিবর সর্বাধিক সংবৃত থাকে ব'লে এদের সংবৃত স্বরধবনি বলে।
অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি :
এ এবং ও ধ্বনি দু'টি উচ্চারণের সময় মুখবিবর আংশিক সংবৃত থাকে বলে এদের অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি বলে।
অর্থ বিবৃত স্বরধ্বনি :
অ্যা এবং তা ধ্বনি দু'টি উচ্চারণের সময় মুখবিবর আংশিক বিবৃত হ'লেও সর্বাধিক বিবৃত হয় না। তাই এদের বলা হয় অর্ধ বিবৃত স্বরধ্বনি।
উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি :
এ এবং ও স্বরধ্বনিদ্বয় উচ্চারণের সময় জিহ্বা মুখবিবরের মধ্যে উপরের দিকে থাকলেও সর্বাধিক উচ্চতায় থাকে না, তাই এই দুই ধ্বনিকে বলা হয় উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি।
নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি :
অ্যা এবং অ স্বরধ্বনিদ্বয় উচ্চারণের সময় জিহ্বা মুখবিবরের নীচের দিকে থাকলেও সর্বাধিক নিম্নে থাকে না; তাই এই দুই ধ্বনিকে বলা হয় নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি।
নিম্ন-স্বরধ্বনি :
আ-ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় জিহ্বার অবস্থান হয় মুখ বিবরের একেবারে নীচে। এই জন্য আ-কে বলা হয় নিম্ন-স্বরধ্বনি।
কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি :
আ-ধ্বনিটি সম্মুখ স্বরধ্বনি ও পশ্চাৎ স্বরধ্বনির মধ্যে অবস্থিত ব'লে একে কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনিও বলা হয়।
(খ) মুখবিবরের আকৃতির পরিবর্তন অনুসারে :
প্রসারিত স্বরধ্বনি :ই, এ, অ্যা, আ—এই চারিটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠ ও অধর কম-বেশি প্রসারিত থাকে। তাই এদের প্রসারিত স্বরধ্বনি বলে।
কুঞ্চিত স্বরধ্বনি :
অ, ও, উ—এই তিনটি স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠাধর ক্রমশ কুঞ্চিত হ'তে থাকে বলে এদের বলা হয় কুঙ্খিত স্বরধ্বনি।
সংবৃত্ত স্বরধ্বনি :
ই এবং উ ধ্বনি উচ্চারণকালে মুখবিবর সর্বাধিক সংবৃত থাকে ব'লে এদের সংবৃত স্বরধবনি বলে।
অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি :
এ এবং ও ধ্বনি দু'টি উচ্চারণের সময় মুখবিবর আংশিক সংবৃত থাকে বলে এদের অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি বলে।
অর্থ বিবৃত স্বরধ্বনি :
অ্যা এবং তা ধ্বনি দু'টি উচ্চারণের সময় মুখবিবর আংশিক বিবৃত হ'লেও সর্বাধিক বিবৃত হয় না। তাই এদের বলা হয় অর্ধ বিবৃত স্বরধ্বনি।
আরও পড়ুনঃ ধ্বনির আগম কাকে বলে?
বিবৃত স্বরধ্বনি :
আ-ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় মুখবিবর এবং ওষ্ঠাধর সর্বাধিক বিকৃত হয় ব'লে একে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে।
বিবৃত স্বরধ্বনি :
আ-ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় মুখবিবর এবং ওষ্ঠাধর সর্বাধিক বিকৃত হয় ব'লে একে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.