লিঙ্গ কাকে বলে? কত প্রকার ও কি? লিঙ্গ পরিবর্তন?

  • আমার বাবা একজন শিক্ষক।
  • আমার মা একজন শিক্ষিকা।
  • সূর্য আমাদের আলো ও উত্তাপ দেয়।

ওপরের বাক্যগুলিতে শিক্ষক, শিক্ষিকা, সূর্য-পদ তিনটি লক্ষ্য করো। প্রথম বাক্যে "শিক্ষক" বলতে পুরুষ-জাতীয় মানুষকে বোঝায়। দ্বিতীয় বাকো "শিক্ষিকা' বলতে স্ত্রী-জাতীয় কেউকে বুঝতে পারি। তৃতীয় বাক্যে "সূর্য" বলতে স্ত্রী বা পুরুষ কোনো কিছুকে না বুঝিয়ে অপ্রাণীবাচক কোনো বস্তুকে বোঝায়।

লিঙ্গ কাকে বলে :-

"লিঙ্গ" শব্দের অর্থ চিহ্ন। এটি সংস্কৃত শব্দ এবং এর ব্যুৎপত্তি হলো লিঙ্গ+অ= লিঙ্গ। লিঙ্গ শব্দের ভিন্ন অর্থ থাকলেও ব্যাকরণে এটি শব্দের শ্রেণিবিশেষ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। লিঙ্গের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- যে সকল শব্দ দ্বারা বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের মধ্যে পুরুষ, স্ত্রী বা ভিন্ন জাতি বোঝায় তাকে লিঙ্গ বলে।

অর্থাৎ যে শব্দ বা পদের দ্বারা পুরুষ, স্ত্রী এবং বস্তুজগতের অপ্রাণীবাচক কোনো কিছুকে আলাদাভাবে চিনতে পারা যায়, তাকে লিঙ্গ বলে।

অন্যভাবে বলা যায়, যে চিহ্ন দিয়ে পুরুষ, স্ত্রী অথবা পুরুষ-স্ত্রী কোনোটিই নয়, কিংবা স্ত্রী-পুরুষ উভয়কেই বোঝায় তাকে লিঙ্গ বলে।

আরও পড়ুনঃ পুরুষ কাকে বলে? 

লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি :-

বস্তুজগতে প্রাণী বা অপ্রাণীবাচক শব্দকে চিনে নেবার চার ধরনের লক্ষণ বা চিহ্ন আছে বলে লিঙ্গও চার প্রকার। তথা -

  • পুংলিঙ্গ, 
  • স্ত্রীলিঙ্গ, 
  • ক্লীবলিঙ্গ ও 
  • উভয়লিঙ্গ।

পুংলিঙ্গ :

শব্দের যে লক্ষণ দিয়ে শুধুমাত্র পুরুষ জাতীয় কোনো কিছুকে বোঝায় তাক পুংলিঙ্গ বলে।

যে শব্দ বা পদের দ্বারা পুরুষ-জাতীয় কোনো কিছুকে বোঝায়, তাকে পুংলিঙ্গ বলে।

যেমন— বাবা, ছেলে, শিক্ষক, স্বামী, বর, চাকর, সাহেব, গোলাম, ডাক্তার ইত্যাদি।

স্ত্রীলিঙ্গ :

শব্দের যে লক্ষণ দিয়ে শুধুমাত্র স্ত্রীজাতীয় কোনো কিছুকে বোঝায়, তাকে স্ত্রীলিঙ্গ বলে।

যে শব্দ বা পদের দ্বারা স্ত্রী-জাতীয় কোনো কিছুকে বোঝায়, তাকে স্ত্রীলিঙ্গ বলে।

যেমন— মা, মেয়ে, বোন, ছাত্রী, শিক্ষিকা, ঝি, বৃদ্ধা ইত্যাদি।

ক্লীবলিঙ্গ :

শব্দের যে লক্ষণ দিয়ে পুরুষ-স্ত্রী কোনো কিছুকে না বুঝিয়ে অপ্রাণীবাচক কোনো কিছু বোঝায়, তাকে ক্লীবলিঙ্গ বলে।

যে শব্দ বা পদের দ্বারা পুরুষ বা স্ত্রী জাতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রাণীকে না বুঝিয়ে অপ্রাণীবাচক কোনো কিছুকে বোঝায়, তাকে ক্লীবলিঙ্গ বলে।

যেমন - সাইকেল, বাস, ট্রাম, কলম, টেবিল, চেয়ার, বই, ফুল, গাছ, চাঁদ, সূর্য ইত্যাদি।

উভয়লিঙ্গ :

শব্দের যে লক্ষণ দিয়ে স্ত্রী-পুরুষ উভয়কেই বোঝায় তাকে উভয়লিঙ্গ বলে।

কিছু কিছু শব্দ বা পদ আছে যেগুলির দ্বারা পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়কেই বোঝায়। এগুলিকে উভয়লিঙ্গ বলে।

যেমন -শিশু, সন্তান, বন্ধু, মন্ত্রী, রাজ্যপাল, রাষ্ট্রপতি ইত্যাদি।

আরও কিছু শব্দ আছে যেগুলি সবসময়ই পুংলিঙ্গবাচক বা স্ত্রীলিঙ্গবাচক হয়। এদের লিঙ্গ পরিবর্তন হয় না। এগুলিকে নিত্যপুংলিঙ্গা বা নিত্যস্ত্রীলিঙ্গ বলে। যেমন—

নিত্যপুংলিঙ্গ: অকৃতদার, বিপত্নীক, সভাপতি, রাষ্ট্রপতি, কবি, সাহিত্যিক, মানুষ, কবিরাজ, কাপুরুষ, বাজনদার ইত্যাদি।

নিত্যস্ত্রীলিঙ্গ: বিধবা, সাংবা, গর্ভবতী, প্রতিমা, অধীরা, প্রভা, রশুনি, তরণি।

লিঙ্গ পরিবর্তন :-

লিঙ্গ তিন প্রকার হলেও লিঙ্গ পরিবর্তন হয় পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রীলিঙ্গের মধ্যে। পুংলিঙ্গ থেকে স্ত্রীলিঙ্গে এবং স্ত্রীলিঙ্গ থেকে পুংলিঙ্গে রূপান্তরের নাম লিঙ্গান্তর বা লিঙ্গ পরিবর্তন।

লিঙ্গ-পরিবর্তনের নিয়মাবলি :-

লিঙ্গ-পরিবর্তনের সময় যে নিয়মগুলি প্রযোজ্য, তা হল-

(১) পুরুষ বা স্ত্রীবাচক পৃথক শব্দদ্বারা। যেমন—বাবা-মা, রাজা-রানি, ছেলে-মেয়ে ইত্যাদি।

(২) পুরুষবাচক শব্দের সঙ্গে বিভিন্ন স্ত্রী প্রত্যয় যোগ করে। যেমন— অনাথ-অন্যথা, ছাত্র-ছাত্রী, রজক-রজকি ইত্যাদি।

(৩) মূল শব্দের আগে স্ত্রী বা পুরুষ বাচক শব্দ বসিয়ে। যেমন— এঁড়ে বাছুর - বকনাবাচুর। মন্দা কুকুর - মাদি কুকুর ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ