কর্মধারয় সমাস কাকে বলে? কর্মধারয় সমাস কত প্রকার ও কি কি?

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে :-

কর্মধারয় শব্দটির ব্যুৎপত্তি হলো- কর্ম + ধৃ + ণিচ + আ = কর্মধারয়। এতে সমান বিভক্তিযুক্ত বিশেষণ ও বিশেষ্য পদের মিলন হয় এবং পরপদে বিশেষ্যের অর্থ প্রধান থাকে।

অর্থাৎ যে সমাসে বিশেষণ বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষণ ভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে বলা হয় কর্মধারয় সমাস।

যেমন- নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম, যে শান্ত সেই শিষ্ট = শান্তশিষ্ট, যা কাঁচা তাই পাকা= কাঁচাপাকা ইত্যাদি।

কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়। যেমন -

১. দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বোঝালে। যেমন- যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর।

২. দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে। যেমন- যিনি জজ তিনিই সাহেব= জজ সাহেব।

৩. কার্যে পরস্পরা বোঝাতে দুটি কৃত্তন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন – আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা

৪. পূর্বপদে সত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয়। যেমন সুন্দরী যে লতা - সুন্দরলতা, মহতী যে কীর্তি - মহাকীর্তি।

৫. বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে, 'মহৎ' ও 'মহান' স্থানে 'মহা' হয়। যেমন- মহৎ যে জ্ঞান- মহাজ্ঞান, মহান যে নবি - মহানবি।

৬. পূর্বপদে 'কু' বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্মরধ্বনি থাকলে 'কু' স্থানে 'ক' হয়। যেমন- কু যে অর্থ- কদর্থ, কু যে আচার - কদাচার।

৭. পরপদে 'রাজা' শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে 'রাজ' হয়। যেমন- মহান যে রাজা = মহারাজ।

৮. বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়। যেমন- সিদ্ধ যে আলু= আলুসিদ্ধ, অধম যে নর = নরাধম ।

কর্মধারয় সমাস কত প্রকার ও কি কি :-

কর্মধারয় সমাসে নিম্নোক্ত কয়েকভাগে ভাগ করা হয়েছে

১. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস :

যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ পায় তাকে বলা হয় মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।

যেমন- 

পল (মাংস) মিশ্রিত অন্ন = পলান্ন, 
সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন, 
প্রীতিসূচক উপহার = প্রীতিউপহার, 
মৌ আশ্রিত মাছি = মৌমাছি, 
সাহিত্য বিষয়ক সভা = সাহিত্যসভা, 
ঘরে আশ্রিত জামাই =ঘরজামাই, 
সাম্য বিষয়ক বাদ = সাম্যবাদ, 
স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি।

২. উপমান কর্মধারয় সমাস:

যার সাথে তুলনা করা হয় তাকে বলা হয় উপমান কর্মধারয় সমাস। উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলা হয় উপমান। উপমান ও উপমেয়ের একটি সাধারণ ধর্ম থাকবে।

যেমন- ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ = ভ্রমরকৃষ্ণকেশ। এখানে ভ্রমর উপমান এবং কেশ উপমেয়। কৃষ্ণত্ব হলো সাধারণ ধর্ম। সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।

যেমন- 

তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র, 
অরুণের ন্যায় রাঙা= অরুণরাঙা প্রভৃতি।

আরও পড়ুনঃ সমাসবদ্ধ শব্দ কাকে বলে?

উপমান কর্মধারয় সমাসের আরও কয়েকটি উদাহরণ নিমতিতা, মিশকালো বিড়ালতপস্বী, বজ্রকঠোর, ইস্পাতকঠিন, শশব্যস্ত, তুষারশীতল, কুসুমকোমল ইত্যাদি।

৩. উপমিত কর্মধারয় সমাস:

প্রত্যক্ষ বস্তুর সাথে পরোক্ষ বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয় বা উপমিত।

যেমন- 

মুখ চন্দ্রের ন্যায় = মুখচন্দ্র, 
পুরুষ সিংহের ন্যায় = পুরুষসিংহ, 
চরণ কোমলের ন্যায় = চরণকোমল, 
অধর কোমলের ন্যায় = অধরকোমল, 
ফুল বাবুর ন্যায়= ফুলবাবু, 
ফুল কুমারীর ন্যায়= ফুলকুমারী, 
কর কমল সদৃশ = করকমল, 
পদ পরবের ন্যায় = পদপল্লব ইত্যাদি।

৪. রূপক কর্মধারয় সমাস :

উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে তাকে বলা হয় রূপক কর্মধারয় সমাস। এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে 'রূপ' অথবা 'ই' যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়।

যেমন- 

মন রূপ মাঝি = মনমাঝি, 
বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু, 
ক্রোধ রূপ অন = ক্রোধানল, 
মন রূপ বাউল= মনবাউল, 
দিল রূপ দরিয়া = দিলদরিয়া, 
নীল রূপ পরিয়া = নীলদরিয়া, 
স্নেহ রূপ সুধা = দেহসুধা, 
প্রাণ রূপ পাখি = প্রাণপাখি, 
জীবন রূপ স্রোত = জীবনস্রোত, 
ক্রোধ রূপ অনল = ক্রোধানল, 
জীবন রূপ তরী = জীবনতরী, 
সংসার রূপ সাগর = সংসারসাগর, 
শোক রূপ অনল = শোকানল, 
ভব রূপ নদী = ভবনদী, 
ক্ষুধা রূপ অনল = ক্ষুধানল, 
শোক রূপ সিন্ধু= শোকসিন্ধু, 
সমর রূপ অনল = সমরানল ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ