ধ্বনির লোপ কাকে বলে? কত প্রকার ও কয়টি?

ধ্বনির লোপ কাকে বলে :-

ভাষার উচ্চারণে পরবর্তীকালে শব্দ থেকে কোনো ধ্বনি বর্জিত হ'লে তাকে বলা হয় ধ্বনির লোপ।

অথবা, শব্দ উচ্চারণের সময় অসাবধানতার জন্য, শ্বাসাঘাতের ফলে বা দ্রুততার কারণে কোনো শব্দের ধ্বনি ক্ষীণ হয়ে যায়, একেই বলে ধ্বনিলোপ‌।

স্বর-ব্যঞ্জন ভেদে এবং শব্দের স্থান ভেদে ধ্বনিলোপেরও ছটি সূত্র রয়েছে। সেগুলি হ'ল :

(ক) আদ্যস্বর লোপ :

স্বরধ্বনি দিয়ে শুরু, এমন শব্দের আদ্য স্বরধ্বনিটি যদি পরবর্তীকালের উচ্চারণে বাদ প'ড়ে যায়, তাহলে তাকে বলা হয় আদ্য স্বরলোপ।

যেমন, —আলাবু > লাউ, উদুম্বর > ডুমুর, উধার > ধার, অভ্যন্তর > ভিতর ইত্যাদি।

(খ) মধ্যস্বরলোপ :

উচ্চারণকালে শব্দের প্রথম স্বরধ্বনিতে শ্বাসাঘাতের ফলে পরবর্তী স্বরধ্বনির গুরুত্ব কমে যায় এবং এক সময় স্বরধ্বনিটি উচ্চারণ থেকে লুপ্ত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকেই বলে মধ্যস্বরলোপ। একে দ্ব্যক্ষর প্রবণতা এবং দ্বি-মাত্রিকতাও বলা হয়।

বাংলা ভাষায় এর প্রচুর দৃষ্টান্ত আছে। যেমন, গামোছা > গাম্‌হা, ঠাকুমা > ঠাকুমা, হলুদে > হলদে, তামাশা > তাশা, পলিতা > পলতে, জানালা-দরজা > জালা-দরজা ইত্যাদি।

আরও পড়ুনঃ উপধ্বনি বা পূরধ্বনি বা সহধ্বনি বা বিস্বম

(গ) অন্তস্বরলোপ :

শব্দের শেষ স্বরধ্বনিটি যদি উচ্চারণ কালে বর্জিত হয় এবং ভাষায় সেটা স্বীকৃত হয় তাহলে তাকে বলা হয় অন্ত্যস্বরলোপ।

যেমন, রাশি > রাশ, মাংস > মাস, সন্ধ্যা > সঙ্গা সাঁঝ, বন্ধ > বন্ধ, বাবা > বাপ, বসু > বোস্ ইত্যাদি।

(ঘ) আদ্যব্যঞ্জন লোপ :

স্বরধ্বনির মতো, কোনো কোনো শব্দের উচ্চারণে সূচনার ব্যান ধ্বনিও লুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় আদ্যব্যঞ্জন লোপ। সাধারণত, শব্দের আদিতে দুরুচ্চার্য যুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে তাদের একটি ধ্বনি উচ্চারণে লোপ পায়।

যেমন: হৃষিকেশ > রিষিকেশ, হৃদয় > রিদয়, শ্মশান > মশান (শশান ও হয়েছে), ক্ষেত্র > খেত্র, স্খালন > খালন, স্ফূর্তি > ফুর্তি ইত্যাদি।

(ঙ) মধ্যব্যঞ্জন লোপ :


শব্দের মধ্যবর্তী কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণ থেকে বাদ পড়ে গেলে সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মধ্যব্যঞ্জন লোপ।

যেমন, শৃগাল > শিয়াল, গুনাহগার > গুণাগার, শাহজাহান > সাজাহান, ফলাহার > ফলার ইত্যাদি।

(চ) অন্ত্য ব্যঞ্জন লোপ :

শব্দের শেষ ব্যঞ্জন ধ্বনিটি উচ্চারণ থেকে বর্জিত হ'লে সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অস্ত্য ব্যঞ্জন লোপ।

যেমন, চাকদহ > চাকদা, বাদশাহ> বাদশা, নিকাহ > নিকা ইত্যাদি। হ ধ্বনির লোপই এক্ষেত্রে লক্ষণীয়। শব্দমধ্যত্ব পাশাপাশি দুটি সমঅক্ষরের একটি উচ্চারণে বাদ দেবার প্রবণতাও বাঙালির আছে। 

যেমন- বড়দিদি > বড়দি, ছোটদাদা > ছোড়দা ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ