ধ্বনির আগম কাকে বলে? ধ্বনির আগম কত প্রকার ও কি কি?

ধ্বনি পরিবর্তনের সমস্ত কারণ গুলি মাথায় রেখে ভাষা বিজ্ঞানীরা ধ্বনি পরিবর্তনের ধারাকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন । এগুলি হল

(১) ধ্বনির আগম বা ধ্বন্যাগম

(২) ধ্বনির লোপ বা ধ্বন্যালোপ

(৩) ধ্বনির স্থানান্তর

(৪) ধ্বনির রূপান্তর।

এখন প্রশ্ন হলো ধ্বনির আগম বা ধ্বন্যাগম বলতে কি বুঝায় তা নিয়ে আলোচনা করা?

ধ্বনির আগম কাকে বলে :-

ভাষার উচ্চারণে পরবর্তী সময়ে কোনো শব্দের মধ্যে নতুন কোনো ধ্বনি এসে আশ্রয় নিলে তাকে বলা হয় ধ্বনির আগম।

ধ্বনি স্বর ও ব্যঞ্জন প্রধান দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। স্বভাবতই ধ্বনির আগমজনিত পরিবর্তন দু ধরনের হতে পারে – স্বরধ্বনির আগম ও ব্যঞ্জনধ্বনির আগম। এই নবাগত ধ্বনি শব্দের আদি-মধ্য-অন্ত ভেদে ধ্বনির আগমের ছ'টি সূত্র :

(ক) আদ্য স্বরাগম :

সাধারণত, শব্দের আদিতে শিস্ ধ্বনির সঙ্গে অন্যকোনো ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত অবস্থায় থাকলে উচ্চারণ কালে তার আগে ই বা আ ধ্বনি এসে যুক্ত হয়। একেই বলে আদ্যস্বরাগম।

যেমন—স্কুল > ইস্কুল। স্টেশন > ইস্টেশান, স্তাবল, > আস্তাবল, স্পর্ধা > আস্পর্ধা, স্ত্রী > ইস্তিরী ইত্যাদি।

(খ) মধ্য স্বরাগম :

শব্দ মধ্যস্থ যুক্ত ব্যঞ্জন উচ্চারণকালে উচ্চারণ প্রযত্ন লাঘব করতে যদি যুক্ত ব্যঞ্জন ভেঙে তার মধ্যে অন্য কোনো স্বরধ্বনিকে এনে বসানো হয়, তাহলে সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মধ্য স্বরাগম বা স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ।

বাংলা কাব্যভাষা ও গ্রাম্য উচ্চারণে এর প্রচুর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। যেমন, স্বপ্ন > স্বপন, রত্ন > রতন, প্রীতি > পিরীতি, ভক্তি > ভকতি, গ্রাম > গেরাম, গ্লাস > গেলাস, ক্রিম > কিরিম, প্লেট > পেলেট ইত্যাদি।


(গ) অস্ত্যস্বরাগম :

উচ্চারণকালে ব্যঞ্জনাস্ত শব্দের শেষে স্বরধ্বনির আগম ঘটলে তাকে বলা হয় অন্ত্য স্বরাগম।

বাঙালি শব্দান্তের যুক্ত ব্যঞ্জনের পরে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে আগ্রহী। তাই ভিন্ন ভাষার যে সকল শব্দ বাংলায় গৃহীত হয়েছে তাদের অন্তে যুক্তব্যঞ্জন থাকলে তার পরে একটি স্বরধ্বনি যোগ ক'রে দেওয়া হয়েছে।

যেমন—বে > বেঞ্চি, দোস্ত > দোস্তো, গিল্ট > গিল্টি, ট্যাক্স > টেক্‌সো ইত্যাদি।

(ঘ) আদ্য ব্যঞ্জনাগম :

স্বরধ্বনি দিয়ে শব্দের সূচনা এমন শব্দের আদিতে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি এসে আশ্রয় নিলে তাকে বলা হয় আদ্যব্যঞ্জনাগম।

সাধারণত, 'র' ধ্বনিরই এরূপ আগমন ঘটে। যেমন—উপকথা > রূপকথা, উই > রুই, ওঝা > রোঝা ইত্যাদি।

আরও পড়ুনঃ ধ্বনির স্থানান্তর কাকে বলে?

(ঙ) মধ্য ব্যঞ্জনাগম :

শব্দের মধ্যে নতুন কোনো ব্যঞ্জন ধ্বনি এসে যুক্ত হ'লে তাকে বলা হয় মধ্যব্যঞ্জনাগম।

এই মধ্যব্যঞ্জনাগমে সাধারণত, য়, ব, দ এবং হ—এই চারটি ধ্বনির আগম ঘটতে পারে। এদের শ্রুতিধ্বনিও বলা হয়। এদের দৃষ্টান্তও যথেষ্ট আছে।

যেমন -

য়-শ্ৰুতি : মা-এর > মায়ের, ভাই-এর > ভায়ের, কা-আ> কায়া।

ব-শ্ৰুতি : খা-আ > খাওয়া, যাআ > যাওয়া, মো-আ > মোওয়া, খা-আর > খাবার- খাওয়ার ইত্যাদি।

দ- শ্ৰুতি : বানর > বান্দর > বাঁদর, জেনারেল > জেন্দারেল > জাঁদরেল, ফারসি শব্দ তনুর > তন্দুর ইত্যাদি।

হ-শ্ৰুতি : বিপুলা > বিউলা > বেহুলা, বধূ > বউ + ড়ী > বহুড়ি ইত্যাদি।

(চ) অন্ত্যব্যঞ্জনাগম : 

উচ্চারণকালে শব্দের শেষে নতুন ব্যঞ্জন ধ্বনি এসে যুক্ত হ'লে তাকে অন্ত্যব্যঞ্জনাগম বলে। সাধারণত, আদরের সম্বোধনে এমনটা দেখা যায়।

যেমন, খোকা > খোকন, বাবা > বাবন, মা > মামন, ছোট > ছোটন ইত্যাদি। অন্যান্য ক্ষেত্রেও দু'একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, যেমন, বাঁধ > বাঁধাল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ