বিশেষণের অভিশায়ন কাকে বলে:-
দুই বা ততোধিক বিশেষ্য বা সর্বনামের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের অতিশায়ন ঘটে।বিশেষণ পদ যখন দুইবা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে।
যেমন- যমুনা একটি দীর্ঘ নদী, পদ্মা দীর্ঘতর, কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী । সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে তুলনায় সূর্য বৃহত্তম, পৃথিবী চন্দ্রের চেয়ে বৃহত্তর এবং চন্দ্র পৃথিবী অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।
বিভিন্নভাবে এই অভিশারনয়ে বিষয়টি সম্পাদিত হয়। নিচে তা নির্দেশ করা হলো। দুয়ের মধ্যে অভিশায়ন বোঝাতে দুইটি বিশেষ্য বা সর্বনামের মধ্যে হতে, থেকে, চেয়ে, অপেক্ষা, ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রথম বিশেষ্যটির সঙ্গে যষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) যুক্ত হয়।
যেমন গরুর থেকে ঘোড়ার নাম বেশি। বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান, প্রভৃতি। তবে, কখনও কখনও প্রথম বিশেষ্যের শেষের ষষ্ঠী বিভক্তিই হতে, থেকে, চেয়ে-র কাজ করে। যেমন : এ মাটি সোনার বাড়া (সোনার চেয়েও বাড়া। দুয়ের মধ্যে অভিশায়নে জোর প্রদানের জন্য মূল বিশেষণের পূর্বে 'অনেক', 'অধিক', 'বেশি', 'অল্প', 'কম', 'অধিকতর প্রভৃতি শব্দ যোগ করতে হয়। যেমন : পদ্মফুল গোলাপের চেয়ে বেশি সুন্দর। ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী প্রভৃতি।
আরও পড়ুনঃ শব্দার্থ পরিবর্তনের কারণ?
বহুর মধ্যে অভিশায়নে বিশেষণের পূর্বে সবচাইতে সর্বাপেক্ষা, সবথেকে সবচেয়ে সর্বাধিক, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যেমন:
তোমাদের মধ্যে করিম সবচেয়ে বুদ্ধিমান; পশুর মধ্যে সিংহ সর্বাপেক্ষা বলবান, প্রভৃতি । সংস্কৃত থেকে আগত বিশেষণের অতিশায়নের ক্ষেত্রে দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে "তর' এবং বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে 'তম' যোগ হয়। যেমন: গুরু- গুরুতর, গুরুতম। দীর্ঘ- দীর্ঘতর, দীর্ঘতম প্রভৃতি।
কখনও আবার দুয়ের মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে 'ইয়স' প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং বহুর মধ্যে তুলনা বোঝালে বিশেষণের শেষে 'ইউ' প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- লীয়ান ষ্ঠি - কণীয়ান কনিষ্ঠ বৃদ্ধ- জায়ান জ্যোষ্ঠ শ্রেয়- শ্রেয়ান- শ্রেষ্ঠ। উল্লেখ্য যে, দুয়ের তুলনায় এই নিয়মের ব্যবহার বাংলায় হয় না।
বাংলা শব্দের অতিশায়ন :-
👉 বাংলা শব্দের দুইয়ের মধ্যে অতিশায়নে চাইতে, চেয়ে, হইতে, হতে, অপেক্ষা, থেকে ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। যথা- গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি। বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান।
👉 কখনো কখনো শব্দে ষষ্ঠী বিভক্তি চেয়ে থেকে প্রভৃতি শব্দের কার্যসাধন করে। যেমন- এ মাটি সোনার বাড়া ।
👉 অতিশায়নে জোর দিতে বিশেষণের আগে অনেক, অধিক, বেশি, অল্প, কম, অধিকতর প্রভৃতি বিশেষণীয় বিশেষণ যোগ করতে হয়। যথা- ঘিয়ের চেয়ে দুধ বেশি উপকারী।
👉 বহুর মধ্যে অতিশায়নের ক্ষেত্রে সবচাইতে, সবচেয়ে, সবথেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার হয়, যথা- ভাইদের মধ্যে রাকিবই সবচাইতে বিচক্ষণ।
👉 'ঈয়স্' প্রত্যয়াস্ত কোনো কোনো শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ বাংলায় প্রচলিত আছে। যেমন- ভূয়সী প্রশংসা।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.