বাক্য পরিবর্তন কাকে বলে? বাক্য পরিবর্তনের নিয়ম?

বাক্য পরিবর্তন কাকে বলে :-

বাক্যের অর্থের পরিবর্তন না করে এক প্রকারের বাক্যকে অন্য প্রকারের বাক্যে পরিবর্তন বা রূপান্তর করার নামই বাক্য পরিবর্তন বা বাক্য রূপান্তর।

তবে বাক্য রূপান্তরের সময় মূল বাক্যের সাধু ও চলতি ভাষারীতি অপরিবর্তিত রাখা দরকার।

বাক্য পরিবর্তনের উদাহরণ -

পরিশ্রমী লোক সফলতা লাভ করে। -এর রূপান্তর হয় এভাবে যে পরিশ্রম করে সেই সফলতা লাভ করে।

বাক্য পরিবর্তনের প্রকারভেদ :-

বাক্যের পরিবর্তনকে তিনভাবে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা

১. গঠনগত পরিবর্তন।

২. ভাবগত পরিবর্তন এবং

৩. উক্তির পরিবর্তন।

নিচে বিভিন্ন প্রকার বাক্য পরিবর্তনের সূত্র ও উদাহরণ তুলে ধরা হলো-

আরও পড়ুনঃ লিঙ্গ কাকে বলে?

গঠনগত পরিবর্তন :-

১. সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র।

  • সরল বাক্যটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করতে হবে।
  • বাক্য দুটির প্রথমে সম্বন্ধসূচক অব্যয় (যদি তবে, যে-সে, যখন-তখন ইত্যাদি) ব্যবহার করতে হবে।
  • আশ্রিত খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যকে পরস্পর সাপেক্ষ করতে হবে।
  • বাক্য পরিবর্তিত হলেও মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

যেমন:

সরল: সত্যবাদীকে সবাই ভালোবাসে।
জটিল: যে সত্যবাদী, তাকেই সবাই ভালোবাসে।

সরল: বিদ্বান ব্যক্তিরা সম্মান পায়।
জটিল: যারা বিদ্বান, তারা সম্মান পায়।

সরল: ধনীরা প্রায় কৃপণ হয়।
জটিল: যারা ধনী, তারা প্রায়ই কৃপণ হয়।

সরল: আমি তোমাকে নিতে এসেছি।
জটিল: তুমি সেই, যাকে আমি নিতে এসেছি।

২. জটিল বাক্য থেকে সরল বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :

  • জটিল বাক্যকে একটি অংশে রূপান্তর করতে হয়।
  • প্রধান খণ্ডবাক্যকে পরিবর্তন না করে অপ্রধান বা আশ্রিত খণ্ডবাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিবর্তন করতে হয়।
  • অপ্রধান খণ্ডবাক্যকে সংকোচন করতে হয়।
  • সম্বন্ধসূচক অব্যয় বা সাপেক্ষ সর্বনাম পদের বিলুপ্তি ঘটাতে হয়।
  • একটি বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়।
  • বাক্য পরিবর্তন হলেও মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত থাকবে।

যেমন:

জটিল: যখন মেঘগর্জন করে, তখন ময়ূর নৃত্য করে।
সরল: মেঘগর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে।

জটিল: সে যদি কাল আসে, তবে আমি যাব।
সরল : সে কাল এলে আমি যাব।

জটিল: যে সকল পশু মাংস ভোজন করে, তারা অত্যন্ত বলবান।
সরল: মাংসভোজী পশুরা অত্যন্ত বলবান হয়।

জটিল: যে রক্ষক, সেই ভক্ষক।
সরল : রক্ষকই ভক্ষক।

৩. সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :

  • সরল বাক্যটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করতে হয়।
  • আশ্রিত বাক্যের অসমাপিকা ক্রিয়াকে সমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তর করতে হয়।
  • খণ্ডবাক্যগুলোকে সংযোজক, বিয়োজক ও ব্যতিরেকাত্মক প্রভৃতি অব্যয় দ্বারা যুক্ত করতে হয়।
  • বাক্যের পরিবর্তন হলেও বাক্যের অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।

যেমন:

সরল: আমি বহু কষ্টে শিক্ষালাভ করেছি।
যৌগিক : আমি বহু কষ্ট করেছি। তাই শিক্ষা লাভ করেছি।

সরল : দয়া করে সব খুলে বলুন।
যৌগিক : দয়া করুন এবং সব খুলে বলুন।

সরল : তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি।
যৌগিক : তার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি।

সরল : বিদ্বান হলেও তার অহংকার নেই।
যৌগিক : তিনি বিদ্বান তথাপি তার অহংকার নেই।

৪. যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :

  • বাক্য পরিবর্তন হলেও বাক্যের মূল অর্থের পরিবর্তন হয় না।
  • বাক্যটিকে একটি অংশে পরিণত করতে হয়।
  • প্রধান খণ্ডবাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রাখতে হয়।
  • আশ্রিত খণ্ডবাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হয়।
  • সংযোজক, বিয়োজক ও ব্যতিরেকাত্মক ইত্যাদি অব্যয় পদ থাকলে তা বর্জন করতে হয়।

যেমন:

যৌগিক বাক্য: সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি।
সরল বাক্য : সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।

যৌগিক বাক্য : তুমি আসবে এবং আমি যাবো।
সরল বাক্য: তুমি এলে আমি যাব।

যৌগিক: ছেলেটি গরিব কিন্তু মেধাবী।
সরল: ছেলেটি গরিব হলেও মেধাবী।

যৌগিক: আকাশে মেঘ ছিল না, কিন্তু বজ্রপাত হলো।
সরল: আকাশে মেঘ না থাকা সত্ত্বেও বজ্রপাত হলো।

আরও পড়ুনঃ শৈলীবিজ্ঞান কি?

৫. জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপন্তরের সূত্র :

  • জটিল বাক্যকে দুটি অংশে বিভক্ত করতে হয়।
  • সম্বন্ধসূচক অব্যয় পদ বিলুপ্ত হয়।
  • খণ্ডবাক্যগুলোকে স্বাধীন বা নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যে পরিণত করতে হয়।
  • সংযোজক, বিয়োজক ও ব্যতিরেকাত্মক অব্যয় ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাধীন বাক্যগুলো যুক্ত করতে হয়।

যেমন:

জটিল: তুমি যদি না খাও তবে আমিও খাব না।
যৌগিক : তুমি খাও, নইলে আমিও খাব না।

জটিল : যদিও রামলালের বয়স কম ছিল তথাপি তার দুষ্টবুদ্ধি কম ছিল না।
যৌগিক : রামলালের বয়স কম ছিল, কিন্তু দুষ্টবুদ্ধি কম ছিল না।

জটিল: যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।
যৌগিক: বিপদ ও দুঃখ একসাথে আসে।

জটিল : যেহেতু দোষ করেছো সেহেতু শাস্তি পাবে।
যৌগিক: দোষ করেছো অতএব শাস্তি পাবে।

৬. যৌগিক বাক্যকে জটিল বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :

  • বাক্যটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করতে হবে।
  • সংযোজক, বিয়োজক ও ব্যতিরোত্মক অব্যয় পদের বিলুপ্তি ঘটাতে হবে।
  • নিরপেক্ষ খণ্ডবাক্যগুলোর মধ্যে একটিকে প্রধান রেখে অন্যান্য খণ্ডবাক্যগুলোকে অপ্রধান বা আশ্রিত বাক্যে পরিণত করতে হবে।
  • নিরপেক্ষ বাক্য দুটির পূর্বে সম্বন্ধসূচক অব্যয় পদ ব্যবহার করতে হয়।

যেমন:

যৌগিক : মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, তবে পাস করতে পারবে।
জটিল: যদি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর, তবে পাস করতে পারবে।

যৌগিক : তুমি ধনী কিন্তু উদার নও।
জটিল : যদিও তুমি ধনী তবু উদার নও।

যৌগিক: ধর্মীদের নিজেদের গরজ আছে তাই তারা দারিদ্র্য সৃষ্টি করে।
জটিল : যেহেতু ধর্মীদের নিজেদের গরজ আছে, সেহেতু তারা দারিদ্র্য সৃষ্টি করে।

ভাবগত পরিবর্তন :-

১. অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :

  • বাক্যে না, নয়, নহে, নি, নেই, নাহি, নাই ইত্যাদি নর্থক অব্যয়যোগে অস্তিবাচক বাক্যের বিধেয় ক্রিয়াকে (সমাপিকা ক্রিয়া) নেতিবাচক করতে হবে।
  • হ্যাঁ-সূচক বাক্যকে না করতে হলে মুল অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্য পরিবর্তন করতে হবে।
  • বাক্যের বিশেষণ পদটিকে বিপরীত শব্দে রূপান্তর করতে হবে।
  • প্রয়োজন মত বাক্যের অন্য শব্দকে 'না' সূচক বাক্যের প্রয়োগের আওতাভুক্ত করতে হবে।
  • 'না' বাচক ক্রিয়া ও 'না' বাচক শব্দ বা 'না' বাচক অব্যয় মিলে বাক্যের অস্তিবাচক বা হ্যাঁ-সূচক ভাবটি বজায় রাখতে হয়।

যেমন:

অস্তিবাচক : হৈমন্তী চুপ করিয়া রহিল।
নেতিবাচক : হৈমন্ত্রী চুপ না থাকিয়া পারিল না।

অস্তিবাচক: পাখিটা মরল।
নেতিবাচক: পাখিটা বাঁচল না।

অস্তিবাচক : এভাবে সমাজ অচল হয়ে পড়ে।
নেতিবাচক : এভাবে সমাজ চলে না।

অস্তিবাচক: অনুপমার উচিত কাজ হয়েছে।
নেতিবাচক: অনুপমার অনুচিত কাজ হয়নি।

অস্তিবাচক: বাড়িটা তারা দখল করেছে।
নেতিবাচক : বাড়িটা তারা দখল না করে ছাড়েনি।

২. নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :

  • বাক্যে না, নয়, নহে, নি, নেই, নাহি, নাই ইত্যাদি নঞর্থক অবায় তুলে দিতে হয়।
  • শব্দের পরিবর্তন ঘটিয়ে বাক্যে হ্যা-সূচক ভাবটা ফুটিয়ে তুলতে হয়।
  • বাক্যের বিশেষণ পদটিকে বিপরীত শব্দে রূপান্তর করতে হয়।
  • প্রয়োজন মত নেতিবাচক শব্দের বাক্যাংশকে অস্তিবাচক শব্দ দ্বারা অস্তিবাচকে রূপান্তর করতে হয়।

যেমন:

নেতিবাচক : তারা যাবে না কোথাও।
অস্তিবাচক : তারা এখানেই থাকবে।

নেতিবাচক: আমি অন্য ঘরে যাব না।
অস্তিবাচক: আমি এ ঘরে থাকব।

নেতিবাচক: দেশের প্রচলিত ধর্মে কর্মে তাহার আস্থা ছিল না।
অস্তিবাচক: দেশের প্রচলিত ধর্মে কর্মে তাহার অনাস্থা ছিল।

নেতিবাচক : হৈম তাহার অর্থ বুঝিল না।
অস্তিবাচক: হৈম তাহার অর্থ বুঝিতে ব্যর্থ হইল।

৩. নেতিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :

  • নেতিবাচক বাক্যের না-সূচক শব্দ তুলে দিতে হয়।
  • মূল বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত থাকে।
  • নির্দেশক বাক্য হলে 'কি' এবং নঞর্থক বাক্য হলে 'নাকি', 'নয়-কি'-সহ জিজ্ঞাসার চিহ্ন (?) ব্যবহার করতে হয়।
  • না-সূচক অব্যয় তুলে দিয়ে হ্যাঁ-সূচক অর্থপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করতে হয়।
  • সাধারণত বর্তমান কালের ‘ল’, ‘ইল'-ক্রিয়া বিভক্তি থাকলে তার সঙ্গে আগে 'হয়' ক্রিয়া-বিভক্তি ব্যবহার করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ
 শব্দার্থ পরিবর্তনের কারণ?

যেমন:

নেতিবাচক : এতে দোষ নেই।
প্রশ্নবাচক : এতে দোষ কী?

নেতিবাচক : টাকায় সব হয় না।
প্রশ্নবাচক : টাকায় কি সব হয়?

নেতিবাচক : আর পথ নেই।
প্রশ্নবাচক: আর কি পথ আছে?

নেতিবাচক : পুলিশের লোক জানিবে না।
প্রশ্নবাচক : পুলিশের লোক জানিবে কী করিয়া?

৪. প্রশ্নবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র :

  • মূল অর্থ বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।
  • প্রশ্নবোধক অব্যয় ‘কি' তুলে দিতে হয়।
  • নেতিবাচক বা নঞর্থক না, নাই, নেই, নি, জানি না, বুঝি না ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়।
  • বাক্যটিকে নেতিবাচক ভাব ধারায় গঠন করতে হয়।

যেমন:

প্রশ্নবাচক : তারা কি পাষাণ?
নেতিবাচক: তারা পাষাণ কি না জানি না।

প্রশ্নবাচক : এ কেমন কথা?
নেতিবাচক : এ কেমন কথা জানি না।

প্রশ্নবাচক : তাহাদের গ্রামে ফিরিয়া আসা চলে কি?
নেতিবাচক: তাহাদের গ্রামে ফিরিয়া আসা চলে না।

প্রশ্নবাচক: সরস্বতী বর দেবেন কি?
নেতিবাচক: সরস্বতী বর দেবেন না।‌

৫. অস্তিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তরের সূত্র:

  • মৌলিক বা মূল অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।
  • কর্তার পরে প্রশ্নবাচক অব্যয় ব্যবহার করতে হয়।
  • ক্রিয়ার পরে নঞর্থক অব্যয় ব্যবহার করতে হয়।
  • বাক্য শেষে প্রশ্নবোধক জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) ব্যবহার করতে হয়।

যেমন:

অস্তিবাচক: ফুলকে সকলেই ভালোবাসে।
প্রশ্নবাচক : ফুলকে কি সকলেই ভালোবাসে না?

অস্তিবাচক: এরা অন্য জাতের মানুষ।
প্রশ্নবাচক : এরা কি অন্য জাতের মানুষ নয়?

অস্তিবাচক: শৈশবে তার বাবা মারা যান।
প্রশ্নবাচক : শৈশবে কি তার বাবা মারা যাননি?

অস্তিবাচক: বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।
প্রশ্নবাচক: বাংলাদেশ কি একটি উন্নয়নশীল দেশ নয়?

৬. প্রশ্নবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে পরিবর্তনের সূত্র :

  • মূল বা মৌলিক অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য পরিবর্তন করতে হয়।
  • প্রশ্নবাচক 'কি' অব্যয় বিলুপ্ত হবে।
  • নিরর্থক অব্যয় পদও বিলুপ্ত হবে।
  • জিজ্ঞাসা (?) চিহ্ন স্থানে দাঁড়ি (।) বসাতে হবে।

যেমন:

প্রশ্নবাচক : ভুল কি সকলেই করে না?
অস্তিবাচক: ভুল সকলেই করে।

প্রশ্নবাচক : একলা যেতে ভয় করবে না তো?
অস্তিবাচক : একলা যেতে ভয় করবে কি না জানতে চাই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ