বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ সহ?

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে :-

বহুব্রীহি শব্দটির ব্যুৎপত্তি হলো বহ (বুদ্ধি) + উ = বহু বৃহ + ই = ব্রীহি । এর অর্থ বহু ধান আছে যার এমন লোককে বোঝানো হয়। বাংলা ব্যাকরণে এটি সমাস রূপে পরিচিত।

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ প্রধানভাবে না বুঝিয়ে সমাসবদ্ধ পদটি অন্য কোনো অর্থ বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বরে।

যেমন- পোড়া কপাল যার = পোড়াকপাল। এখানে কপাল আক্ষরিক অর্থে আগুনে পুড়ে গেছে এমন কাউকে না বুঝিয়ে মন্দভাগ্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

আবার- বহুব্রীহি শব্দটি সমাসবদ্ধ। বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার বহুব্রীহি। এখানে 'বহু' কিংবা 'ব্রীহি' কোনোটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লোককে বোঝাচ্ছে। এখানে বহু ধান না বুঝিয়ে ধনী ব্যক্তিকে বোঝানো হচ্ছে। এ কারণে এ জাতীয় সমাসকে বহুব্রীহি সমাস বলা হয়।

বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যথা: আয়ত লোচন যার = আয়তলোচনা (সত্রী), মহান আত্মা যার = মহাত্মা, স্বচ্ছ সলিল যার = স্বচ্ছসলিলা, নীল বসন যার নীলবসনা, স্থির প্রতিজ্ঞা যার = স্থিরপ্রতিজ্ঞ, ধীর বুদ্ধি যার = ধীরবুদ্ধি।

"সহ' কিংবা 'সহিত' শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে 'সহ' ও 'সহিত' এর স্থলে 'স' হয়। যেমন : বান্ধবসহ বর্তমান = সবান্ধব, সহ উদর যার= সহোদর >সোদর। এরূপ সজল, সফল, সদৰ্প সলজ্জ, সকল্যাণ ইত্যাদি।
 
আরও পড়ুনঃ শব্দের অর্থবিস্তার কাকে বলে?

বহুব্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ, পত্নী, পুত্র, সত্রী ইত্যাদি শব্দ থাকলে এ শব্দগুলোর সঙ্গে 'ক' যুক্ত হয়। যেমন : নদী মাতা (মাতৃ) যার = নদীমাতৃক, বি (বিগত) হয়েছে পত্নী যার = বিপত্নীক। এরূপ – সত্রীক, অপুত্রক ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদে 'অক্ষি' শব্দের স্থলে 'অক্ষ' এবং 'নাভি' শব্দ স্থলে 'নাভ হয়। যেমন কমলের ন্যায় অক্ষি যার= কমলাক্ষ, পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ। এরূপ ঊর্ণনাভ ।

বহুব্রীহি সমাসে পরপদে 'জায়া' শব্দ স্থানে 'জানি' হয় এবং পূর্বপদের কিছু পরিবর্তন হয়। যেমন : যুবতী জায়া যার = যুবজানি (যুবতী স্থলে 'যুব' এবং 'জায়া' স্থলে জানি হয়েছে)।

বহুব্রীহি সমাসে পরপদে 'চূড়া' শব্দ সমস্ত পদে চূড়' এবং 'কর্ম' শব্দ সমস্ত পদে 'কর্মা' হয়। যেমন : চন্দ্ৰ চূড়া যার= চন্দ্রচূড়, বিচিত্র কর্ম যার = বিচিত্রকর্মা।

বহুব্রীহি সমাসে 'সমান' শব্দের স্থানে 'স' এবং 'সহ' হয়। যেমন: সমান কর্মী যে= সহকর্মী, সমান বর্ণ যার =সমবর্ণ, সমান উদর যাদের = সহোদর।

বহুব্রীহি সমাসে পরপদে 'গণ্য' শব্দ স্থানে 'গন্ধি' বা 'গন্ধা' হয়। যথা : সুগন্ধ যার= সুগন্ধি, পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার= পদ্মগন্ধি, মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার = মৎস্যগন্ধা।

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ :-

বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার। যথা

  1. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
  2. ব্যধিকরণ বহুব্রীহি
  3. ব্যতিহার বহুব্রীহি
  4. নঞ বহুব্রীহি,
  5. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
  6. অলুক বহুব্রীহি
  7. প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি ও
  8. সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।

সমানাধিকরণ বহুব্রীহি :

পরস্পর সম্বন্ধ বিশিষ্ট বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- 

  • দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যার= দৃঢ়প্রতিজ্ঞ; 
  • সমান জাতি যার = সজাতি; 
  • যুবতি জায়া যার =যুবজানি; 
  • নীল অর যার= নীলাম্বর ইত্যাদি।


ব্যধিকরণ বহুব্রীহি :

যে বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদ দুটি পৃথক বিভক্তি যুক্ত বিশেষ্য পদ হয়, তাকে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- 

  • অন্তে অপ যার =অন্তরীপ, 
  • পদ্ম পদে যার =পাদপদ্ম, 
  • পাপে মতি যার = পাপমতি; 
  • নদী মাতা যার =নদীমাতৃক ইত্যাদি।

ব্যতিহার বহুব্রীহি :

পরপর সাপেক্ষ ক্রিয়া বোঝালে একই পদের পুনরুক্তি দ্বারা যে বহুব্রীহি হয়, তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে।

এ সমাসে দ্বিরুক্ত পদের প্রথমটির শেষে 'আ' বা 'ও' এবঙ দ্বিতীয়টির শেষে 'ই' যোগ হয়। যেমন - 

  • রক্তে রক্তে যে লড়াই =রক্তারক্তি, 
  • কেশে কেশে আকষণ করে যে যুদ্ধ = কেশাকেশি, 
  • কানে কানে যে কথা =কানাকানি, 
  • লাঠিতে লাঠিতে যে মারামারি =লাঠালাঠি ইত্যাদি।

নঞ বহুব্রীহি :

বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে যে বহুব্রীহি সমাস হয় তাকে নঞ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- 

  • নেই শ্রী যার= বিশ্রী; 
  • বিগত হয়েছে শ্রদ্ধা যার = বীতশ্রদ্ধ; 
  • নেই ভয় যাতে = নির্ভয়: 
  • নাই বোধ যার = নির্বোধ ইত্যাদি।

মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি :

যে বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদ লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- 

  • পটল চিরলে যেমন গড়ন হয় তেমন =পটলচেরা; 
  • কপোতের অক্ষির মতো অক্ষি যার =কপোতাক্ষ, 
  • বিশ গজ পরিমাণ যার = বিশগজি, 
  • বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর =বিড়ালচোখী ইত্যাদি।

অলুক বহুব্রীহি :

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদের বিভক্তির লোপ হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীডিহ সমাস বলে। যেমন— 

  • গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= গায়ে হলুদ; 
  • হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= হাতেখড়ি; 
  • মাথায় পাগড়ি যার = মাথায় পাগড়ি; 
  • হাতে বেড়ি যার = হাতেবেড়ি ইত্যাদি।

প্রত্যয়াস্ত বহুব্রীহি :

যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয়, তাকে প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন- 

  • ঘরের দিকে মুখ যার = ঘরমুখো; 
  • দুই দিকে টান যার = দোটানা,
  • দুই তলা যার = দোতলা; 
  • এক দিকে চোখ যার = একচোখা ইত্যাদি।

সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি :

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ সংখ্যাবাচক ও পরপদ বিশেষ্য হয় এবং সমস্তপদটিতে বিশেষণ পদ বোঝায়, তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস বলে।

এ সমাসে সমস্তপদে 'ঈ', 'যা', 'আ', 'ই' যুক্ত হয়। যেমন- 

  • সে (তিন) তার যার =সেতার, 
  • এক দিকে রোখ যার = একরোখা, 
  • চৌ (চার) চালা যার =চৌচালা, 
  • দশ গজ পরিমাণ যার = দশগজি ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ