বহুবচন কাকে বলে?

বহুবচন কাকে বলে :-

যে শব্দরূপের দ্বারা বিশেষ্য বা সর্বনামের একাধিক সংখ্যা বোঝায় তাকে বহুবচন বলে।

অন্যভাবে বলা যায় যে শব্দ দিয়ে একের অধিক সংখ্যক বস্তু, ব্যক্তি বা প্রাণীর ধারণা পাওয়া যায়, তাকে বহুবচন বলে।

যেমন- ছেলেরা, মেয়েরা, মানুষগুলো, শিক্ষকগণ, তারাগুলি, বৃক্ষরাজি ইত্যাদি।

বহুবচন গঠনের নিয়মাবলি :-

১। রা, এরা, দের ইত্যাদি বিভক্তি যোগে। যেমন

  • ছেলেরা দল বেঁধে যাবে।
  • ওরা সব মৌমাছি।
  • মেয়েরা কোলাহল শুরু করে দিল।
  • "আমাদের মাথার ওপর বোমারু"।

২। শব্দের পরে গুলি, গুলা, গুলো যোগ করে। যেমন—

  • দিনগুলি কেটে গেল আনন্দে
  • "তারাগুলি নিয়ে বাতি/ জেগে ছিল সারারাতি।"
  • হাসগুলি ভেসে ভেসে করে কোলাহল।
  • গোরুগুলোর বড়ো দুর্গতি।

৩। শব্দের আগে বহুবচনাত্মক বিশেষণ, সংখ্যাবাচক বিশেষণ ও সর্বনামীয় বিশেষণ যোগে। যেমন—

  • অজস্র তারা উঠেছে আকাশে।
  • বহু দিন পরে এলে।
  • কিছুদিন এখানেই থাকব।
  • সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে যাব।

আরও পড়ুনঃ সমাসবদ্ধ শব্দ কাকে বলে?

৪। সমষ্টিবাচক শব্দ (কল, গগ, দল, বৃন্দ, বর্গ, মণ্ডলী, মহল) যোগে। যেমন—

  • পক্ষীকুল ধ্বংসের মুখে।
  • সদস্যবৃন্দ একমত হল।
  • আমরা ছাত্রদল।
  • শিক্ষকগণ আমাদের প্রন্থেয়।
  • পণ্ডিতবর্গ এ কথা সমর্থন করেন না।
  • বিজ্ঞানীমহলে শোরগোল পড়ে গেল।

৫। অপ্রাণীবাচক শব্দ (আবলি, শ্রেণি, রাজি, রাশি, মালা, পুঞ্জ, দাম ইত্যাদি) যোগে। যেমন—

  • রবীন্দ্র রচনাবলি এখন সুলভ মূলো পাওয়া যাচ্ছে।
  • হিমালয় পর্বতমালা পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ।
  • শ্যাওলাদামে সরোবরটি ভরে গেল।
  • দূরে বৃক্ষশ্রেণি দৃশ্যমান হল।
  • মেঘপুঞ্জ ফুঁসে উঠল।
  • রাজকন্যার কেশরাশি ছড়িয়ে পড়েছে।

৬। সব, সমূহ, সকল, লোক, ইত্যাদি দ্বারা উদাহরণ স্বরূপ-

  • "পাখিসব করে রব।”
  • "সকল দেশের সেরা ।"
  • নদীসমূহ সাগরে মিশেছে।
  • তখন দেবলোক কেঁপে উঠল।

৭। দ্বিত্ব শব্দ প্রয়োগে। যেমন—

  • "গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে।
  • গাছে গাছে ফুল ফুটেছে।
  • “দেশে দেশে মোর ঘর আছে।"
  • ঘরে ঘরে সর্দি কাশি।

৮। সমার্থক শব্দ প্রয়োগে। যেমন—

  • লোকজন কোলাহল করে উঠল।
  • জিনিসপত্র নিজ দায়িত্বে রেখো।
  • খাতাপত্র গুছিয়ে নাও।
  • ছেলেপিলে নিয়ে কোথায় চললেন?

৯। অসমাপিকা ক্রিয়ার দ্বিত্ব প্রয়োগে। যেমন—

  • বলে বলে মুখে ব্যথা হয়ে গেল।
  • সেই যুগে শুনে শুনে মনে রাখতে হত।
  • দেখে দেখে চোখে ধাঁধা লেগে গেল।
আরও পড়ুনঃ লিঙ্গ কাকে বলে?

১০। একবচনের দ্বারা বড়ুবচনের প্রয়োগ। যেমন

  • মানুষ মরণশীল। (মানুষেরা)।
  • গোরু চতুষ্পদ প্রাণী। (গোরুরা)
  • বাঘ তাড়ানোর জন্য লোক নিযুক্ত হল। (অনেক বাঘ)
  • চাকরি না পেয়ে তপন আজ ছেলে পড়াচ্ছে। (অনেক ছেলে)

১১. সংখ্যাবাচক বিশেষণ পদ প্রয়োগে। যেমন—

  • "হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি।"
  • কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হল।
  • লক্ষ লক্ষ লোক মেলায় চলেছে।
  • পাঁচ মাস বেকার হয়ে ঘুরছি।

১২। ক্রিয়াবিশেষণ যোগ করে। যেমন

  • দেখতে দেখতে মুষলধারে বৃষ্টি নামল।
  • ছেলেটি গোগ্রাসে ভাত গিলছে।

১৩। সংজ্ঞাবাচক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বস্তুবাচক, গুণবাচক ও ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যপদ দ্বারা। যেমন—

  • জেলেরা মাছ ধরছে। (অনেক মাছ)
  • গাছে ফুল ফুটেছে। (অনেক ফুল)
  • পাস করতে হলে বই পড়তে হবে। (অনেক বই)
  • চালগুলোয় পোকা ধরেছে। (নানান ধরনের চাল)
  • মনের ভাবগুলো প্রকাশ করা গেল না। (নানানরকম ডাব)
  • পতঙ্গদের গঠনসমূহ পর্যবেক্ষণ করা হল। (বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ)
  • পাশের পাড়ার পালেরা খুবই অবস্থাপন্ন। (পাল উপাধিকারী ব্যক্তিরা)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ