অর্থ সংকোচ কাকে বলে:-
একটি শব্দ আভিধানিক অর্থে একাধিক বস্তু বা ব্যাপকতর ধারণার দ্যোতক হতে পারে। কিন্তু এ অর্থ কালক্রমে সংকুচিত, সীমায়িত হয়ে যায় কিংবা গুটিয়ে যায়। একদা যে-শব্দ সমষ্টিদ্যোতক বা কারণজ্ঞাপক ছিল, সে-শব্দ অর্জিত অর্থের ক্ষেত্রে দ্যোতনা করে সংকুচিত হয়ে যায়।যখন কোনো শব্দ তার ব্যাপকতর অর্থ হারিয়ে কোনো সংকীর্ণ বা বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয় তখন তাকে অর্থের সংকোচ বলে।
প্রথমে কোনো শব্দের অর্থ যদি একাধিক বস্তুকে বা ব্যাপক ভাবেকে বোঝায়, এবং কালক্রমে যদি তার অর্থ পূর্ব প্রচলিত অর্থের কোনো একটিমাত্র বস্তু বা ভাবের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে ওঠে, তবে অর্থপরিবর্তনের সেই প্রক্রিয়াকে বলে অর্থসংকোচ। যেমন -
(১) 'অন্ন' একটি শব্দ। এর আদি অর্থ ছিল ভাত রুটি প্রভৃতি যে কোনো খাদ্য। এখন অর্থের সেই ব্যাপকতা হারিয়ে অন্ন মানে দাঁড়িয়েছে শুধু ভাত।
(২) 'মৃগ' একটি শব্দ। এর আদি অর্থ ছিল যে কোনো পশু। এখন শব্দটি তার এই অর্থ-ব্যাপকতা হারিয়েছে। এবং অর্থ দাড়িয়েছে হরিণ নামের এক বিশেষ পণ্ড।
আরও পড়ুনঃ সকর্মক ক্রিয়া কাকে বলে?
(৩) 'সম্বন্ধী' একটি শব্দ। এর প্রাচীন অর্থ ছিল বহু ব্যাপক—মার সঙ্গে সম্বন্ধ আছে সেইই সম্বন্ধী। এখন শব্দটি সেই ব্যাপক অর্থ হারিয়েছে। সংকর্ণী অর্থপেয়েছে স্ত্রীর ভাই বা শ্যালক।
(৪) সংস্কৃত থেকে আগত 'প্রদীপ' শব্দটি সবরকমের আলো বোঝাবার জন্য প্রস্তুত থাকলেও আমরা তার ব্যবহারসীমা কমিয়ে নিয়েছি একটি বিশেষ ধরনের আলোর ক্ষেত্রে, মাটি বা পিতলের বিশেষ পাত্রে তেল ও সলতে দিয়ে যে আলো জ্বালানো হয়।
অর্থসংকোচের আরও কিছু উদাহরণ নীচে আলোচনা করা হলো -
১. ভৃত্য একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ—ভরাণর যোগ্য, সংকুচিত অর্থ—চাকর।
২. গৃহস্থ একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ—গৃহে থাকে যে, সংকুচিত অর্থ—গ্রাম্য ধনী চাষি।
৩. অসুখ একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ নয় সুখ, সংকুচিত অর্থ—রোগ-বিকার।
৪. কৃষ্ণ একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ-কালো রঙ, সংকুচিত অর্থ-কানু বা কানাই।
৫. ঘাস একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ খাদ্য, সংকুচিত অর্থ- স্তূপ।
৬. মৃগ একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ— যে কোনো পশু, সংকুচিত অর্থ—হরিণ।
আরও পড়ুনঃ মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.