শব্দের অর্থবিস্তার বা অর্থপ্রসার কাকে বলে উদাহরণ সহ?

শব্দের অর্থবিস্তার বা অর্থপ্রসার কাকে বলে:-

শব্দের মূল অর্থ যখন কোনো কারণে তার উদ্দিষ্ট বস্তু বা ভাবকে অতিক্রম করে ওই প্রাথমিক বস্তু বা ভাব নিরপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার অর্থের প্রসার ঘটে। অর্থাৎ এটিকে আমরা অর্থসংকোচের ঠিক বিপরীত প্রক্রিয়া বলতে পারি। অর্থের সঙ্কীর্ণতা কালক্রমে অধিকতর বস্তু ও ব্যাপকতর ভাবপ্রকাশের উদ্দেশ্যে প্রসারিত হয়ে যায়।

যখন কোনো শব্দ তার বুৎপত্তিগত (সীমাবদ্ধ) অর্থ ত্যাগ করে ব্যাপকতর অর্থ গ্রহণ করে, তখন শব্দের সেই অর্থ পরিবর্তনকে শব্দের অর্থবিস্তার বা অর্থপ্রসার বা সম্প্রসারণ বলে ।

অন্যভাবে বললে, আভিধানিক মানে বা বাচ্যার্থ অতিক্রম করে সম্প্রসারিত ভাব ব্যক্ত করে কোনো বিশেষ শব্দ বস্তু বা ধারণার সীমাবদ্ধ অর্থ অতিক্রান্ত হয়ে ব্যপ্ত বা বিস্তারযুক্ত দ্যোতনা প্রকাশ পায়। একদা যে শব্দ সংকীর্ণ ভাব ব্যঞ্জিত করত, তা কালক্রমে ব্যাপকতর তাৎপর্যকে ব্যক্ত করে। তাকেই অর্থের প্রসার বা সম্প্রসারণ বলে। যেমনঃ

(১) 'গাঙ' একটি শব্দ। এর আদি অর্থ ছিল 'গঙ্গা নদী'। পরবর্তী কালে এর অর্থ পরিবর্তিত হলো 'যে কোনো নদী' এখন গাঙ মানে 'যে কোনো নদীর গুরুনো খাত'।

(২) 'তেল' একটি শব্দ। এর আদি তার্থ ছিল- 'তিলের নির্যাস বা তিল থেকে তৈরী নির্যাস'। এখন তেল মানে তিলের নির্যাস তো বটেই, তিলছাড়াও সরসে, বাদাম, নারিকেল, তিসি, রেড়ি, মহুয়া ইত্যাদি যেকোনো শস্যদানা থেকে তৈরী যে কোনো নির্যাস। এখন অভোজ্য কেরোসিন, পেট্রলকেও তেল বলি ।

(৩) তেমনি 'কালি' একটি শব্দ। এর আদি অর্থ চিল কালো রঙের তরল, যা দিয়ে লেখা হয়। এখন এর অর্থ প্রসারিত হয়ে দাঁড়িয়েছে লাল, নীল, সবুজ প্রভৃতি যে কোনো রঙের তরল।

(৪) অর্থ বিস্তারের আরও কিছু নমুনা

১. মধুর একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ—মধু-যুক্ত, সম্প্রসারিত অর্থ—সুস্বাদু।

২. ফলার একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ—খাদ্যই ফল, সম্প্রসারিত অর্থ—ফল-সহ অন্যান্য খাদ্য।

৩. তেল একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ- তিলজাত তরল নির্যাস, সম্প্রসারিত অর্থ-তিল, সর্যে, মসিনা ইত্যাদি জাত তরল নির্যাস।

৪. গবেষণা একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ খোঁজা, সম্প্রসারিত অর্থ—অনুপুঙ্খ তত্ত্বানুসন্ধান ।

৫. রাজ একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ—নৃপতি, রাজা, সম্প্রসারিত অর্থ—প্রধান (রাজপথ)।

৬. রাজ্য একটি শব্দ, এর বাচ্যার্থ—রাজার শাসিত দেশ, সম্প্রসারিত অর্থ—স্বাধীন দেশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ