অর্ধ-তৎসম শব্দ কাকে?
এই পোস্টে আমরা অর্ধ-তৎসম শব্দ কাকে বলে তা নিয়ে আলোচনা করব, তবে তার আগে অর্ধ-তৎসম শব্দ কোথা থেকে উৎপন্ন হলো সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।ভাষা হিসেবে বাংলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে এর শব্দ ভান্ডার। বিভিন্ন ভাষার শব্দ গ্রহণে এবং আত্মীকরণে বাংলা ভাষা অত্যন্ত উদার। তবে, এই ঔদার্য মূলত শব্দ-ভাণ্ডার পর্যায়েই সীমিত।
ভাষার সবচেয়ে ব্যবহারিক যে স্তর বাক্য, তাতে বাংলা ভাষা সবসময় নিজস্ব বিন্যাসরীতিই অনুসরণের পক্ষপাতী। অপরদিকে, ধ্বনির ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে, অন্য ভাষার অনেক ধ্বনি উচ্চারণের সামর্থ্য বাংলা ভাষীদের থাকলেও নিজস্ব ধ্বনি-ব্যবস্থার প্রতিই তারা আস্থাশীল।
কিন্তু শব্দের ক্ষেত্রে বিষয়টি মোটেই এরূপ নয়। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কারণে বিবিধ ভাষার শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে।
এ কারণে বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো : তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ।
এদের মধ্যে অর্ধ তৎসম, তদ্ভব ও দেশি বলতে যেসব শব্দকে বোঝায় সেসব শব্দকে 'খাটি বাংলা শব্দ নামেও অভিহিত করা হয়। বস্তুত, এগুলোকে বলা যেতে পারে বাংলা শব্দের উৎস অনুসারে শ্রেণিবিভাগ।
আবার শব্দের গঠনকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলা ভাষার শব্দকে মৌলিক ও সাধিত - এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
এছাড়া বাগর্থমূলক বিবেচনায় বাংলা শব্দকে যৌগিক শব্দ, রূঢ়ি শব্দ এবং যোগরূঢ় শব্দ – এই তিন ভাগে ভাগ করার রীতি চালু রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ অর্থ সংকোচ কাকে বলে?
তাহলে বলা যায় যে, বাংলা ভাষার শব্দকে মূলত তিনটি বিবেচনা অনুসারে শ্রেণিবিভক্ত করা যায়। এগুলো হলো :
ক. উৎস অনুসারে শ্রেণিবিভাগ:
খ. গঠন অনুসারে শ্রেণিবিভাগ;
গ. বাগর্থ অনুসারে শ্রেণিবিভাগ।
এখন প্রশ্ন হলো অর্ধ-তৎসম শব্দ কাকে বলে তা নিয়ে আলোচনা করা।
অর্ধ-তৎসম শব্দ কাকে :-
সংস্কৃতকে মানদণ্ড ধরে নিয়েই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে যে, সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত যেসব শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলো অর্ধ-তৎসম শব্দ।
অর্থাৎ যেসব শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (বৈদিক ও সংস্কৃত) থেকে মধ্যবর্তী স্তর প্রাকৃতের মাধ্যমে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং আসার পরে কিঞ্চিত পরিবর্তন ও বিকৃতি লাভ করেছে, সেগুলিকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে।
এই শব্দগুলো মানুষের মুখে মুখেই পাল্টেছে এবং এর থেকে এমন ধারণা করাও অসংগত হবে না যে, সাধারণ বাংলা ভাষী জনগণের আসলে সংস্কৃতকে অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদানের কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই তারা তাদের মতো করে সংস্কৃত অনেক শব্দকে সহজ করে নিয়েছে।
অর্ধ তৎসম শব্দের কয়েকটি উদাহরণ হলো: জ্যোৎস্না > জোছনা, শ্রাদ্ধ > ছেরাদ্দ, গৃহিণী > গিন্নী, বৈষ্ণব > বোষ্টম, কুৎসিত > কুচ্ছিত, কৃষ্ণ > কেষ্ট, ক্ষুধা > খিদে, রাত্রি > রাত্তির, ইত্যাদি।
অর্থাৎ যেসব শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (বৈদিক ও সংস্কৃত) থেকে মধ্যবর্তী স্তর প্রাকৃতের মাধ্যমে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং আসার পরে কিঞ্চিত পরিবর্তন ও বিকৃতি লাভ করেছে, সেগুলিকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে।
এই শব্দগুলো মানুষের মুখে মুখেই পাল্টেছে এবং এর থেকে এমন ধারণা করাও অসংগত হবে না যে, সাধারণ বাংলা ভাষী জনগণের আসলে সংস্কৃতকে অতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদানের কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই তারা তাদের মতো করে সংস্কৃত অনেক শব্দকে সহজ করে নিয়েছে।
অর্ধ তৎসম শব্দের কয়েকটি উদাহরণ হলো: জ্যোৎস্না > জোছনা, শ্রাদ্ধ > ছেরাদ্দ, গৃহিণী > গিন্নী, বৈষ্ণব > বোষ্টম, কুৎসিত > কুচ্ছিত, কৃষ্ণ > কেষ্ট, ক্ষুধা > খিদে, রাত্রি > রাত্তির, ইত্যাদি।
অর্ধ তৎসম শব্দের বৈশিষ্ট্য :-
অর্ধ তৎসম শব্দের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:- - অর্ধ তৎসম শব্দগুলি দুই অংশে বিভক্ত - একটি তৎসম অংশ এবং অপরটি অতৎসম অংশ। যেমন: সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়, উচ্চ-নীচ ইত্যাদি।
- - এই শব্দগুলির দুই অংশের মধ্যে বিরোধিতা থাকে। একটি অংশ অপর অংশের বিপরীত অর্থ বহন করে।
- - একই শব্দের দুই অংশের মধ্যে সম্পর্ক থাকে, একটি ছাড়া অপরটির অর্থ পূর্ণ হয় না।
- - অর্ধ তৎসম শব্দে দুই অংশের একই বাক্যাংশে ব্যবহার হয়।
- - একই শব্দের দুই অংশ একে অপরের পরিপূরক।
- - উভয় অংশের মধ্যে তুলনামূলক সম্পর্ক থাকে।
সংক্ষেপে, অর্ধ তৎসম শব্দগুলি বিপরীতার্থক দুটি শব্দের মিশ্রণ যা একই সাথে ব্যবহৃত হয় এবং একে অপরের পরিপূরক।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.