সাধিত ধাতু কাকে বলে? সাধিত ধাতু কত প্রকার ও কি কি?

ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক রয়েছে। এই দুটি অংশের মধ্যে ক্রিয়াবিভক্তিটি বাদ দিলে যে অপরিহার্য অংশটি বর্তমান থাকে, সেটিই হচ্ছে ধাতু।

আমরা জানি প্রকৃতি ও উৎপত্তি বিচারে বাংলা ধাতুসমূহকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে

ক) মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু (primary root)

খ) সাধিত ধাতু (derived root)

গ) যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু (compound root)

তাহলে সাধিত ধাতু হলো ধাতুর একটি ভাগ। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো সাধিত ধাতু কি তা নিয়ে আলোচনা করা।

সাধিত ধাতু কাকে বলে :-

যেসব ধাতু বিশ্লেষণ করলে অন্য একটি ধাতু বা নাম শব্দ এবং এক বা একাধিক প্রত্যয় পাওয়া যায় তাকে বলা হয় সাধিত ধাতু।

যে ধাতু বিশ্লেষণ করলে তার মূলে অন্য একটি ধাতু বা অন্য কোন শব্দ পাওয়া যায়, সে ধাতুকে সাধিত ধাতু বলে।

যেমন- দেখ+আ = দেখা, পড় + আ = পড়া, বল + আ = বলা ইত্যাদি।

আরও পড়ুনঃ সুরাঘাত ও সুরতরঙ্গ কাকে বলে?

সাধিত ধাতুর সঙ্গে কাল ও পুরুষবাচক বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। এখানে দেখ + আ + বর্তমান কালের সাধারণ নাম পুরুষের ক্রিয়াবিভক্তি য় = দেখায়। এরূপ শোনায়, বসায়, শেখায় ইত্যাদি।

সাধিত ধাতু কত প্রকার ও কি কি :-

গঠনরীতি ও অর্থের দিক থেকে সাধিত ধাতু তিন প্রকার। যথা

১) নাম ধাতু

২) প্রযোজক (ণিজন্ত ধাতু এবং

৩) কর্মবাচ্যের ধাতু।

১. নাম ধাতু:

সাধিত ধাতুর মধ্যে যেগুলো বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধনাত্মক শব্দ থেকে গঠিত হয়, সেসব ধাতুকে নাম ধাতু বলা হয়।

বিশেষ্য, বিশেষণ এবং অনুকার অব্যয়ের পরে আ প্রত্যয় যোগ করে নাম ধাতু গঠিত হয়। যেমন -লোকটি ঘুমাচ্ছে। এখানে ঘুম থেকে নাম ধাতু ঘুমা গঠিত হয়েছে।

নাম ধাতু গঠনের কয়েকটি নিয়ম নিচে দেয়া হলো

১ : সাধারণ বিশেষা বা বিশেষণে আ প্রতায় যোগ করে নাম ধাতু গঠন করা হয়। যেমন- লাঠি-লাঠা, দুখ-দুখা, রঙ্গ- রঙ্গা, বাহির-বাহিরা, বিষ-বিষা, জুতা- জুতো ইত্যাদি।

২. ড় বা ট প্রত্যয়াত্ত বিশেষ্যের পরে আ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নাম ধাতু গঠিত হয়। যেমন- আঁকড়- আঁকড়া, আঁচড়-আঁচড়া, দাবড়&দাবড়া, হাতড়- হাতড়া, চুমড়- চুমড়া ইত্যাদি ।

৩: লা বা র প্রত্যয়ান্ত বিশেষ্যের পরে আ প্রত্যয় যোগ করে নামধাতু গঠিত হয়। যেমন- আগল- আগলা, চুমর- চুমরা, হাঁকর- হাকরা, ডুকর- ডুকরা ইত্যাদি।

৪ : ম বা চ প্রত্যয়ান্ত বিশেষ্যের পরে অ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নাম ধাতু গঠিত হয়। যেমন- ঝলস-ঝলসা, ধামস-ধামসা, ভাঙ্গচ-ভাঙ্গচা ইত্যাদি।


২. প্রযোজক বা ণিজন্ত ধাতু:

মৌলিক ধাতুর পরে আ, ওয়া প্রত্যয় যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে বলা হয় প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু।

এই আ প্রত্যয় এখানে মূলত প্রেরণা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- কর + আ = এখানে করা একটি ধাতু।

বাক্যে প্রয়োগ- সেলিম কাজটি নিজে না করে অন্যকে দিয়ে করাবে।

অনুরূপভাবে, পড় + আ = পড়া, বাক্যে প্রয়োগ- তিনি ছেলেকে পড়াচ্ছেন।

৩. কর্মবাচ্যের ধাতু:

মৌলিক ধাতুর সঙ্গে আ প্রত্যয় যোগ করে কর্মবাচ্যের ধাতু গঠিত হয়। এটি বাক্যে ব্যবহারের সময় বাক্যের ক্রিয়াপদকে অনুসরণ করে ব্যবহৃত হয়।

যেমন - দেখ + আ = দেখা, বাক্যে প্রয়োগ- কাজটি ভালো দেখায় না।

হার + আ = হারা, বাক্যে প্রয়োগ- যা কিছু হারায় গিন্নি বলে কেষ্টা বেটাই চোর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ