অর্থের যোগান কাকে বলে :-
কোনো দেশে সরকার কর্তৃক প্রচলিত সকল প্রকার মুদ্রার সমষ্টিকে সাধারণ অর্থের যোগান (Supply of Money) বলা হয়।প্রচলিত মুদ্রা বলতে বাজার চালুর সকল প্রকার কাগজের নোট ও ধাতব মুদ্রার সমষ্টিকে বোঝায়। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকের চাহিদা আমানতে জমা অর্থ ও প্রচলিত মুদ্রা অন্তর্ভুক্ত। কারণ অর্থ জমাদানকারী চাহিদামাত্র চাহিদা আমানতের অর্থ পেতে পারে। কাজেই প্রচলিত অর্থ ও আমানতের সমষ্টিকে যোগান বলা হয়।
অবশ্য মেয়াদি আমানতে রাখা অর্থ পরিমাণকে ও বর্তমান কালে অর্থ যোগান বলা হয়। অবশ্য মেয়াদি আমানত রাখা অর্থের পরিমাণকে ও বর্তমান কালে অর্থ যোগানের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ অর্থ সরবরাহ বলতে জনগণের হাতের মুদ্রা, ব্যাংকে রক্ষিত চাহিদা আমানত এবং মেয়াদি আমানতের সমষ্টিকে বোঝায়।
অধ্যাপক Milton Friedman ও তাঁর অনুসারীরা অর্থ সরবরাহ বলতে জনগণের হাতের মুদ্রা, ব্যাংকে রক্ষিত চাহিদা আমানত এবং মেয়াদি আমানতের সমষ্টিকে বোঝান।
অধ্যাপক জে জিগালি (J G Gurley) এবং E S Shaw অর্থ সরবরাহকে ব্যাপক অর্থ নির্দেশ করেন। তাঁদের মতে, অর্থ সরবরাহ হলো জনগণের হাতের মুদ্রা, চাহিদা আমানত এবং বন্ড ও শেয়ারের সমষ্টি।
আরও পড়ুনঃ অর্থ কাকে বলে?
অর্থ যোগানের উপাদান :-
অর্থ যোগানের উপাদান হচ্ছে চারটি। যথা:১. কাগজের নোট বা কারেন্সি নোট (Paper Currency )
২. ধাতব মুদ্রা (Coin Money)
৩. চাহিদা আমানত (Demand Deposit) এবং
৪. মেয়াদি আমানত (Time Deposit )
নিম্নে অর্থের যোগানের উপাদানসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো।
১. কাগজের নোট বা কারেন্সি নোট :
একটি সময় কোনো দেশে সরকার এবং সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কর্তৃক ইস্যুকৃত সকল প্রকার কারেন্সি নোট অর্থে যোগানের অন্তর্ভুক্ত। সকল দেশে কারেন্সি নোট অর্থের যোগানের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
২. ধাতব মুদ্রা :
সরকার জনগণের লেনদেনের সুবিধার্থে বাজারে ধাতব মুদ্রা ইস্যু করে। এসব ধাতব মুদ্রা অর্থের যোগানের অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩. চাহিদা আমানত :
চাহিদা আমানত বলতে ব্যাংকে জমাকৃত গ্রাহকদের আমানতকে বোঝায়, যে আমানতের টাকা চাহিবামাত্র গ্রাহকদেরকে ব্যাংক দিতে বাধ্য থাকে, এ ধরনের আমানত যারা ব্যাংকে রাখে তা যেকোনো সময় নগদ অর্থে রূপান্তর করা যায় এবং লেনদেনের কাজেও চেক ইস্যু ব্যবহার করা যায়। যেমন- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে চেক ইস্যু করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লেনদেন করে। তাছাড়া বাংলাদেশসহ অন্যান্য অনেক দেশে চেকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
৪. মেয়াদি আমানত :
যেহেতু চাওয়ামাত্র দেনা পরিশোধের কাজে এই অর্থ ব্যবহার করা যায় না। তাই সংকীর্ণ অর্থে না হলেও বিস্তৃত অর্থের মেয়াদ আমানত অর্থ সরবরাহের উপাদান হিসেবে গণ্য হবে। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যে টাকা উঠানো যায় না তাকে মেয়াদি আমানত বলে। মোট অর্থ সরবরাহ (M) থেকে চাহিদা আমানত (DD) এবং জনগণের হাতের মুদ্রা (CU) বাদ দিলে যা থাকে, তাকে মেয়াদি আমানত (TD) বলা হয়।
অর্থ যোগানের নির্ধারক :-
একটি দেশে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ কারেন্সি, চাহিদা আমানত, মেয়াদি আমানত ও বন্ধক থাকে তার সমষ্টিকে বলা হয় অর্থের যোগান। অর্থের যোগান বিভিন্ন উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়, সেগুলোকে বলা হয় অর্থের যোগদানের নির্ধারক। নিম্নে অর্থের যোগানের নির্ধারকসমূহ আলোচনা করা হলো।১. কাগজি ও ধাতব মুদ্রা :
কাগজি ও ধাতব মুদ্রার পরিমাণ বাড়লে অর্থের যোগান বাড়ে। আবার কাগজি ও ধাতব মুদ্রার পরিমাণ কমলে অর্থের যোগান কমে।
২. মেয়াদি আমানত :
মেয়াদি আমানত বাড়লে চাহিদা আমানত কমে এবং অর্থের যোগানও কমে। আবার মেয়াদি আমানত কমলে চাহিদা আমানত বাড়ে এবং অর্থের যোগানও কমে।
৩. রিজার্ভ অনুপাত :
বাণিজ্যিক ব্যাংকের রিজার্ভ অনুপাত বাড়লে বা কমলে অর্থের যোগান যথক্রমে কমে বা বাড়ে।
৪. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ :
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লে অর্থের যোগান বাড়ে। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলে অর্থের যোগান কমে।
৫. বৈদেশিক ঋণ :
বৈদেশিক ঋণের নীতি বৃদ্ধি বা হ্রাস করলে দেশে অর্থের যোগান বৃদ্ধি এবং হ্রাস পায়।
৬. ঘাটতি ব্যয় নীতি :
অর্থনীতিতে সরকার ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে, বিশেষ করে ঘাটতি ব্যয় নীতি অনুসরণ করলে অর্থের যোগান বাড়ে। আবার সরকার বায়ের পরিমাণ হ্রাস করলে অর্থের যোগান কমে।
৭. ঋণনীতি :
সরকার ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে সম্প্রসারণমূলক ঋণনীতি গ্রহণ করলে বাজারে অর্থের যোগান বাড়ে। আবার সংকোচনমূলক ঋণনীতি গ্রহণ করলে অর্থের যোগান কমে।
উপরিউক্ত উপাদানগুলোর অনুকূল পরিবর্তনে অর্থের যোগান বাড়ে এবং প্রতিকূল পরিবর্তন হলে অর্থের যোগান কমে ।
আরও পড়ুনঃ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.