একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য?

একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাকে বলে :-

একচেটিয়া প্রতিযোগিতা এমন এক বাজার ব্যবস্থা যেখানে পূর্ণ প্রতিযোগিতা এবং একচেটিয়া বাজারের কতিপয় বৈশিষ্ট্য একযোগে পরিলক্ষিত হয়। এ বাজারে বিভিন্ন ফার্ম যেসকল দ্রব্য উৎপাদন করে তা সমজাতীয় হলেও অভিন্ন নয়। অর্থাৎ এ বাজারে উৎপাদিত দ্রব্যের মধ্যে কিছু ভিন্নতা থাকে। আর এই প্রব্যের পৃথকীকরণের মধ্যে একচেটিয়া বাজারের ধারণা পাওয়া যায়। আবার এ বাজারে বহুসংখ্যক বিক্রেতা থাকায় পূর্ণ প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্যও পরিলক্ষিত হয়।

সুতরাং, সমজাতীয় অথচ পৃথকীকৃত এসব দ্রব্য নিয়ে পূর্ণ প্রতিযোগিতা এবং একচেটিয়ার উৎপাদন সমন্বয়ে যে বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠে তাকে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে।

আরও পড়ুনঃ অর্থের যোগান কাকে বলে?

একচেটিয়া প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্য :-

নীচে একচেটিয়া প্রতিযোগিতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করা হলো।

১. বিক্রেতার সংখ্যা :

একচেটিয়া প্রতিযোগিতায় ফার্মের সংখ্যা খুব বেশি থাকে না। তবে এখানে বিক্রেতার সংখ্যা অনেক থাকে এবং অসংখ্য ক্রেতার নিকট দ্রব্য বিক্রি করা হয়। বাজারে মোট উৎপাদনের একটি নানা অংশ এক একটি ফার্ম উৎপাদন করতে পারে। ফলে কোনো ফর্মের পক্ষেই একক ভাবে পণ্যের মূল্যের উপর প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হয় না। তাই এ বাজারে ফার্মগুলো অনেক সময় দলভুক্ত থাকে।

২. দ্রব্যের পৃথকীকরণ :

একচেটিয়া প্রতিযোগিতায় উৎপাদিত দ্রব্যসমূহ অনেকটা সদৃশ হরেও পূর্ণ সমজাতীয় হয় না। একটিকে অপরটি থেকে পৃথক করা সম্ভব হয়। কারণ এখানে উৎপাদিত দ্রব্য সমূহ অনগত এবং বাহ্যিক দিক থেকে আলাদা হবার সম্ভাবনা থাকে।

৩. বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় খরচ :

একচেটিয়া প্রতিযোগিতায় প্রত্যেকটি ফার্ম তার বিক্রয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পণ্যের প্রচার ও বিক্রয়ের স্বার্থে বিজ্ঞাপন ব্যয় করে থাকে। এসব ফার্ম প্রয়োজনবোধে বিক্রয়জনিত বাখও বহন করে। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য এ বাজারে ফার্মগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়।

৪. গ্রুপ বা দলীয় ভারসাম্যের উপস্থিতি :

অধ্যাপক চেম্বারলিন এ বাজারে ফার্ম গুলোর সমন্বয়ে শিল্প না বলে দলীয় ভারসাম্য হিসেবে অভিহিত করেন। গ্রুপ বা দলীয় ধারণাটি অন্য কোনো বাজার কাঠামোতে লক্ষ করা যায় না।

৫. শিল্পে ফার্মের অবাধ প্রবেশ ও প্রস্থান :

এ বাজরে শিল্পে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো ফার্মের বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। আবার শিল্প হতে প্রস্থানের ক্ষেত্রেও কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। মুনাফা হলে নতুন ফর্ম বাজারে প্রবেশ করে আর ক্ষতি হলে পুরাতন ফার্ম বাজার হতে বের হতে পারে। এটি পূর্ণ প্রতিযোগিতার একটি বৈশিষ্ট্য যা একচেটিয়া প্রতিযোগিতারও বৈশিষ্ট্য।

৬. অনুকরণপ্রিয়তা :

এ বাজারে একটি ফার্ম অন্য একটি ফার্মকে সর্বদা অনুকরন করতে পারে। কিভাবে একটি ফার্ম তার দ্রব্যকে আকর্ষণীয় করছে তা অন্য একটি ফার্ম অনুকরণ করে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগির প্রব্যের মূল্যের সাথে তুলনা করে বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য অনেক সময় বিবেচ্য ফার্ম তার পণ্যের মূল্য হ্রাস করে।

৭. চাহিদা ও ব্যয় :

একচেটিয়া প্রতিযোগিতায় পণ্যের বায় পৃথকীকৃত করতে পারে। এখানে দ্রব্যের চাহিদা ও ব্যয় প্রায় একই থাকে।

৮. উপকরণ যোগান অসীম স্থিতিস্থাপক :

এ বাজারে পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় উপকরনের যোগান পর্যাপ্ত থাকে। এখানে উপকরনের কোনো ঘাটতি থাকে না।

৯. দীর্ঘকাল পরিস্থিতি :

দীর্ঘকালে পূর্ণ প্রতিযোগি ফার্ম যে ভাবে ভারসাম্য অর্জনের মাধ্যমে স্বাভাবিক মৃনাল অর্জন করে। ঠিক একই ভাবে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক ফার্মও দীর্ঘকালে স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে। তবে তাদের রেখাগত পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

এভাবে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ