মূল্য বৈষম্য কাকে বলে? মূল্য বৈষম্যের শর্তাবলী?

মূল্য বৈষম্য কাকে বলে :-

মূল্য বৈষম্য বলতে একই পণ্যের মূল্য বিভিন্ন ক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে গ্রহন বুঝায়। অর্থাৎ, কোনো দ্রব্যের মূল্য যদি গরিবদের নিকট থেকে কম নেয়া হয় আর ধনীদের নিকট থেকে বেশি নেয়া হয় তবে তা মূল্য বৈষম্য হবে।

একচেটিয়া কারবারি তার পণ্যের মূল্য বৈষম্য করতে পারে। যেমন, বাংলাদেশে ওয়াসা পানি সরবরাহ করে এবং পানির মূল্য নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে ওয়াসা যদি একচেটিয়া কারবারি হয় তবে ওয়াসা বাসায় পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে এক রকম নিল আর কারখানায় পানি ব্যবহারের বিল আলাদা হারে নিতে পারে। এভাবে মূল্য বৈষম্য হতে পারে।

মূল্য বৈষম্যের শর্তাবলী :-

একচেটিয়া কারবারি পণ্যের মূল্য বৈষম্য করতে পারে আবার নাও করতে পারে। তার পক্ষে সব সময় মূল্য বৈষম্য করা সম্ভব নাও হতে পারে, আর সম্ভব হলেও তা লাভজনক নাও হতে পারে। নিম্নোক্ত কারণে মূল্য বৈষম্য করা হয়।

(i) পূর্ণ প্রতিযোগিতা :

পূর্ণ প্রতিযোগী বাজারে মূল্য বৈষম্য সম্ভব নয়। কারণ প্রতিযোগিতা থাকলে বাজারে পণ্যের মূল্য একই থাকবে। তাই একচেটিয়া কারবারীর পক্ষে মূল্য বৈষম্য করা সম্ভব কারণ এখানে প্রতিযোগিতা নেই।

আরও পড়ুনঃ যোগান কাকে বলে?

(ii) দ্রব্যের প্রকৃতি :

কোন ক্রেতা যদি কম মূল্যের বাজার থেকে একটি পণ্য কম মূল্যে কিনে বেশি মূল্যের বাজারে বিজ্ঞপন করতে না পারে তবেই মূল্য বৈষম্য সম্ভব হবে। আবার একচেটিয়া কারবারি তার ইচ্ছামত মূল্য আদায় করতে পারে। যেমন একজন ডাক্তার একই সেবা দিয়ে গরীব রোগীদের কাছ থেকে কম ফি আর ধনী রোগীদের কাছ থেকে বেশী ফি আদায় করতে পারে। ডাক্তারের সেবাকেও অর্থনীতিতে দ্রব্য হিসাবে গণ্য করা হয়। ডাক্তারের সেবা হস্তান্তরযোগ্য বলে তার পক্ষে মূল্য বৈষম্য করা সম্ভব।

(iii) ক্রেতার ধরণ :

যখন বিভিন্ন শ্রেণীর ক্রেতা একই পণ্য ক্রয় করে তখন মূল্য বৈষম্য হয়। যেমন- রেলওয়ে বিভাগ একই ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর যাত্রীর কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের ভাড়া আদায় করে।

(iv) ভৌগোলিক দূরত্ব :

বিভিন্ন বাজারের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্বের ব্যবধান বেশী হলে মূল্য বৈষম্য সম্ভব হতে পারে। ভৌগোলিক দূরত্ব বেশী হলে কম মূল্যের বাজার থেকে বেশী মূল্যের বাজারে পণ্যের স্থানান্তর সম্ভব হ্যা। ফলে এরূপ পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্য বৈষম্য করা সম্ভব।

(v) দ্রব্য পৃথকীকরণ :

দ্রব্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে একজন বিক্রেতা মূল্য বৈষম্য করতে পারে। একই পণ্যে বিভিন্ন নাম বা লেভেল লাগিয়ে তার বিভিন্ন এককের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য তৈরী করে ক্রেতাদের মধ্যে অতিরিক্ত পছন্দনীয়তা সৃষ্টি করা হতে পারে। এর ফলে বিক্রেতা মূল্য বৈষমা করে।

(vi) কর বা শুল্ক :

অনেক সময় একজন বিক্রেতা আভ্যন্তরীণ বাজারে বেশী মূল্যে এবং বিদেশী বাজারে কম মূল্যে পণ্য বিজ্ঞনা করে। একে ডাম্পিং বলা হয়। পণ্যের উপর সরকার কর্তৃক আমদানি বা রপ্তানি শুল্ক ধার্য করা হলে দেশী ও বিদেশী বাজারে মূল্যের তারতম্য হয়। একচেটিয়া কারবারী ডাম্পিং (Dumping)-এর মাধ্যমে মূল্য বৈষম্য করে থাকে।

(vii) পণ্যের চাহিদা :

পণ্যের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতার বিভিন্নতার কারণে বিক্রেতার পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট পণ্যে মূল্য বৈষম্য করা সম্ভব। যেসব ক্রেতার কাছে পণ্যের চাহিদা বেশী স্থিতিস্থাপক তাদের কাছ থেকে বিক্রেতা বেশী মূল্য আদায় করতে পারে না। আবার যদি পণ্যের চাহিদার স্থিতিস্থাপকতা কম হয়, তাহলে বিক্রেতা ক্রেতার কাছ থেকে বেশী দাম আদায়ের চেষ্টা করে।

(viii) ক্রেতার অজ্ঞতা এবং অলসতা :

ক্রেতাদের অজ্ঞতা এবং অলসতার সুযোগেও বিক্রেতা মূল্য বৈষম্য করতে পারে। ক্রেতা যদি দ্রব্যের দাম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে তাহলে মূল্য বৈষম্য হতে পারে। অন্যদিকে ক্রেতা পণ্যের দাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া সত্ত্বেও সে আলস্যবশতঃ কম মূল্যের বাজারে না যেয়ে উচ্চ মূল্যের বাজারে যেতে পারে।

(ix) আইনগত ভিত্তি :

অনেক সময় আইনগত ভিত্তির জন্যও মূল্য বৈষম্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ তিতাস গ্যাস কোম্পানীর কথা বলা যেতে পারে। এ কোম্পানী গৃহের জন্য কম দামে এবং কল-কারখানার জন্য বেশী দামে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে।

দ্রব্যের ব্যাপারে ক্রেতাদের অতিরিক্ত পছন্দনীয়তা বা মোহ থাকলে মূল্য বৈষম্যকরণ হতে পারে। দ্রব্যের পৃথকীকরণ করে দ্রব্যের বিভিন্ন এককের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য সৃষ্টি করে বিক্রেতা। ক্রেতাদেরকে প্রভাবিত করতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, ক্রেতারা সামাজিক মর্যাদার জন্য উন্নত জায়গা থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকে। একজন ধনী ক্রেতা বঙ্গবাজার থেকে না কিনে এলিফেন্ট রোড থেকে একই দ্রব্য ক্রয় করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ