শ্বাসতন্ত্রের বা ফুসফুসের সাধারণ রোগসমূহ? ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ?

শ্বাসনালি সংক্রান্ত রোগ :-

ফুসফুস শ্বাসতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দুষিত বায়ু, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ অঙ্গটি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

অজ্ঞতা ও অসাবধানতার কারণে ফুসফুসে নানা জটিলতা দেখা যায় ও সংক্রমণ ঘটে। ফুসফুসের সাধারণ রোগগুলোর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও সাবধানতাগুলো অবলম্বন করে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান এমনকি মৃত্যু ঝুঁকিও অনেকাংশে কমানো যায়।

শ্বাসতন্ত্রের সাধারণ রোগসমূহ হলো-

  • এ্যাজমা বা হাঁপানী (Asthma),
  • নিউমোনিয়া (Pneumonia),
  • ব্রঙ্কাইটিস (Bronchitis), (Tuberculosis) এবং
  • ফুসফুসের ক্যান্সার (Lung cancer)

আরও পড়ুন:- শ্বাসতন্ত্রের প্রধান অংশসমূহ?

এ্যাজমা বা হাঁপানী :-

এটি ভাইরাসজনিত একটি রোগ। বায়ু দূষণ বা ধূমপানের কারণে দীর্ঘদিনের সর্দি, কাশি ও হাঁচি থেকে এক সময় স্থায়ীভাবে এ্যাজমা বা হাঁপানী রোগের সৃষ্টি হয়। বায়ুর সাথে ধোঁয়া, ধূলাবালি, ফুলের রেণু ইত্যাদি শ্বাস গ্রহণের সময় ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানী হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ঠান্ডায় সর্দি কাশি থেকে হাঁপানী হতে পারে।

লক্ষণ-

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়, ঠোঁট নীল হয়, গলার শিরা ফুলে যায়, রোগী জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে এবং বুকের ভেতর সাই সাই শব্দ হয়, কাঁশির সাথে মাঝে মাঝে সাদা কফ বের হয়, শ্বাস নেওয়ার সময় রোগীর পাঁজরের মাঝে চামড়া ভেতরের দিকে ঢুকে যায়, রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে, ফুসফুসের বায়ুথলিতে ঠিক মতো অক্সিজেন সরবরাহ হয় না বা বাধাগ্রস্থ হয়, ফলে রোগীর বেশি কষ্ট হয়।

প্রতিকার-

যে সব খাদ্য খেলে শ্বাস কষ্ট বেড়ে যায় সেগুলো না খাওয়া, পর্যাপ্ত আলো বাতাস পূর্ণ গৃহে বসবাস করা, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া ও সাবধানতা অবলম্বন করা, ধূমপান, সাদা পাতা, গুল, জর্দা ইত্যাদি ব্যবহার পরিহার করা। শ্বাসকষ্টের সময় রোগীকে তরল বা নরম খাদ্য খাওয়ানো, যে সকল জিনিসের সংস্পর্শ হাপানী বাড়ায় তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা, যেমন- পশুর লোম, কৃত্রিম আঁশ ইত্যাদি।

নিউমোনিয়া :-

দুর্বলদেহ অতি সহজেই রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় । নিউমোনিয়া একটি ফুসফুসের রোগ। এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ফুসফুস আক্রান্তহলে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এ রোগে ফুসফুসে এক প্রকার তরল পদার্থ জমা হয়।

কাঁশি, শ্বাস কষ্ট, বুকে ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি নিউমোনিয়া রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। শিশু এবং বয়স্কদের জন্য এটি একটি মারাত্মক রোগ।

আরও পড়ুন:- হৃদপিন্ড কাকে বলে?

নিউমোকক্কাস (Pneumococcus) নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগটি হয়।

লক্ষণ-

ফুসফুসে শ্লেষ্মা জাতীয় তরল পদার্থ জমে কফ সৃষ্টি হয়, দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়, চূড়ান্ত পর্যায়ে বুকের মধ্যে ঘড়ঘড় শব্দ হয় এবং মারাত্মক শ্বাসকষ্ট হয়।

প্রতিকার-

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর সুচিকিৎসা করা, তরল ও গরম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করা।

ব্রঙ্কাইটিস :-

শ্বাসনালির ভেতরে আবৃত ঝিল্লীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে প্রদাহের কারণে এ রোগ হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, স্যাঁতসেঁতে ধূলিকণা মিশ্রিত আবহাওয়া, ধূমপান করা এবং ঠান্ডার কারণে এ রোগ হতে পারে।

সাধারণত শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এ রোগটি একবার হলে বারবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লক্ষণ -

কাশির সময় রোগী বুকে অনেক বেশি ব্যথা অনুভব করে, জ্বর হয়, রোগী ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে, শক্ত খাবার খেতে পারে না, কাঁশি ও শ্বাস কষ্ট হয়। কাশির সাথে অনেক সময় কফ বের হয়।

প্রতিকার -

ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে চিকিৎসা নেয়া, রোগীকে সহনীয় পরিবেশে রাখা। যেমন- ঊষ্ণ ও শুষ্ক পরিবেশ, রোগীকে পূর্ণ বিশ্রাম নিতে দেয়া ও তরল খাবার খাওয়ানো।

যক্ষ্মা :-

যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ। যারা অধিক পরিশ্রম করে, দুর্বল, স্যাঁতসেঁতে বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে, অপুষ্ঠিতে ভোগে অথবা যক্ষ্মা রোগীর সাথে বসবাস করে তারা সহজে এ রোগে আক্রান্ত হয়।

যক্ষ্মা দেহের যে কোনো স্থানে হতে পারে। যেমন- অস্ত্র, হাড়, ফুসফুস ইত্যাদি। এ রোগের আক্রমণ ঘটলে সহজে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যখন জীবাণুগুলো দেহের রোগ প্রতিরোধক শ্বেত রক্তকণিকাকে পরাস্ত করে দেহকে দুর্বল করে তখনই এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

Mycobacterium tuberculosis নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্তহলে এ রোগ হয়।

লক্ষণ-

রোগীর ওজন কমতে থাকে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যায়, ঘুসঘুসে কাশি হয়, কখনও কখনও কাঁশির সাথে রক্ত যায়, রাতে ঘাম হ্যা, বিকেলের দিকে তার আসে, বুকে পিঠে ব্যথা হয়, অজীর্ণ ও পেটের পীড়া দেখা দেয়।

প্রতিকার-

এ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদী। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা বা হাসপাতালে পাঠানো অধিক নিরাপদ, রোগীর ব্যবহারের সব কিছু পৃথক রাখা উচিত, পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেলে এ রোগ সারানো সম্ভব। এ রোগ থেকে রেহাই পেতে শিশুদের বি.সি.জি টিকা দেওয়া হয়।

ফুসফুসের ক্যান্সার :-

সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। ফুসফুসের কতকগুলো কোষ কোনও কারণে উদ্দীপিত হয়ে অস্বাভাবিক ও অসংলগ্নভাবে বিভাজিত হয়ে শ্বাসনালীর মধ্যে বাঁধা সৃষ্টি করলে ফুসফুসের স্বাভাবিক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে অপারেশনের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

আমাদের দেশে পুরুষদের ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুস ক্যান্সার। ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ ধূমপান। এ ছাড়াও বায়ু ও পরিবেশ দূষণ এবং বাসস্থান বা কর্মক্ষেত্রে দূষণ ঘটতে পারে ইত্যাদির সংস্পর্শে আসার কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, যক্ষ্মা বা যে কোনো নিউমোনিয়া ফুসফুসে এক ধরনের ক্ষত সৃষ্টি করে পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়।

ধারণা করা হয় খাদ্য তালিকায় আঁশ জাতীয় খাদ্যের ঘাটতি এ রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

লক্ষণ-

ভগ্নস্বর, ওজন হ্রাস ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, হাঁপানী ও ঘন ঘন জ্বর হয়, হাঁড়ে ব্যথা অনুভব, দুর্বলতা, কোনও অস্থি অবশ হয়ে যাওয়া, জন্ডিস দেখা দেওয়া, দীর্ঘদিন ধরে খুসখুসে কাশি ও বুকে ব্যথা হয়, বারবার ব্রহ্মাইটিস বা নিউমোনিয়া দ্বারা সংক্রামিত হওয়া।

প্রতিকার-

রোগের লক্ষণগুলো দেখা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য থুথু বা শ্লেম্মা বিশ্লেষণ করা, বুকের এক্সরে করা, প্রয়োজনে রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োগ করা।

প্রতিরোধ-

ধূমপান ও মদ্যপান না করা, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পরিমাণ মতো শাকসব্জি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।

আমেরিকার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ট্রল এবং ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, বিভিন্ন প্রকার শাকসব্জি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ