স্ত্রী প্রজননতন্ত্র কাকে বলে :-
স্ত্রীদেহে যে তন্ত্রের সাহায্যে ডিম্বাণু উৎপাদন পুরুষ দেহ থেকে আগত শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণুর নিষেক, জাইগোট ও ভ্রুণ বিকাশ সম্পন্ন হয় তাকে স্ত্রী প্রজননতন্ত্র বলে।স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের অংশ:-
স্ত্রী প্রজননতন্ত্রে নিম্নলিখিত অংশগুলো থাকে-
প্রতিটি ডিম্বাশয় মেসোভেরিয়াম নামক পেরিটোনিয়াম দ্বারা আবৃত এবং পেলভিসের অভ্যন্তরে শক্ত দৃঢ় যোজক কলা দ্বারা আটকানো থাকে। প্রতিটি ডিম্বাশয় কর্টেক্স ও মেডুলা নিয়ে গঠিত।
কাজ - এখানে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় এবং স্ত্রী যৌন হরমোনসমূহ ক্ষরিত হয়।
আরও পড়ুন:- মূত্র কাকে বলে?
১. ডিম্বাশয় (Ovary):
একজোড়া ডিম্বাশয় স্ত্রী জননতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ। এদের আকৃতি উপবৃত্তাকার, কিছুটা কাঠ বাদামের মত। প্রতিটি পরিণত ডিম্বাশয় এর দৈর্ঘ্য ২.৫ থেকে ৫ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১.৫-৩ সেন্টিমিটার, পুরু প্রায় ১ সেন্টিমিটার।প্রতিটি ডিম্বাশয় মেসোভেরিয়াম নামক পেরিটোনিয়াম দ্বারা আবৃত এবং পেলভিসের অভ্যন্তরে শক্ত দৃঢ় যোজক কলা দ্বারা আটকানো থাকে। প্রতিটি ডিম্বাশয় কর্টেক্স ও মেডুলা নিয়ে গঠিত।
কাজ - এখানে ডিম্বাণু সৃষ্টি হয় এবং স্ত্রী যৌন হরমোনসমূহ ক্ষরিত হয়।
আরও পড়ুন:- মূত্র কাকে বলে?
২. ডিম্বনালি (Fallopian tube) :
জরায়ুর দু'পাশে অবস্থিত দুটি পেশল ও প্রায় ১২ সে. মিটার লম্বা নালি। ডিম্বনালির এক প্রান্ত ডিম্বাশয়ের কাছে পেরিটোনিয়াম গহ্বর ও অন্য প্রান্ত জরায়ু গহ্বরে উন্মুক্ত।ডিম্বনালির যে প্রান্তটি পেরিটোনিয়াম গহ্বরে উন্মুক্ত, তা ফানেল আকৃতির এবং এ প্রান্ত থেকে কতগুলো অভিক্ষেপ বের হয়ে ঝালর বা ফিমব্রি (Fimbriae) গঠন করে।
ডিম্বনালির কাজ-
ক। ডিম্বনালি ডিম্বাশয় থেকে পরিপক্ক ডিম্বাণুকে গ্রহণ করে জরায়ুতে পৌঁছে দেয়,খ। রস ক্ষরণ করে নিষেকের পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং
গ। এখানে নিষেক সংঘটিত হয়।
৩. জরায়ু (Uterus Womb) :
জরায়ু একটা ফাঁপা, পুরু প্রাচীর যুক্ত এবং পেশিগঠিত থলিকাকার অংশ। শ্রোণি গহ্বরে মূত্রাশয় ও মলাশয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। জরায়ুর প্রাচীর ৩টি স্তরযুক্ত, বাইরের স্তরকে পেরিমেট্রিয়াম (Perimetrium), মাঝের স্তরকে মায়োমেট্রিয়াম (Myometrium) এবং অন্তঃস্তরকে এন্ডোমেট্রিয়াম (Endometrium) বলে।এন্ডোমেট্রিয়ামে জাইগোটের সংস্থাপন ঘটলে গর্ভধারণ হয়। জরায়ুর উপরের প্রশস্ত অংশকে জরায়ুদেহ (Body of uterus) এবং নিচের সংকীর্ণ ভাগকে জরায়ু গ্রীবা বা সারভিক্স (Cervix) বলে।
জরায়ু দু'পাশে দুটি ডিম্বনালি এবং পিছনে যোনির সাথে সংযুক্ত থাকে। সারভিক্সের সরু পথে বীর্যরস জরায়ুতে প্রবেশ করে।
জরায়ুর কাজ-
ক। জরায়ুতে নিষিক্ত জাইগোট প্রতিস্থাপিত হয় এবং এখানেই ভ্রূণের বিকাশ ঘটে,খ। জরায়ুর প্রাচীর থেকে অমরা গঠিত হয়,
গ। অমরার মাধ্যমে ভ্রূণের পুষ্টি, রেচন ও শ্বসন সম্পন্ন হয়।
আরও পড়ুন:- সিন্যাপস কাকে বলে?
৪. যোনি (Vagina) :
মূত্রনালির নিচ দিয়ে প্রসারিত ৮-১০ সেন্টিমিটার লম্বা নলাকার খাদকে যোনি বলে। এর এক প্রান্ত জরায়ুতে এবং অন্য প্রান্ত দেহের বাইরে উন্মুক্ত থাকে।যোনির প্রাচীরে রুগী নামক অসংখ্য ভাঁজ থাকে। দুটি মাংসল ভাঁজ কপাটের মত যোনিপথে ঢেকে রাখে। এদের লেবিয়া মেজরা (Labia majora) ও লেবিয়া মাইনরা (Labia minora) বলে।
লেবিয়া মেজরার উপরের দিকে একটি ছোট মাংসপিণ্ড থাকে। একে ক্লাইটোরিস বলে। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ।
যোনির কাজ-
ক। সঙ্গমের সময় যোনি শিশু গ্রহণ করে,
খ। বীর্য স্খলনের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তেজনা প্রদান করে এবং স্থলিত বীর্য গ্রহন করে,
গ। এর প্রাচীর থেকে মিউকাসযুক্ত পিচ্ছিল পদার্থ নিঃসৃত হয়ে সঙ্গমকে আনন্দময় করে এবং
ঘ। সন্তান প্রসবের সময় এটি প্রসারিত হয়ে প্রসবকে সহজ করে।
স্ত্রী সেক্স হরমোনের প্রভাব :-
স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ডিম্বাশয় থেকে প্রধানতঃ দু'ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। যথা- ইস্ট্রোজেন ( Oestrogen) ও প্রোজেস্টেরন (Progesterone)।ইস্ট্রোজেন মেয়েদের যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায় এবং মাসিক বা ঋতুচক্র ও স্তনগ্রন্থির বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রোজেস্টেরন জরায়ুর প্রাচীরকে ভ্রূণ ধারণ উপযোগী করে এবং গর্ভাবস্থায় স্তনগ্রন্থির বিকাশ ঘটায়।
আরও পড়ুন:- ফার্মেন্টেশন কি?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.