বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে? বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য, গুরুত্ব ও নীতিমালা?

এক কথায়, বাণিজ্যিক স্বার্থে যে সকল ব্যাংক গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।

ব্যাংক বলতে মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংককেই বুঝায়। বাণিজ্যিক ব্যাংককে কেন্দ্র করেই আধুনিক ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের ধারণা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পূর্বসূরি হলো প্রাচীনকালের মহাজন, বণিক, স্বর্ণকার ও সাহকার শ্রেণীর লোক।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংজ্ঞা :-

অধ্যাপক রোজার বলেছেন, যে ব্যাংক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে অর্থ এবং অর্থের মূল্য নিয়ে কারবার করে, তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। ছোট হলেও এ সংজ্ঞাটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পুরো পরিচয় বহন করে।

অর্থনীতিবিদ গিলবার্টের মতে, "অর্থ ও মূলধনের মধ্যস্থ কারবারী হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংক শর্ত সাপেক্ষে এক পক্ষ থেকে ঋণ গ্রহণ করে অন্য পক্ষকে ঋণ দান করে।"

বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য :-

বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে এর কতিপয় লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে। নিচে বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবরণ দেওয়া হলো

১. সংগঠন :

বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত যৌথমূলধনী কিংবা সমবায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক দেশে রাষ্ট্রীয় আইন বলে বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপিত হয়। যেমন, আমাদের দেশে স্বাধীনতার পরপর বিশেষ আইন জারি করে সরকারি মালিকানায় ছয়টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক।

আরও পড়ুনঃ মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে?

২. মালিকানা :

বাণিজ্যিক ব্যাংক বেসরকারী কিংবা সরকারী যে কোন ধরনের মালিকানা বিশিষ্ট হতে পারে। বেসরকারী এবং সরকারী যৌথ মালিকানায়ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়।

৩. সদস্যের সীমাবদ্ধতা :

যৌথ মালিকানায় বানিজ্যিক ব্যাংকের ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা হলো সাত জন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা অনুমোদিত মূলধন ও প্রতিটি শেয়ারের নামিক মূল্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। (পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে)।

অংশীদারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা কিন্তু দশ জনের বেশি হতে পারে না।

৪. প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য :

বাণিজ্যিক ব্যাংক একক ব্যাংকিং বা যে কোন প্রকৃতি বিশিষ্ট হতে পারে। বর্তমানে একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কোথাও একক ব্যাংকিং ব্যবস্থার অস্তিত্ব নাই। পৃথিবী জোড়া শাখা ব্যাংকিং ব্যবস্থাই প্রসার লাভ করেছে। আমাদের দেশে শাখা ব্যাংকিং-এর প্রচলন রয়েছে।

৫. ঋনের ব্যবসায়ী :

বাণিজ্যিক ব্যাংকের আরেকটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ঋণের ব্যবসায়ী, পন্যদ্রব্যের ব্যবসায়ী নয়। এটি অর্থের কারবার করে, অন্য কিছুর নয়। ব্যাংক অর্থ ছাড়া অন্য কিছুর ব্যবসা করতে পারে না।

৬. মুনাফা অর্জন :

মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে মুলতঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফার সাথে সাথে জনকল্যাণের প্রতিও যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করে। এ কারণে প্রায় বছর সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মূলধন ভর্তুকি দিতে হয়।

৭. ব্যবসায়ের উপাদান :

বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবসায়ের প্রধান উপাদান হলো টাকা-পয়সা। টাকা-পয়সা লেনদেন করা এর মুখ্য কাজ। এ জন্য বলা হয়, ব্যাংকের Input ও output উভয়ই টাকা।

৮. আমানত গ্রহণ :

বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা আমানত হিসাবে গ্রহণ করে। আমানতী টাকা লগ্নী করে মুনাফা অর্জন করে।

৯. ঋণ সৃষ্টি :

বাণিজ্যিক ব্যাংক জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের পাশাপাশি ঋণ মঞ্জুরের মাধ্যমে ঋণ সৃষ্টি করে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য :-

নিচে বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হল:

১. মুনাফা অর্জন :

মুনাফা অর্জন করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য। এ কারণেই এই ব্যাংকের নাম বাণিজ্যিক ব্যাংক। কম সুদের বিনিময়ে আমানত গ্রহণ করবে এবং বেশি সুদের বিনিময়ে টাকা খাটিয়ে মুনাফা অর্জন করাই বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য।

২. উন্নয়নে অংশগ্রহণ :

আমানতের অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে দেশে উৎপাদন এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

৩. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে কাজ করা :

যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে এর পক্ষে কাজ করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

৪. সামাজিক অবদান :

অর্জিত মুনাফার একটি অংশ সমাজ গঠনমূলক কাজে ব্যয় করা তাদের একটি উদ্দেশ্য। ব্যাংকের এই কাজকে CSR বা Corporate Social Responsibility নামে পরিচিত।

৫. মূলধন গঠন :

সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে ব্যাংক আমানতের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের জন্য ঋণ দেয়। দেশে মূলধন গঠনে সাহায্য করা এবং সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি প্রধান উদ্দেশ্য।

৬. বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন :

ব্যাংক অগ্রাধিকারযুক্ত খাতে অর্থায়ন করে সরকারের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে। এভাবে শিল্পায়ন তত্ত্বান্বিত হয়।

৭. মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ :

মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সাহায্য করা বাণিজ্যিকের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

৮. কর্মসংস্থান :

শ্রমনির্ভর প্রযুক্তিতে অর্থায়ন করে ব্যাংক অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সরকারকে সাহায্য করে।

৯. গ্রাহকের অর্থের নিরাপত্তা :

গ্রাহকের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর নিরাপত্তা প্রদান করা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। আমাদের সমাজে নিজের কাছে বা বাসায় অনেক অর্থ, সোনা-গহনা বা অন্যান্য মূলবান সামগ্রী রাখা নিরাপদ নয়। এসব সামগ্রী নিরাপদে গচ্ছিত রাখা ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য। নিরাপদে অর্থ হস্তান্তর করাও ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য ৷

১০. উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা :

গ্রাহককে ব্যবসায়িক ও আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :-

উন্নয়নশীল দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের গুরুত্ব সর্বাধিক। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরে বাণিজ্যিক ব্যাংক কিভাবে সহায়তা করে তা নিচে আলোচনা করা হলো -

১. মূলধন গঠন :

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জনগণের বিক্ষিপ্ত সফল সংগ্রহ করার মাধ্যমে মূলধন গঠনে সাহায্য করে। মূলধন দেশের অর্থনৈতিক প্রগতির জন্য অপরিহার্য। বাণিজ্যিক ব্যাংক মূলধন গঠন করে। প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসায়ীদের সাহায্য করে এবং পরোক্ষভাবে জাতীয় অর্থনীতির ঢাকাকে সচল রাখে।

২. সঞ্চয়ে অনুপ্রাণিতকরণ :

দেশের অভ্যন্তরে মূলধন গঠন করে শিল্পখাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণকে সঞ্চয় বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতী টাকার উপর অধিক হারে সুদ প্রদান করে জনসাধারণকে টাকা-পয়সা সময় করতে উদ্বুদ্ধ করে। এ ছাড়াও, আমানতী টাকা হেফাজতে রাখার নিশ্চয়তা দেয় ফলে জনসাধারণ সঞ্চয় বাড়াতে উৎসাহ পায়।

৩. কৃষির উন্নয়ন :

বর্তমানে অনেক দেশে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে, বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষিখাতের উন্নয়নের জন্য কৃষি ঋণ সরবরাহ করে। কৃষি ঋণ প্রদানের ফলে কৃষকেরা ভালোভাবে কৃষির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করতে পারে। এতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কৃষক শ্রেণির জীবন ধারণের মানের উন্নতি হয় ।

৪. আঞ্চলিক উন্নয়ন :

অর্থনৈতিক প্রগতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া। উন্নয়নশীল দেশে একথা সর্বাধিক সত্য। কারণ এসব দেশে অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন সর্বদাই পরিদৃষ্ট হয়। অর্থনীতির উন্নয়নের সাথে সাথে শুধু শিল্পের জন্যই অর্থসংস্থানের দরকার হয় না, কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও এর প্রয়োজন। অর্থনীতির এ জটিল প্রক্রিয়ার নাড়িবিন্দু হলো বাণিজ্যিক ব্যাংক।

৫. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সহায়তা :

বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদান করে, অর্থ স্থানান্তরে সাহায্য করে এবং আরও বিবিধ কর্ম সম্পাদন করে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে অপরিসীম সহায়তা করে থাকে।

বাণিজ্যিক ব্যাংক না থাকলে ব্যবসা বাণিজ্যে নিঃসন্দেহে স্থবিরতা সৃষ্টি হতো। ব্যাংক জনগণের সঞ্চয় গ্রহণ করে দেশের এক প্রাপ্ত হতে অন্য প্রান্তে স্থানান্তরিত করে। যেখানে তহবিল নিষ্ক্রিয় থাকে সেখান থেকে তা সংগ্রহ করে বাণিজ্যিক ব্যাংক এটিকে অন্যত্র উৎপাদনশীল কার্যে বিনিয়োগ করে। এভাবে ব্যাংক আন্তঃআঞ্চলিক উন্নয়ন ক্ষেত্রে সমতা আনয়নে সহায়তা করে।

৬. আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে অর্থ-সংস্থান :

রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংক যথেষ্ট সহায়তা করে। বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থ-সংস্থান ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে পরিণত হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক শুধু রপ্তানির দলিলপত্র ও প্রত্যয়পত্রের (এল / সি) স্থানান্তর এবং পরামর্শ প্রদান নিয়েই ব্যস্ত থাকে না। রপ্তানি ক্ষেত্রে অর্থ-সংস্থান ছাড়াও বিদেশী বাজার ও খরিন্দার সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করে।

৭. দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা :

বর্তমানে পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও মারাত্মক আকারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতি যাতে বাস্তবায়িত হতে পারে, সে জন্য সহযোগিতা করে থাকে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি :-

১. আমানত গ্রহণ :

বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সফর আমানত হিসেবে গ্রহণ করে। এটা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল কাজ।

২. ঋণ প্রদান :

ঋণ প্রদান করা ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ ঋণ দিয়ে ব্যাংক একদিকে যেমন উৎপাদনমুখী কাজে সহায়তা করে, অন্যদিকে সে ঋণের উপর যে সুদ আদায় করে তা ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস।

৩. ঋণ আমানত :

সৃষ্টি ঋণ গ্রহণের সময় গণগ্রহীতাকে ঐ ব্যাংকের সাথে একটি হিসাবে জমা রাখে। সেই হিসাব থেকে উত্তোলন করে, সেটা ওই হিসাবে ডেবিট করা হয়। এভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আমানতের সৃষ্টি করে।

৪. বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি :

ব্যাংক চেক বিনিময় বিল, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে। কারণ এ গুলোর মাধ্যমে লেনদেন করা যায়।

৫. মূলধন গঠন :

জনগণের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়গুলো আমানতের মাধ্যমে একত্রিত করে ব্যাংক মূলধন গঠন করে থাকে।

৬. আমদানি-রপ্তানি সাহায্য :


বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে আমদানি রপ্তানি সাহায্য করা ব্যাংকগুলোর অন্যতম কাজ। আবার প্রত্যয় পত্র বা letter of credit (LC) এর মাধ্যমে ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অগ্রিম অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করে।

৭. অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা :

ব্যাংক একটি দেশের সার্বিক অর্থনীতি তথা শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, গৃহনির্মাণ, শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতিতে সাহায্য করে থাকে।

৯. অর্থ স্থানান্তর :

ব্যাংক তার বিনিময় মাধ্যমের সাহায্যে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে অর্থ স্থানান্তর করে থাকে।

১০. অর্থের নিরাপত্তা প্রদান :


ব্যাংক জনগণের অর্থ জমা রাখার মাধ্যমে অর্থের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া গ্রাহক তার মূল্যবান সম্পদের দলিলপত্র, অলংকারাদি লকার সেবার মাধ্যমে ব্যাংকের কাছে জমা রাখে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের নীতিমালা :-

বাণিজ্যিক ব্যাংক মূলত: সুদের ব্যবসা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাই তাকে আমানত সংগ্রহ ও বিনিয়োগ কাজে সর্বোচ্চ দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হয়। এ কারণে ব্যাংককে কতিপয় নীতিমালা মেনে চলতে হয়। আসুন, এগুলো আলোচনা করি।

১. তারল্যের নীতি (Principle of Liquidity) :

এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নীতি। গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ চাইবামাত্র ফেরৎ দেয়ার ক্ষমতাই হলো তারল্য। এ নীতি অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংক তার অভিজ্ঞতার আলোকে নির্দিষ্ট পরিমাপের অর্থ সব সময় নগদে সংরক্ষণ করে। সেখান থেকে চাইবামাত্র গ্রাহকদের চেকের অর্থ পরিশোধ করতে পারে।

যদি ব্যাংক গ্রাহকদের অর্থ চাইবামাত্র ফেরত না দিতে পারে তাহলে ঐ ব্যাংকের প্রতি মানুষের সন্দেহ হবে এবং সকলে একযোগে অর্থদাবী করলে আর দিতে পারবে না। এতে ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাবে।

২. নিরাপত্তার নীতি (Principle of safety) :

বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রাণ হলো আমানতকারীদের অর্থ। তাই আমানতের এবং বিনিয়োগের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ নীতি ।

৩. সচ্ছলতার নীতি (Principle of solvency) :


বাণিজ্যিক ব্যাংকের পর্যাপ্ত মূলধন ও আর্থিক সংগতি থাকতে হবে। লাভজনক বিনিয়োগ ও আমানতকারীদের আস্থা অর্জনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি।

৪. দক্ষ বিনিয়োগ নীতি (Efficient investment policy) :

সংগৃহীত আমানত বিনিয়োগ করেই বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা অর্জন করে। এ বিনিয়োগ লাভজনক হলে অর্জনও ততো বেশি হবে। এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে সবচেয়ে লাভজনক ও নিরাপদ খাতে অর্থ বিনিয়োগে যত্নবান হতে হয়।

৫. মুনাফার্জন নীতি (Principle of profit earning) :

বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন করা। এ জন্য তাকে অধিক আমানত সংগ্রহ করতে হয় এবং সংগৃহীত আমানত থেকে কাম্য মাত্রায় তারল্য রেখে বাকী তহবিল সর্বোচ্চ মুনাফাজনক খাতে বিনিয়োগের নীতি গ্রহণ করতে হয়।

এগুলো ছাড়াও মূল নীতিালার মধ্যে রয়েছে আস্থা অর্জন, সঞ্চয়, মিতব্যয়িতা, উত্তম সেবা, সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা, বিশেষায়ণ, সময়ানুবর্তিতা, গোপনীয়তা, সুসম্পর্ক, প্রচার, উন্নয়ন, শাখা স্থাপন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক এবং সুনাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ