আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগ :-
গাছের পাতা, কান্ড, ফুল ইত্যাদি শুকিয়ে যাওয়াকে বলা হয় ধ্বসা রোগ (Blight)।আলু গাছে দু'ধরনের ব্লাইট বা ধ্বসা দেখা যায়। যথা- (ক) বিলম্বিত ধ্বসা রোগ এবং (খ) আগাম ধ্বসা রোগ।
বিলম্বিত ধ্বসা রোগের জন্য অনেক সময় ক্ষেতের সমস্ত ফসলই নষ্ট হয়। তাই একে অনেক সময় মড়ক রোগও বলা হয়।
এ রোগ বিশ্বের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়। ১৮৪৫ সালে আয়ারল্যান্ডে এ রোগ মারাত্মকভাবে দেখা দেয়ায় সে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। ফলে বহুলোক মারা যায় এবং বহুলোক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমায়।
কমবেশী প্রতিটি দেশে বিলম্বিত ধ্বসা রোগটি প্রতিবছর কম বেশি দেখা যায়।
আরও পড়ুন :- শিখন কাকে বলে?
সাধারণত বপনের প্রায় দু'মাস পর এ রোগের আবির্ভাব হয় বলে এ রোগকে বিলম্বিত ধ্বসা রোগ বলা হয়।
আলু গাছের বিলম্বিত ধ্বসা রোগের কারণ :-
Phytophthora infestans নামক ছত্রাকের কারণে আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগের সৃষ্টি হয়। এটি Phycomycetes শ্রেণীর ছত্রাক।ছত্রাকটির বৈশিষ্ট্য হলো- এ ছত্রাকের মাইসেলিয়ামগুলো সিনোসাইটিক, অধিক শাখান্বিত এবং স্বচ্ছ। পরিণত অবস্থায় আন্তঃকোষীয় মাইসেলিয়াম থেকে পত্ররন্ধ্র দিয়ে এবং লেন্টিসেল দিয়ে গুচ্ছাকারে শাখান্বিত কনিডিয়োফোর বের হয়। কনিডিয়োফোরের শাখায় লেবু আকৃতির এবং প্যাপিলাযুক্ত কনিডিয়া উৎপন্ন হয়। প্রতিটি কনিডিয়াম অনুকূল পরিবেশে দ্বি-ফ্ল্যাজেলাযুক্ত স্পোর তৈরি করে। স্পোরগুলো প্যাপিলা বিদীর্ণ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। এ সময় ফ্ল্যাজেলা হারিয়ে বিশ্রাম দশায় উপনিত হয়। প্রতিটি স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে বীজনল গঠন করে এবং পোষকদেহে প্রবেশ করে মাইসেলিয়াম উৎপন্ন করে।
আলু গাছের বিলম্বিত ধ্বসা রোগের লক্ষণ :-
আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগের লক্ষণগুলো নিম্নরূপ-১। প্রথমে পাতার কিনারায় বা অগ্রভাগে বাদামী বা লালচে কালো রংয়ের দাগ দেখা দেয়।
২। পাতার নিম্নতলের পত্ররন্ধ্র দিয়ে কনিডিয়োফোর বের হয়। কনিডিয়োফোরের গুচ্ছগুলো সাদা সাদা চূর্ণরূপে থাকে। এগুলো প্যাথোজেনের উপস্থিতি প্রমাণ করে।
আরও পড়ুন:- সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে?
৩। রোগটি ক্রমান্বয়ে পাতা থেকে কান্ডে বিস্তার লাভ করে। ফলে কান্ডে পঁচন ধরে এবং সমস্ত গাছটি বিনষ্ট হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে।
৪। পাতা ও কান্ড বিনষ্ট হওয়ার ফলে কন্দ বা টিউবারগুলো আক্রান্ত হয়। এর ফলে স্ফীত কন্দ বা আলুগুলোতে গাঢ় বেগুনী বা কালচে দাগ দেখা যায়।
৫। রোগ বিস্তারের পর সমস্ত আলু পঁচে নষ্ট হয়।
৬। ছত্রাক আক্রমণ তীব্র হলে আলুক্ষেতে মরা ও পঁচা টিস্যুর বিশেষ দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
আলু গাছের বিলম্বিত ধ্বসা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা :-
১। রোগমুক্ত এলাকা থেকে শুষ্ক আলু সংগ্রহ করতে হবে।২। বীজ আলু প্রখর রৌদ্রে অনেক দিন যাবত ভালভাবে শুকাতে হবে।
৩। রোগাক্রান্ত অঞ্চলে আলু গাছ ৬-১০ ইঞ্চি লম্বা হলেই এতে বোঁর্দোমিশ্ৰণ নামক ছত্রাকবারক ছিটাতে হবে এবং পরবর্তীতে ২০-২৫ দিন পরপর ছত্রাকবারকটি ছিটাতে হবে।
৪। আলু তোলার পর ক্ষেতে আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশসমূহ একত্রিত করে পুড়ে ফেলতে হবে।
৫। বীজ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে হবে।
৬। বীজ আলু হিমাগারে রাখার পূর্বে ছত্রাকবারক দ্বারা শোধন করতে হবে।
৭। ছত্রাক প্রতিরোধক্ষম জাত চাষ করতে হবে।
৮। জমি থেকে আলু ফসল তোলার পরপরই সকল পরিত্যক্ত আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৯। একই জমিতে প্রতিবছর আলু চাষ না করে ১/২ বছর পরপর চাষ করলে রোগের বিস্তার কম হবে।
১০। চাষের ক্ষেত্রে স্থানীয় জাত নির্বাচন করা ভাল।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.