রক্ত চাপ কাকে বলে :-
রক্ত প্রবাহের সময় ধমনিগাত্রে যে চাপ সৃষ্টি হয় তাকে 'রক্ত চাপ' (Blood pressure) বলে।হৃদপিন্ডের সংকোচন অবস্থায় ধমনিগাত্রে রক্ত চাপের মাত্রা সর্বাধিক থাকে। এ উচ্চ চাপকে সিস্টোলিক (Systolic) চাপ বলে।
হৃদপিন্ডের (প্রকৃতপক্ষে নিলয়ের) প্রসারণ অবস্থায় রক্ত চাপ সবচেয়ে কম থাকে। এ নিম্ন চাপকে ডায়াস্টোলিক (Diastolic) চাপ বলে।
স্ফিগমোম্যানোমিটার ( Sphygmomanometer) যন্ত্রের সাহায্যে রক্ত চাপ মাপা যায় এবং রক্তের ডায়াস্টোলিক ও সিস্টোলিক চাপ দেখে রক্ত চাপ নির্ণয় করা যায়।
স্বাভাবিক অবস্থায় একজন সুস্থ বয়স্ক ব্যক্তির সিস্টোলিক রক্ত চাপ পারদস্তম্ভের ১০০-১৫০ মিলিমিটার এবং ডায়াস্টোলিক রক্ত চাপ পারদস্তম্ভের ৬৫-৯ মিলিমিটার।
আরও পড়ুন :- রক্ত কাকে বলে?
আদর্শ রক্ত চাপ :-
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, পরিণত বয়সে একজন মানুষের আদর্শ রক্ত চাপ সাধারণত ১২০/৮০ মানের কাছাকাছি। রক্ত চাপকে উচ্চমান ও নিম্নমান এ দুটি সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়। রক্তের উচ্চচাপকে সিস্টোলিক চাপ বলে যার আদর্শ মান ১২০ বা এর কিছু নিচে। অন্যদিকে রক্তের নিম্নমানকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে যার আদর্শ মান ৮০ বা এর নিচে।এ চাপটি হৃদপিন্ডের দুটি বিটের মাঝামাঝি সময় রক্তনালিতে সৃষ্টি হয়। এ দু'ধরনের রক্ত চাপের পার্থক্যকে ধর্মনিঘাত বা নাড়িঘাত চাপ (Pulse pressure) বলা হয়।
সুস্থ অবস্থায় হাতের কব্জিতে পালস এর মান প্রতি মিনিটে ৭০। হাতের কব্জিতে হালকা করে চাপ দিয়ে ধরে পালস রেট বের করা যায়।
উচ্চ রক্ত চাপ (High blood pressure) :-
উচ্চ রক্ত চাপকে নীরব ঘাতক হিসেবে গণ্য করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে স্ট্রোক ও করোনারি ধমনির রোগ হবে বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর প্রকোপ পড়বে মহামারী আকারে।হৃদরোগ ও স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্ত চাপ। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্ত চাপকে উচ্চ রক্ত চাপ বলা হয়। এক জন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে সিস্টোলিক চাপ ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০ বা এর নিচের মাত্রাকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। এ রক্ত চাপ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয় তখনই আমরা তাকে উচ্চ রক্ত চাপ বলে থাকি।
আরও পড়ুন :- বৃক্ক বিকল কাকে বলে?
উচ্চ রক্ত চাপ হওয়ার কারণ :-
বংশানুক্রমিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, স্নায়ুবিক চাপ (Tension) বা ধূমপানের অভ্যাস থাকলে, দেহের ওজন বৃদ্ধি হলে উচ্চ রক্ত চাপ দেখা দেয়, খাদ্যে লবণ ও চর্বিযুক্ত উপাদানের কারণে উচ্চ রক্ত চাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, পরিবারের সদস্যদের ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের পূর্ব ইতিহাস থাকলে উচ্চ রক্ত চাপ দেখা দেয় এবং সন্তান প্রসবের সময় খিঁচুনী রোগের কারণে মায়ের উচ্চ রক্ত চাপ দেখা দেয়।
উচ্চ রক্ত চাপের লক্ষণ :-
মাথা ব্যথা বিশেষ করে মাথার পেছন দিকে ব্যথা করা, মাথা ঘোরা, ঘাড় ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা ও দুর্বল বোধ করা, রোগীর নাক দিয়ে রক্ত পড়া, উচ্চ রক্ত চাপের রোগীর সুনিদ্রা হয় না এবং অল্প পরিশ্রমে হাঁপানি উঠা।
উচ্চ রক্ত চাপের প্রতিকার :-
উচ্চ রক্ত চাপ থেকে প্রতিকারের উপায় টাটকা ফল ও শাক সব্জি খাওয়ার অভ্যাস করা, দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে শারীরিক পরিশ্রম করা, ব্যায়াম করা, চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, খাবারের সময় অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া এবং কাঁচা লবণ খাওয়া পরিহার করা, ধূমপান বা যে কোনো মাদক দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা এবং রক্ত চাপ বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।
আরও পড়ুন:- স্নায়ুতন্র কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.