মানবদেহে মূত্র তৈরির পদ্ধতি :-
মানবদেহের বৃক্কে তিনটি পদ্ধতিতে মূত্র তৈরি হয়। যথা-১. অতিসূক্ষ্ম পরিস্রাবন (ultrafiltration) :
নেফ্রনের গ্লোমেরুলাস আল্ট্রাফিল্ডার বা অতিসূক্ষ্ম পরিস্রাবণ যন্ত্র হিসেবে কাজ করে। এ অংশে যে পরিশ্রাবন কৌশল সংঘটিত হয় তা সাধারণ পরিশ্রাবন থেকে আলাদা। এক্ষেত্রে পরিস্রাবন প্রক্রিয়াটি চাপ প্রয়োগের ফলে সম্পন্ন হয় বলে একে আল্ট্রাফিলট্রেশন বলে।
গ্লোমেরুলাসের অ্যাফারেন্ট রক্তনালিকার ব্যাস ইফারেন্ট রক্তনালিকার ব্যাস অপেক্ষা বেশী হওয়ায় গ্লোমেরুলাসে উচ্চ চাপ বজায় থাকে। সাধারণ অবস্থায় এ চাপ ৭৫ মি.মি. পারদ স্তম্ভের সমান। এ উচ্চ চাপযুক্ত রক্ত গ্লোমেরুলাস দিয়ে বৃক্ক নালিকায় প্রবাহিত হওয়ার সময় আরও দুটি চাপ দ্বারা বাঁধা প্রাপ্ত হয়।
একটি প্লাজমা প্রোটিনের অভিস্রবনিক চাপ, অপরটি বোম্যানস্ ক্যাপসুলের অভ্যন্তরীণ চাপ। এ দুটি চাপে গ্লোমেরুলাসে উচ্চ রক্তচাপ বাঁধাগ্রস্থ হয়ে সক্রিয় পরিস্রাবণ চাপ সৃষ্টি হয়। সাধারণ অবস্থায় প্লাজমা প্রোটিনের অভিস্রবনিক চাপ ও বোম্যানস্ ক্যাপসুলের অভ্যন্তরীণ চাপ যথাক্রমে ৩০ ও ২০ মি.মি. পারদ স্তম্ভের সমান।
আরও পড়ুন :- রক্তচাপ কাকে বলে?
সুতরাং সক্রিয় পরিস্রাবন চাপের মাত্রা ৭৫- (৩০+২০) = ২৫ মি.মি. পারদ স্তম্ভের সমান। এ চাপের প্রভাবে রক্তের প্লাজমা থেকে প্রোটিন ছাড়া সকল উপাদানই গ্লোমেরুলাস ছাঁকন পদ্ধতিতে পৃথক হয়। এ পরিশ্রুতকে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেট বলে। এ ফিলট্রেট গ্লোমেরুলাস থেকে বোম্যানস্ ক্যাপসুলের গহ্বরে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে বৃক্কনালিকায় পরিবাহিত হয়।
২. নির্বাচিত পুনঃশোষণ (Selective reabsorption) :
নিকটবর্তী প্যাচানো নালিকা দিয়ে পরিশ্রুত তরল থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় নানা উপাদান যেমন- গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফেট, ভিটামিন ইত্যাদি সক্রিয় পদ্ধতিতে পুনঃশোষিত হয়। গ্লোমেরুলার পরিস্রতে প্রোটিন ছাড়া রক্তের অনান্য পদার্থ বৃক্ক নালিকায় প্রবেশের পর এদের অধিকাংশই সক্রিয় পুনঃশোষণ পদ্ধতিতে রক্তে ফিরে যায়।
হেনলির লুপের অবরোহন (নিম্নগামী) বাহু পানি ভেদা, তাই এখানে অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় পানি পুনঃশোষিত হয় এবং আরোহন (ঊর্ধ্বগামী) বাহু পানি অভেদ্য, এখানে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড আয়ন সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে শোষিত হয়। দূরবর্তী প্যাচানো নালিকাতে পানি, ইউরিয়া নিষ্ক্রিয় পদ্ধতিতে পুনঃশোষিত হয়। অ্যান্ডোস্টেরন ও এন্টি ডাই ইউরেটিক হরমোন এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
৩. নালিকা কর্তৃক ক্ষরণ (Tubular secretion) :
বিপাকে সৃষ্ট কিছু অপ্রয়োজনীয় উপজাত পদার্থ, যথা- ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ইউরিক এসিড, সেরোটোনিন ইত্যাদি নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকার চারপাশে রক্তজালক থেকে সক্রিয় পরিবহনের মাধ্যমে গ্লোমেরুলার পরিশ্রুতের সাথে যুক্ত হয় এবং মূত্রের সাথে অপসারিত হয়।
আরও পড়ুন :- লসিকাতন্ত্র কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.