পুরুষ প্রজননতন্ত্র কাকে বলে :-
যে যন্ত্রের সাহায্যে শুক্রাণু উৎপাদন, শুক্রাণু জমা রাখা, পরিবহন ও দেহ থেকে বাইরে নিষ্ক্রান্ত হয় সে তন্ত্রকে পুরুষ (পুং) প্রজননতন্ত্র বলে।
মানব পুংজননতন্ত্র নিম্নলিখিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত-
১. শুক্রাশয় (Testis),
২. অণ্ডকোষ (Scrotum),
৩. এপিডিডাইমিস (Epididymis),
৪. শুক্রনালি বা ভাস ডিফারেন্স (Vas deferens),
৫. সেমিনাল ভেসিকল (Seminal vesicle),
৬. ক্ষেপণ নালি (Ejaculatory duct)
৭. মূত্রনালি (Urethra),
৮. শিশ্ন (Penis),
১. গ্রন্থিসমূহ (Glands) |
আরও পড়ুন :- জেনেটিক ডিসওর্ডার কি?
এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো -
১. শুক্রাশয়:
পুরুষ প্রজননতন্ত্রের প্রধান অঙ্গের নাম শুক্রাশয়। এদের সংখ্যা একজোড়া। দেহগহ্বরের বাইরে ক্রোটাম (Scrotum) বা অণ্ডকোষের ভেতর শুক্র রজ্জ (Spermatic duct) দ্বারা শুক্রাশয়ায় ঝুলন্তভাবে অবস্থান করে।
প্রতিটি শুক্রাশয় তিনটি আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে। প্রতিটি শুক্রাশয় ২০০-৩০০টি ছোট ছোট খণ্ডাংশ বা লোবিউলে বিভক্ত, প্রত্যেক খণ্ডাংশ ২-৩টি সূক্ষ্ম পাকানো সুতার মত সেমিনিফেরাস নালিকা এবং ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত।
সেমিনিফেরাস নালিকার অন্তঃপ্রাচীরে শুক্রাণু মাতৃকোষ এবং সারটোলি কোষ অবস্থিত।
কাজ-
ক. শুক্রাশয় শুক্রাণু উৎপাদন করে,
খ. এটি টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ করে।
২. অণ্ডকোষ :
উদরীয় গহ্বরের বাইরে যে থলির অভ্যন্তরে শুক্রাশয় অবস্থান করে তাকে অণ্ডকোষ বলে। ক্রোটাম ভেতরের দিকে অসম্পূর্ণভাবে বিভক্ত হয়ে শুক্রাশয়কে পৃথক রাখে।
কাজ- ক্রোটাম শুক্রাণু উৎপন্নের অনুকূল তাপমাত্রা রক্ষা করে।
৩. এপিডিডাইমিস :
এপিডিডাইমিস কুণ্ডলীকৃত অবস্থায় শুক্রাশয়ের পিছনের গাত্রে লাগানো থাকে। এপিডিডাইমিসের শেষ প্রান্ত ভাস ডিফারেন্সের সাথে যুক্ত।
কাজ - শুক্রাণুগুলো এখানে মাসাধিক কাল সঞ্চিত থাকতে পারে । এটি শুক্রাণুর চলন শক্তি এবং নিষেক ক্ষমতা বা উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
৪. শুক্রনালি :
এপিডিডাইমিসের শেষ প্রান্ত থেকে বের হয়ে একটি অবিচ্ছিন্ন নালিকা হিসেবে মূত্রগুলির নিচে সেমিনাল ভেসিকলের নালির সাথে যুক্ত হয়।
কাজ - ভাস ডিফারেন্স সঙ্গমের সময় দ্রুত শুক্রাণু পরিবহন করে, এবং কিছু সময়ের জন্য শুক্রাণু জমা রাখাও এর কাজ।
এপিডিডাইমিসের শেষ প্রান্ত থেকে বের হয়ে একটি অবিচ্ছিন্ন নালিকা হিসেবে মূত্রগুলির নিচে সেমিনাল ভেসিকলের নালির সাথে যুক্ত হয়।
কাজ - ভাস ডিফারেন্স সঙ্গমের সময় দ্রুত শুক্রাণু পরিবহন করে, এবং কিছু সময়ের জন্য শুক্রাণু জমা রাখাও এর কাজ।
আরও পড়ুন :- কঙ্কাল তন্ত্র কাকে বলে?
৫. সেমিনাল ভেসিকল :
মূত্রথলির নিম্নপ্রান্ত ও মলাশয়ের মাঝখানে অবস্থিত একজোড়া ক্ষুদ্র থলিকে সেমিনাল ভেসিকল বলে।
কাজ -
ক. সিমেন তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পিচ্ছিল পদার্থ ক্ষরণ করে।
খ. শুক্রাণুকে পুষ্টিদানের জন্য ফ্রুক্টোজ সমৃদ্ধ পদার্থ সৃষ্টি করে।
৬. ক্ষেপণ নালি :
সেমিনাল ভেসিকল এবং ভাস ডিফারেন্স বা অ্যনালি একত্রে মিলিত হয়ে ক্ষেপণ নালি তৈরি করে। এটি প্রোস্টেট গ্রন্থির ভিতর দিয়ে মূত্রনালিতে উন্মুক্ত হয়।
কাজ- ক্ষেপণ নালির মাধ্যমে সেমিনাল ভেসিকলের ক্ষরণসহ শুক্রাণু ইউরেথ্রায় প্রবেশ করে।
৭. মূত্রনালি-
এটি রেচনতন্ত্র ও প্রজননতন্ত্রের একটি সাধারণ নালি। এটি মূত্রগুলি থেকে শুরু করে শিল্পের শেষ মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত।
কাজ - এ নালির মাধ্যমে বীর্য বাইরে খলিত হয় এবং মূত্র বের হয়।
আরও পড়ুন :- জৈব বিবর্তন কাকে বলে?
৮. শিশ্ন :
এ অঙ্গটি নলাকার পেশিবহুল এবং উত্থানশীল, এ অঙ্গের মধ্য দিয়ে মূত্রনালি বিস্তৃত থাকে।
কাজ-
ক. এটি যৌন সঙ্গমে অংশ গ্রহণ করে,
খ. এটি শুক্রাণু বিশিষ্ট বীর্যরস স্ত্রী জননতন্ত্রের ভেতর প্রেরণ করে।
৯. গ্রন্থিসমূহ :
(ক) প্রোস্টেট গ্রন্থি- এটি মূত্রথলির নিচে অবস্থিত নাশপাতি আকৃতির একটি গ্রন্থি। এর প্রাচীর আংশিকভাবে গ্রন্থিময় এবং আংশিকভাবে পেশি ও তন্ত্রময়।
কাজ-
(i) এ গ্রন্থি থেকে একধরনের ক্ষারীয় তরল নিঃসৃত হয় যা সিমেন বা বীর্য তৈরিতে সহায়তা করে,
(ii) এ তরল PH নিয়ন্ত্রন ও শুক্রাণুর চলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
(খ) কাওপার গ্রন্থি- প্রোস্টেট গ্রন্থির নিচে মূত্রনালির দু'পাশে দুইটি ক্ষুদ্র গোলাকৃতির গ্রন্থি বিদ্যমান। এদের কাওপার গ্রন্থি বলে। এরা দুটি খাটো নালির মাধ্যমে মূত্রনালির সাথে যুক্ত থাকে।
কাজ- সঙ্গমের সময় পিচ্ছিল মিউকাস পদার্থ ক্ষরণ করে।
পুরুষ সেক্স হরমোনের প্রভাব :-
শুক্রাশয় থেকে টেস্টোস্টেরন নামক গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ যৌন হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি শুক্রাণু জননে শুক্রাশয়কে উদ্বুদ্ধ করে এবং পুরুষের যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়।
শুক্রাশয়ের সারটোলি কোষ অল্প পরিমাণ ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ করে যা শুক্রাণু তৈরিতে সহায়তা করে। এছাড়া সারটোলি কোষ নিঃসৃত ইনহিবিন হরমোন শুক্রাণু সৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে।
আরও পড়ুন :- লসিকাতন্ত্র কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.