প্রজননের বিভিন্ন পর্যায় ও দশা কি?

প্রজননের বিভিন্ন পর্যায় ও দশা :-

পুরুষ ও নারী প্রজননক্ষম হওয়ার লক্ষণসমূহ অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো, পুরুষের জননঅঙ্গ পুংগ্যামিট সৃষ্টি, নারীর জনন অঙ্গ স্ত্রী গ্যামিট সৃষ্টি, রজঃচক্র, নিষেক ইত্যাদি প্রজননের বিভিন্ন পর্যায় বা দশা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

১. বয়ঃসন্ধিকাল (Puberty/Adolescence):

মানবজীবনের যে পর্যায়ে পুরুষ ও স্ত্রী দেহে বাহ্যিক গৌন যৌন বৈশিষ্ট্যসমূহ বিকশিত হতে থাকে এবং প্রজনন অঙ্গগুলো সক্রিয় হতে শুরু করে তাকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে।

এ সময়টি হচ্ছে কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে পদার্পণের মুহূর্ত। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকালের বয়স ১৩-১৪ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১১-১৪ বছর বলে বিবেচনা করা হয়।

এ সময় বিভিন্ন হরমোনের প্রভাবে দৈহিক গঠন ও চরিত্রে নানা পরিবর্তন বা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। বয়ঃসন্ধিকালের এসব বৈশিষ্ট্যকেই গৌন যৌন বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন- মেয়েদের স্তন, ছেলেদের দাঁড়ি-গোঁফ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :- নিষেক কাকে বলে?

২. রজঃচক্র (Menstrual cycle):

(ক) রজঃস্রাবীয় পর্যায় (১-৫ দিন) :

রজঃস্রাব এ পর্যায়ের প্রারম্ভ নির্দেশ করে। ডিম্বপাতের পর ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে (৩৬ ঘণ্টার মধ্যে) কর্পাস লুটিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন-এর ক্ষরণমাত্রা কমে যাওয়ায় এন্ডোমেট্রিয়াম আর বৃদ্ধি পায় না এবং ভাঙ্গতে শুরু করে।

রক্তের অভাবে এন্ডোমেট্রিয়ামের কুণ্ডলীকৃত ধর্মনিগুলো প্রসারিত হয়ে ছিন্ন ভিন্ন হলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন এর ক্ষরণমাত্রা অনেক নিচে নেমে গেলে সম্মুখ পিটুইটারি গ্রন্থির উপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায় তখন Follicle Stimulating Hormone Luteinizing Hormone ক্ষরণ শুরু হয়। ফলে এন্ডোমেট্রিয়াম ভেঙ্গে গিয়ে অনিষিক্ত ডিম্বাণুসহ মিউকাস ও রক্ত যোনি পথে নির্গত হয়। শুরু হয় রজঃচক্র পর্যায়।
প্রজননের বিভিন্ন পর্যায়
(খ) ফলিকল পর্যায় (৬-১৩ দিন):-

রজঃচক্রের ৬-১৩তম দিনে বর্ধনশীল ফলিকলের ফলিকল কোষ থেকে অধিক মাত্রায় ইস্ট্রোজেন ক্ষরিত হয়। জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম পুরু হতে শুরু করে, গ্রন্থিসমূহ কুণ্ডলীত হতে থাকে ও রক্ত জালিকাগুলো বৃদ্ধি পায়।


(গ) ওভ্যুলেশন পর্যায় (১৪ দিন) :

লুটিনাইজিং হরমোনের প্রভাবে চতুর্দশ দিনে আফিয়ান ফলিকল থেকে ডিম্বাণু মুক্ত হয়ে ডিম্বনালির মাধ্যমে জরায়ুর দিকে অগ্রসর হয়। গ্রাফিয়ান ফলিকল থেকে ডিম্বাণুর নিঃসরণ বা নিষ্ক্রমণকে ডিম্বস্ফুটন (Ovulation) বলে।

(ঘ) কর্পাস লুটিয়াম পর্যায় (১৫-২৮ দিন):

ডিম্বাণু নিষ্ক্রমণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফলিকলের অবশিষ্ট থিকা কোষগুলোতে দ্রুত ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে যাকে লুটিনাইজেশন বলে। ফলে গ্রাফিয়ান ফলিকল কর্পাস লুটিয়াম (corpus luteum) এ পরিণত হয়।

হলুদ বর্ণ ধারণ করে বলে কর্পাস লুটিয়ামকে ইয়েলো বডি (yellow body)ও বলা হয়। কর্পাস লুটিয়াম ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন তৈরি করে। ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য প্রোজেস্টেরন জরায়ু প্রাচীরকে উপযোগী করে এবং একই সাথে ফলিকল উদ্দীপক হরমোন উৎপাদনে বাঁধা দেয়।

ডিম্বাণু নিষিক্ত হলে ভ্রূণ জরায়ু প্রাচীরে প্রথিত হয়। পরবর্তীতে সৃষ্ট প্লাসেন্টা ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন তৈরির মাধ্যমে ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশের পরিবেশ বজায় রাখে। ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে ১০-১২ দিন পর অর্পাস লুটিয়াম নষ্ট হয়ে যায় ফলে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন উৎপাদন বন্ধ হয়। ফলশ্রুতিতে রক্ত জালক ফেটে গিয়ে পরবর্তী চক্রের রজঃস্রাব পর্যায় শুরু হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ