প্রতিবর্তি ক্রিয়া কাকে বলে? প্রতিবর্তি ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য?

প্রতিবর্তি ক্রিয়া কাকে বলে :-

কোন আকস্মিক উদ্দীপনায় এক বিশেষ ধরনের স্বয়ংক্রিয় ও অনৈচ্ছিক আচরণকে প্রতিবর্তি ক্রিয়া (Reflex action) বলে।

জীবনের অবস্থার সাথে মোকাবেলা করার জন্য প্রাণী বিচার বিবেচনা না করে বাহ্য উদ্দীপকের ক্রিয়ার ফলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ ধরনের ক্রিয়া মস্তিষ্ক ধারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে স্নায়ুতন্ত্রের সুষুয়াকাণ্ড (Spinal cord) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

যেমন- গরম কিছু হাতে লাগলে সঙ্গে সঙ্গে হাত সরে আসা, চোখে কিছু পড়লে আপনা থেকেই চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া, পায়ে কাঁটা ফুটলে অতি ক্ষিপ্রতার সাথে পা সরিয়ে নেয়া ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :- পরাগায়ন কাকে বলে?

প্রতিবর্তি ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য :-

• এটি সম্পূর্ণ অনৈচ্ছিক ধরনের প্রতিক্রিয়া, এর পেছনে কোন পূর্ব পরিবল্পনা থাকে না।

• এটি সহজে সংশোধিত বা পরিবর্তিত হয় না।

• এক ধরনের উদ্দীপক এক ধরনের প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করে।

• প্রতিবর্তি ক্রিয়া সহজাত বা অনুগত, শিক্ষালব্ধ নয় ।

• এটি সহজ প্রকৃতির।

• প্রতিবর্তি ক্রিয়া খুব দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়।

• সংবেদনের সাথে সাথেই দৈহিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

গরম জিনিস হঠাৎ আঙ্গুলে লাগামাত্র আমরা হাত সরিয়ে নেই। কারণ- গরম জিনিস আঙ্গুলে লাগামাত্র সেখানকার ত্বকে অবস্থিত সংবেদী স্নায়ুর ডেনড্রাইট জ্বালা যন্ত্রণার উদ্দীপনা গ্রহণ করে।

এখানে আঙ্গুলের ত্বক সংগ্রাহক অঙ্গের কাজ করে। আঙ্গুলের ত্বক থেকে উদ্দীপনা সংবেদী স্নায়ুর মাধ্যমে মেরুরজ্জুর গ্রে ম্যাটার অবস্থিত সংবেদী স্নায়ুর অ্যাক্সন ও সংযোজক স্নায়ুর ডেনড্রাইটের মধ্যবর্তী সিন্যাপস এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ রাসায়নিক শক্তিরূপে কর্মোদ্দীপনা ক্রিয়াজ শামুতে প্রবেশ করে এবং এর অ্যাক্সন কর্তৃক পরিবর্তিত হয়ে আঙ্গুলের পেশিতে পৌঁছায়। ফলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পেশি সংকুচিত হয় এবং সম্পূর্ণ অনৈচ্ছিকভাবে হাত সয়ে যায়।

প্রতিবর্তি ক্রিয়া সংঘটন প্রক্রিয়া :-

যে পথে প্রতিবর্তি ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাকে প্রতিবর্তি চক্র বলে। প্রতিবর্তি চক্রের নিম্নলিখিত অংশগুলো থাকে-

আরও পড়ুন :- ট্যিসু কালচার কাকে বলে?

সংগ্রাহক : এটি প্রতিবর্তি ক্রিয়ার জন্য উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এর সাথে একটি সংবেদী স্নায়ু সংযুক্ত থাকে।

সংবেদী স্নায়ু : উদ্দীপকের মাধ্যমে এর ডেনড্রাইট উদ্দীপ্ত হলে সে তাড়না মেরুরজ্জুতে পরিবাহিত হয়।

সংযোজক স্নায়ু : মেরুরজ্জুর গ্রে ম্যাটার অংশে সংবেদী স্নায়ু ও ক্রিয়াজ স্নায়ুর মধ্যবর্তী স্থানে সংযোজক স্নায়ু অবস্থিত।

ক্রিয়াজ স্নায়ু : এর মাধ্যমে উদ্দীপনা কার্যকারক অঙ্গে (পেশি বা গ্রন্থি) পৌঁছায়।

কার্যকারক : পেশি বা গন্থি যেখানে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়।

প্রতিবর্তি ক্রিয়া কত প্রকার ও কি কি :- 

প্রতিবর্তি ক্রিয়া মূলতঃ তিন ধরনের। যথা-

নিরপেক্ষ প্রতিবর্তি :

বাহ্য উদ্দীপক প্রয়োগের সাথে সাথে প্রাণীদেহের স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে প্রতিক্রিয়া হয় তাকে নিরপেক্ষ প্রতিবর্তি বলে। হঠাৎ উজ্জ্বল আলোতে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া।

সাপেক্ষ প্রতিবর্তি :

শিখন বা অনুশীলন সাপেক্ষে বিকল্প উদ্দীপকের প্রতি প্রাণীর মূল উদ্দীপকের ন্যায় প্রতিক্রিয়া। উদাহরণ- প্যাভলভের পরীক্ষায় এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।

ক্রমিক প্রতিবর্তি :

একাধিক প্রতিবর্তি ক্রিয়া সমষ্টিগতভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। যেমন- ঝাঁঝালো বস্তুর গন্ধে হাঁচি আসা, হাঁচির ফলে চোখে পানি আসা। এগুলো একটি উদ্দীপকের ক্রমিক প্রতিক্রিয়া।

মানুষের কয়েকটি প্রতিবর্তি ক্রিয়ার উদাহরণ :-

চোখের উপযোজন, হাঁটুর ঝাঁকুনি, চোখের পিউপিলের সঞ্চালন, হাঁচি, কনুই ঝাকুনি, হাইম তোলা ইত্যাদি ।

আরও পড়ুন :- নেফ্রন কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ