জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি (Joints) :-
দুই বা ততোধিক অস্থির সংযোগস্থলকে অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট বলে।অস্থিসন্ধির প্রকার (Types of Joints) :-
মানবেদেহ অস্থিসন্ধিকে নিম্নলিখিতভাগে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। যথা-১. ফাইব্রাস বা তন্তুময় বা অনড় অস্থিসন্ধি,
২. কার্টিলেজিনাস বা তরুণাস্থিময় বা আংশিক সচল অস্থিসন্ধি ও
৩. সাইনোভিয়াল বা সচল অস্থিসন্ধি।
এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো -
১. তময় বা অনড় অস্থিসন্ধি (Fibrous or Immovable Joints) :-
এই ধরনের অস্থিসন্ধির মিলিত অস্থি দুটির প্রান্তদেশ শ্বেত তন্তুকলা (white fibrous tissue) দিয়ে প্যারাইটাল- পরস্পরের সঙ্গে সংলগ্ন থাকে। ফলে অস্থিসন্ধিগুলি অনড় প্রকৃতির হয়। করোটিতে এই ধরনের সন্ধি পরিলক্ষিত হয়। এই প্রকার অস্থিসদি তিন প্রকারের, যথা-i. সুচার (Suters): এরকম অস্থিসন্ধিতে করোটিকার অস্থির দুটি প্রাপ্ত খুব পাতলা সুচারাল লিগামেন্ট (Sutural Ligament) দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সংলগ্ন থাকে।
আরও পড়ুন :- পেশি কলা কাকে বলে?
ii. গোমফোসিস (Gomphosis): এরকম অস্থিসন্ধিতে একটি অস্থির ছুঁচোলো প্রান্ত (Peglike end) একটি সকেটের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকে। যেমন- দাঁত ও চোয়ালের সর্কেটের সন্ধি।
iii. সিনডেসমোসিস (Syndesmosis) : এই রকম অস্থিসন্ধির অস্থি দুটি একটি ইন্টারোসিয়াস লিগামেন্ট (Interosseous Ligament) দিয়ে পরস্পর সংলগ্ন থাকে। যেমন- ইনফিরিয়র টিবিয়া ও ফিবিউলার সন্দি।
২. তরুণাস্থিময় অস্থিসন্ধি বা আংশিক সচল সন্ধি (Cartilaginous Joints or Slightly Movable joints) :-
এরকম অস্থিসন্ধিতে মিলিত অস্থি দুটির প্রান্তদেশ পরস্পরের সঙ্গে তরুণাস্থি ( cartilage) দিয়ে সংলগ্ন থাকে। এই প্রকারের সন্ধি দুরকমের, যেমন—i. সিনকনড্রোসিস (Synchondrosis) : এই প্রকার অস্থিসন্ধিতে হায়ালিন অরুণা (hyaline cartilage) থাকে। এরকম সদি দীর্ঘাস্থির এপিফাইসিস ও ডায়াফাইসিসের সংযোগস্থলে লক্ষ করা যায়।
II. সিমফাইসিস (Symphysis): এরকম অস্থিসন্ধিতে ফাইব্রোকার্টিলেজ বা তত্ত্বময় তরুণাস্থি ( fibrocartilage) থাকে। সিমফাইসিস পিউবিস অস্থিসন্ধি এই প্রকারের সপি।
৩. সাইনোভিয়াল বা সচল অস্থিসন্ধি (Synovial or Freely Movable Joints) :-
এরকম অসন্ধির মিলিত অস্থি দুটি একটি তরল পূর্ণ গহ্বর দিয়ে পৃথক থাকে। এই ধরনের সন্ধি সচল প্রকৃতির হয়। আমাদের অধিকাংশ সন্ধি এইরকমের।আরও পড়ুন :- কঙ্কাল তন্ত্র কি?
সাইনোভিয়াল ডায়েন্টের প্রকারভেদ (Types of Synovial Joint) :-
i. মাইডিং বা প্লেন জয়েন্ট (Gliding or Plane Joint) : এটি সবচেয়ে সরল সন্ধি। এক্ষেত্রে সন্ধিস্থলের অস্থি দুটির প্রান্তদেশ সমতল প্রকৃতির হয়। কারপাল ও টারসাল অস্থিসন্ধি এই প্রকারের। এক্ষেত্রে চলন কেবল সামনে-পিছনে এবং পাশাপাশি হয়।
ii. হিঞ্জ জয়েন্ট (Hinge Joint) : এই রকম সন্ধিতে একটি অস্থির গোল প্রাপ্ত অপর অস্থির অর্ধগোলাকার অবতল অংশে যুক্ত থাকে। এরকম সন্ধিতে কেবল একটিতেই সঞ্চালন ঘটে। যেমন-কনুই সন্ধি (Elbow joint), হাঁটু সন্ধি ( Knee joint), গোড়ালি সন্ধি (Ankle joint) ।
iii. পিভট জয়েন্ট (Pivot Joint) : এই প্রকার সন্ধিতে একটি গোলাকার অস্থি অপর একটি অস্থির খাদে (Shallow depression) সংলগ্ন থেকে বৃত্তাকারে আবর্তিত হয়। যেমন- অ্যাটলাস ও অ্যাক্সিসের সন্ধি।
iv. কন্ডাইলয়েড বা ইলিপসয়েড জয়েন্ট (Condyloid or Ellipsoid Joint) : এরকম সন্ধিতে একটি অস্থির ডিম্বাকার প্রাপ্ত অপর অস্থির উপদণ্ডাকার খাঁজে যুক্ত থাকে এবং সন্ধির উভয়দিকে বিচলন ঘটে। মেটাকারপাল ও ফ্যালাঞ্জেসের সন্ধি এই প্রকারের।
v. স্যাডল জয়েন্ট (Saddle Joint) : এরকম সন্ধিতে দুটি অস্থির প্রান্তই সমতল। একটি সন্ধির অবতল অংশ অপর সন্ধির অবতল অংশের সঙ্গে সমকোণে অবস্থান করে। বুড়ো আঙুলের কারপাল এ মেটাকারপাল অস্থি সন্ধি এই জাতীয়।
vi. বল ও সকেট জয়েন্ট (Ball and Socket Joint) : এরকম সন্ধিতে একটি অস্থির গোলাকার সকেট যুক্ত প্রান্ত অপর অস্থির সকেটের সঙ্গে অংশ যুক্ত থাকে এবং প্রায় সবদিকেই সঞ্চালিত হতে থাকে। সোল্ডার জয়েন্ট, হিপ জয়েন্ট এরকমের সন্ধি।
আরও পড়ুন :- করোটিক স্নায়ু কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.