জেনেটিক ডিসওর্ডার কি :-
বংশগতির অনিয়মের কারণে মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে যা উদ্বেগের বিষয়। বংশগতির এ অনিয়মকে বলা হয় জেনেটিক ডিসওর্ডার।ইহা এক প্রকার অস্বাভাবিকতা। এর ফলে মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। যেমন- বর্ণান্ধতা, থ্যালাসেমিয়া, ডাউন সিন্ড্রোম, পাটাও সিন্ড্রোম, এডওয়ার্ড সিন্ড্রোম, ক্লাইনফেল্টার ও ডাবল ওয়াই সিন্ড্রোম, ট্রিপলো X সিন্ড্রোম, টার্নার সিন্ড্রোম, হানটিংটন'স সিন্ড্রোম, সিকিল সেল (রক্তশূন্যতা) ইত্যাদি।
জেনেটিক ডিসওর্ডারের কারণ :-
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন কীভাবে মাতা-পিতা থেকে সন্তানদের মধ্যে উপরিউক্ত রোগগুলো সঞ্চালিত হয় এবং কী ধরনের অনিয়মের কারণে রোগগুলো ঘটে।যে সকল অনিয়মের কারণে মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হয় তা হলো-
আরও পড়ুন :- ওটিটিসি মিডিয়া কি?
(ক) পয়েন্ট মিউটেশন (জিনের পরিব্যপ্তি, এমনকি একটি নিউক্লিয়োটাইডের পরিব্যপ্তি),
(খ) ক্রোমোসোম সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি,
(গ) মায়োসিস কোষ বিভাজনের সময় হোমোলোগাস ক্রোমোসোমের বিচ্ছিন্নকরণ না ঘটা (Non-disjunction অ্যানাফেজ দশায় দু'মেরুতে সম সংখ্যক ক্রোমোসোম বিতরণ না হওয়া) এবং
(ঘ) অসমসত্ত্ব ক্রোমোসোমের মধ্যে অংশের বিনিময় (Translocation) ইত্যাদি ।
জেনেটিক ডিসওর্ডারের ফলাফল :-
উপরিউক্ত কারণে মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের বংশগত রোগের সৃষ্টি হয়। নিম্নে এ রকম দুটি রোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-১. ডাউন সিন্ড্রোম :
ল্যাংডন ডাউন (১৮৬৬) মঙ্গোলীয় জড় বুদ্ধিতা নামক একটি বংশগত রোগের সিন্ড্রোম বর্ণনা করেন। তার নাম থেকেই এ রোগের নাম ডাউন সিন্ড্রোম।
মানুষের ২১তম ক্রোমোসোমের বিচ্ছিন্নকরণ (Nondisjunction) না ঘটার ফলে এ রোগটি হয়। শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই এ রোগটি সহজে বোঝা যায়। শিশুর চোখের পাতায় অতিরিক্ত একটি ভাঁজ দেখা দেয়। এদের মুখ থাকে খোলা, জিহবা বের হওয়া এবং জিহ্বায় কিছু সংখ্যক ভাঁজ। পানি জমে হাত-পা ফোলা ফোলা থাকে। এর নাম শোথ।
আরও পড়ুন :- ইমিউনিটি সিস্টেম কি?
হাত ও পায়ের তালুর এক পাশ থেকে অপর পাশ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে একটি বিশেষ ভাঁজ বা রেখা। হাত খাটো ও প্রশস্ত, মুখ মন্ডল চেপ্টা ও করোটি গোল, গলা বেশ খাটো, কান নিচের দিকে নামানো, চোখের মনির পাশে বিদ্যমান ব্রাশফিল্ড দাগ, নমনীয় সন্ধিস্থল, ভেতরমুখী বাঁকানো ৫ম আঙ্গুল এবং পায়ের ১ম ও ২য় আঙ্গুলের মধ্যবর্তী বেশ বড় ফাঁক প্রভৃতি ডাউন সিন্ড্রোমের লক্ষণ।
শৈশবে ডাউন সিন্ড্রোমের রোগীরা বেশ হাসিখুশি ও অনুগত থাকে। বড় হলে দেখা যায় এদের বুদ্ধিমত্তা তুলনামূলকভাবে কম।
২. পাটাও-সিন্ড্রোম :
পাটাও সিন্ড্রোম (১৯৬০) এর অন্তর্গত হচ্ছে বহু রকমের দৈহিক গঠনগত ত্রুটি। মানুষের ৮০% ক্রোমোসোমের ১৩ এর প্রাইমারি ট্রাইসোমিক এর ফলে (অর্থাৎ ১৩নং ক্রোমোসোমটি ২টির পরিবর্তে ৩টি থাকে এবং মোট ক্রোমোসোম সংখ্যাও ৪৬টির পরিবর্তে ৪৭টি থাকে) পাটাও সিন্ড্রোম রোগ হয়। বাকি ২০% ক্রোমোসোমে ট্রান্সলোকেশনের ফলে হয়।
এর ফলে ক্ষুদ্র মাথা ও ফাঁপা সম্মুখ মস্তিষ্ক, ঢালু কপাল, ত্রুটিপূর্ণ কানের গঠন, ক্ষুদ্র চোখ, চোখের স্নায়ুর অনুপস্থিতি বা ত্রুটি, চোখের তারা না থাকা, এমনকি চোখ না থাকা, কাঁটা ঠোঁট ও তালু, হৃদপিন্ডের অনেক রকম ত্রুটি, ৫টির বেশি আঙ্গুল, ২য় ও ৫ম আঙ্গুল যথাক্রমে ৩য় ও ৪র্থ আঙ্গুলকে ঘিরে থাকা, লুকানো শুক্রাশয়, দু'মাথাযুক্ত জরায়ু, অল্প বিকশিত ডিম্বাশয়, পায়ের গোড়ালির পেছনদিকে অনেকটা রেকিংচেয়ারের ন্যায় বৃদ্ধি ও বক্রতা, মানসিক বৈকল্য, বধিরত্ব এবং মাংসপেশির অল্প স্বল্প খিঁচুনি। এর ফলে দেড় মাসের মধ্যেই অধিকাংশ শিশু মারা যায়।
আরও পড়ুন :- প্রজনন কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.