অ্যান্টিজেন (Antigen) কাকে বলে :-
অ্যান্টিজেন হচ্ছে যেকোনো বিজাতীয় প্রোটিন বা পলিস্যাকারাইড, যা প্রাণিদেহে থাকে না। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা এদের নিঃসৃত বিষাক্ত পদার্থ অন্যদেহের প্রতিটি কোষে যে প্রোটিন রয়েছে তা নির্দিষ্ট প্রাণিদেহের জন্য অপরিচিত এবং এটিই অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে।একটি অ্যান্টিজেন প্রাণিদেহকে একটি নির্দিষ্টি অ্যান্টিবডি উৎপাদনে উদ্দীপ্ত করে। অ্যান্টিজেন শব্দটি Antibody generating এর সংক্ষিপ্ত রূপ। তাহলে এন্টিজেন কি এবার তা জানা যাক!
যে সব বিজাতীয় জীবাণু বা অধিবিষ দেহে প্রবেশ করলে অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয় তাদের অ্যান্টিজেন বলে।
অ্যান্টিজেনের বিশেষায়িত কিছু থাকে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে ইমিউনো সাড়া (immunogenicity) সৃষ্টির ক্ষমতা থাকতে হবে এবং এরা অবশই non-self বা বহিরাগত বস্তু হবে।
অধিকাংশই অ্যান্টিজেন প্রোটিনধর্মী ও জটিল গঠনবিশিষ্ট। এদের আণবিক ওজন সাধারণত ১০,০০০ ডাল্টনের অধিক। তবে অ্যান্টিজেন জটিল শর্করা অর্থাৎ বৃহদাকার পলিস্যাকারাইড বা বৃহদাকার লাইপোপ্রোটিন বা মিউকোপলিস্যাকারাইড বা গ্লাইকোপ্রোটিন বা নিউক্লিওপ্রোটিনও হতে পারে। অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডির সঙ্গে সংযুক্ত বা আবদ্ধ হতে পারে।
আরও পড়ুন :- ইমিউনিটি সিস্টেম কাকে বলে?
অ্যান্টিজেনধর্মী জটিল প্রোটিনের যে অংশ অ্যান্টিবডির সঙ্গে সংযুক্ত হয় তাকে এপিটোপ (epitope) বা অ্যান্টিজেনিক ডিটারমিন্যান্ট (antigenic determinant) বা নির্ধারক বলে।
কোনো কোনো অ্যান্টিজেনধর্মী প্রোটিনের বা একটি অ্যান্টিজেনের একাধিক এপিটোপ থাকতে পারে। কখনো কখনো বিশেষ ক্ষুদ্র রাসায়নিক অণু (যেমন- নানা ধরনের ওষুধ, ধূলাবালির রাসায়নিক উপাদান, নানা ধরনের শিল্পজাত রাসায়নিক পদার্থ, ত্বকের শুরুনো আঁশের অপজাত পদার্থ, প্রাণীর খুশকিজাত পদার্থ প্রভৃতি) নিজে অ্যান্টিজেন না হলেও কোনো বৃহৎ প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যান্টিজেনধর্মী হয়ে পড়ে ও অ্যান্টিবডির সঙ্গে আবদ্ধ হয়। এমন পদার্থকে বলা হয় হ্যাপ্টেন (hapten)। হ্যাপ্টেনগুলো বিশেষ প্রোটিনের ওপর এপিটোপ হিসেবে কাজ করে।
[ বি:দ্র: রক্ত গ্রুপের (blood group) ক্ষেত্রে, লোহিত রক্তকণিকার আবরণীতে বিদ্যমান বংশগতভাবে উৎপন্ন অ্যান্টিজেন পদার্থ, যা জেনেটিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং ভ্রূণ অবস্থায় উৎপন্ন হয়ে আজীবন অপরিবর্তিত থাকে । মানুষের রক্তে প্রধান তিন ধরনের অ্যান্টিজেন থাকে। যথা - A, B ও Rh.]
অ্যান্টিজেনের বৈশিষ্ট্য :-
১. অ্যান্টিজেনের যে বিশেষ স্থানে অ্যান্টিবডি যুক্ত হয় তাকে অ্যান্টিজেনিক নির্ধারক স্থান ( antigenic determinant site) অথবা এপিটোপ (epitope) বলে।এপিটোপ নির্দিষ্ট রাসায়নিক গ্রুপ থাকে যার সঙ্গে অ্যান্টিবডির অ্যান্টিজেন বাইন্ডিং সাইট (antigen binding site) বা প্যারাটোপ (paratop) যুক্ত হয়।
২. অ্যান্টিজেন নির্ধারক স্থানগুলোকে অন্য কথায় ভ্যালেন্স (valence) বলে, বেশিরভাগ অ্যান্টিজেনের অনেকগুলো অ্যান্টিজেন নির্ধারক স্থান থাকে বলে এগুলোকে মালটিভ্যালেন্ট (mutivallent) বলে।
৩. অ্যান্টিজেনের দুটি বিশেষ ক্ষমতা থাকে, যেমন (i) অনাক্রম্যতাকরণ (immunogenicity)- নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি উৎপাদনের ক্ষমতা; ও (ii) বিক্রিয়াকরণ (reactivity)- উৎপন্ন অ্যান্টিবডির সঙ্গে অ্যান্টিজেনের বিক্রিয়া করার ক্ষমতা।
আরও পড়ুন :- কোলেস্টেরল কি?
যেসব অ্যান্টিজেনের এই দুটি ক্ষমতা থাকে তাদের সম্পূর্ণ অ্যান্টিজেন (complete antigen) বলে।
অ্যান্টিজেনের উদাহরণ :-
সমগ্র অণুজীব (microbes), যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে; আবার অণুজীবের কয়েকটি উপাংশও অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়ার কোনো অংশ, যেমন- ফ্ল্যাজেলা, ক্যাপসিউল ও কোষ প্রাচীর অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ অ্যান্টিজেনধর্মী (antigenic)।ব্যাকটেরিয়াঘটিত অধিবিষ (bacterial toxins) তীব্র অ্যান্টিজেনধর্মী। অণুজীব ছাড়া অন্যান্য পদার্থ, যেমন- ডিমের সাদা অংশ, ফুলের রেণু, গ্রহণ অযোগ্য রক্তকণিকা (incompatible blood cells), কলাকোষের এবং আন্তরযন্ত্রীয় অঙ্গের প্রতিস্থাপন (transplantation) ইত্যাদি অ্যান্টিজেনের উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
অ্যান্টিজেনের প্রকারভেদ :-
অ্যান্টিজেন দু'রকমের হয়। যথা-১. এক্সোজেনাস (Exogenous) ও
২. এন্ডোজেনাস (Endogenous)|
১. এক্সোজেনাস অ্যান্টিজেন (Exogenous antigen )-
যে সব অ্যান্টিজেন প্রাণিদেহের বাইরে উৎপন্ন হয় তাদের এক্সোজেনাস অ্যান্টিজেন বলে। যেমন- পরাগ রেণু দূষক পদার্থ, ভেষজ পদার্থ, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ইত্যাদি।২. এন্ডোজেনাস অ্যান্টিজেন (Endogenous antigen ) -
যে সব অ্যান্টিজেন প্রাণিদেহের ভিতরে উৎপন্ন হয় তাদের এন্ডোজেনাস অ্যান্টিজেন বলে।যেমন- ইঁদুর, বিড়াল, ভেড়া, ঘোড়া প্রভৃতির লোহিত কণিকায় অবস্থিত ফরম্যান অ্যান্টিজেন (foreman antigen) স্তন্যপায়ী প্রাণীর হৃদপিণ্ডে অবস্থিত কার্ডিওলিপিন (cardiolipin) অ্যান্টিজেন এই রকমের অ্যান্টিজেন। এই প্রকার অ্যান্টিজেন বিভিন্ন রকমের হয়। যেমন-
ক. জেনোজেনিক অ্যান্টিজেন (Xenogeneic antigen )-
জাতিজনিগতভাবে পৃথক প্রজাতির দেহে যে সব সমপ্রকৃতির অ্যান্টিজেন দেখা যায় তাদের জেনোজেনিক অ্যান্টিজেন বলে।
খ. অটোলোগাস অ্যান্টিজেন (Autologous antigen)-
বিশেষ পরিস্থিতিতে যখন দেহ গঠনকারী কোনো উপাদান অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে তখন তাকে অটোলোগাস অ্যান্টিজেন বলে।
গ. অ্যানোজেনিক অ্যান্টিজেন ( Allogeneic antigen )-
একই প্রজাতির দুটি প্রাণীর যে সব অ্যান্টিজেন জিনগতভাবে নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু অ্যান্টিজেনিক ভিটামিন্যান্টস দ্বারা পরস্পরের থেকে পৃথক, তাদের অ্যালোজেনিক অ্যান্টিজেন বলে। এ ধরনের অ্যান্টিজেন লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা, অণুচক্রিকা, সিরাম প্রোটিন প্রভৃতিতে থাকে।
আরও পড়ুন :- গ্যামেটোজেনেসিস কি?
অ্যান্টিজেনের সাধারণ ধর্ম (General properties of antigen) :-
অ্যান্টিজেনের প্রধান কয়েকটি ধর্ম হলো-১. রাসায়নিক প্রকৃতি- অ্যান্টিজেন প্রধানত প্রোটিন। কিন্তু অ্যান্টিজেন পলিস্যাকারাইড ও লাইপোপ্রোটিন জাতীয় হয়।
২. বহিরাগত ধর্ম- বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অ্যান্টিজেন সাধারণত বহিরাগত হয়।
৩. আণবিক ভর- কার্যকরী অ্যান্টিজেনের আণবিক ভর সাধারণত 10,000 ডাস্টনের বেশি। সর্বাপেক্ষা ভালো অ্যান্টিজেনের আণবিক ভর মোটামুটি 10,000 ডাল্টন হওয়া প্রয়োজন। ইনসুলিনের আণবিক ভর 5000 D।
৪. উপলব্ধি ক্ষমতা- কোনো পদার্থকে অ্যান্টিজেন হতে হলে তার এমন কিছু গঠন বা ডিটারমিন্যান্ট গ্রুপ থাকা প্রয়োজন যা অনাক্রম্য তন্ত্রের বিভিন্ন উপাদান কর্তৃক চিহ্নিত হতে পারে।
৫. প্রজাতি নির্দিষ্টতা - একই প্রজাতির অন্তর্গত সব প্রাণীর কলাতে প্রজাতি নির্দিষ্টতা অ্যান্টিজেন থাকে ।
৬. অঙ্গ নির্দিষ্টতা- নির্দিষ্ট কোনো কলা বা অঙ্গে অঙ্গ নির্দিষ্টতা অ্যান্টিজেন থাকে।
আরও দেখুন :- অ্যান্টিবডি কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.