ভাইরাস কাকে বলে? ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য?

ভাইরাস কাকে বলে :-

সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু, জলাতঙ্ক, গুটিবসন্ত, জলবসন্ত, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু ভাইরাল হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগের কথা প্রায়ই আমরা শুনে থাকি, কখনও নিজেরাই আক্রান্ত হই। এগুলো সবই ভাইরাসজনিত রোগ। মানুষের ন্যায় অন্যান্য প্রাণীসহ পাছপালারও ভাইরাসজনিত রোগ হয়। তাহলে ভাইরাস কী ? বিষয়টি আমাদের জানা দরকার।

ভাইরাস একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোনো বিষাক্ত পদার্থকেই ভাইরাস বলা হত। এরা অকোষীয় এবং আকারে এতই ছোট যে খালি চোখেতো দূরের কথা, সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও দেখা যায় না। এদেরকে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে হয়।

ভাইরাস নিউক্লিক অ্যাসিড (যা কেন্দ্রে থাকে) ও প্রোটিন (যা আবরণ হিসেবে থাকে) দিয়ে গঠিত অতি আণুবীক্ষণিক বজ্র যা জীবদেহের অভ্যন্তরে সক্রিয় হয় এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে তথায় রোগ সৃষ্টি করে কিন্তু জীবদেহের বাইরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় অবস্থান করে।

উদ্ভিদ, প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া, সায়ানোব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যাকটিনোমাইসিটিস প্রভৃতি জীবদেহের সঞ্জীব কোষে ভাইরাস সক্রিয় অবস্থায় বিরাজ করে।

আরও পড়ুন :- ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে?

আবার বায়ু, মাটি, পানি ইত্যাদি জড় মাধ্যমে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় অবস্থায় অবস্থান করে। কাজেই ভাইরাস জীব এবং জড় উভয় অবস্থায় অবস্থান করে।

অ্যাডঞ্চ মেয়ার (Adolf Mayer) ১৮৮৬ সালে সর্বপ্রথম তামাক গাছের মোজাইক রোগের কারণ বর্ণনা করেন। তিনি তামাক গাছের পাতায় ছোপ ছোপ দাগ দেখতে পান। পাতাগুলো নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। পাতার দাগগুলো ছিল মোজাইক এর ন্যায়। তাই তিনি এ রোগের নাম তামাকের মোজাইক রোগ বলে আখ্যায়িত করেন।

রাশিয়ান বিজ্ঞানী দিমিত্রি আইভানোভসকি (১৮৯২) গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন- তামাক গাছের মোজাইক রোগের জীবাণু ব্যাকটেরিয়া হতে ক্ষুদ্র আকারের। আমেরিকান বিজ্ঞানী স্ট্যানলি (Stanley) ১৯৩৫ সালে তামাক গাছের মোজাইক ভাইরাসকে পৃথক করে কেলাসিত করেন। তিনি সে জন্য ১৯৪৬ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

বিজ্ঞানী এন. ডব্লিউ. পিরি (N.W.Piri) এবং এফ. সি. বাওডেন (F. C. Bawden) ১৯৩৭ সালে ভাইরাসের রাসায়নিক প্রকৃতি বর্ণনা করেন এবং বলেন নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দিয়ে ভাইরাস দেহ গঠিত।
ভাইরাস কাকে বলে

ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য :-

ভাইরাস কখনও জীবের ন্যায় আচরণ করে। আবার কখনও জড়ের ন্যায় আচরণ করে। তাই ভাইরাসে জীব এবং গড় উভয় বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান। যেমন

আরও পড়ুন :- প্রোটিন কাকে বলে?

ভাইরাসের জীব বৈশিষ্ট্য :

  • ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড হিসেবে DNA বা RNA থাকে।
  • পোষক কোষের অভ্যন্তরে এরা সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে।
  • এতে জেনেটিক রিকম্বিনেশন ঘটতে দেখা যায়।
  • ভাইরাস মিউটেশন ঘটাতে এবং প্রকরণ তৈরি করতে সক্ষম।
  • নতুন সৃষ্ট ভাইরাসে মূল ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে অর্থাৎ একটি ভাইরাস তার অনুরূপ ভাইরাস জন্ম দিতে পারে।
  • ভাইরাস সুনির্দিষ্টভাবে বাধ্যতামূলক পরজীবি ।

ভাইরাসে জড় বৈশিষ্ট্য :

  • ভাইরাস অকোষীয়। এদের সাইটোপ্লাজম, কোষ ঝিল্লী, কোষ প্রাচীর, রাইবোসোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, নিউক্লিয়াস ইত্যাদি থাকে না।
  • এদের বিপাকীয় এনজাইম এবং পুষ্টি প্রক্রিয়া অনুপস্থিত।
  • এদের কোন জৈবিক কার্যকলাপ যেমন প্রজনন অন্য সজীব কোষ ছাড়া ঘটতে পারে না।
  • ভাইরাসকে কেলাসিত করা যায়, সেন্ট্রিফিউজ করা যায়, ব্যাপন করা যায়, পানির সাথে মিশিয়ে সাসপেনশন তৈরি করা যায় এবং তলানিও করা যায়।
  • জীবকোষের বাইরে ভাইরাস রাসায়নিক কণার ন্যায় নিষ্ক্রিয় থাকে।

অকোষীয় ভাইরাসে দু'রকমের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে একে জীব ও জড়ের মধ্যকার সেতুবন্ধন বলা হয়। প্রাণ রসায়নবিদগণ ভাইরাসের জড় বৈশিষ্ট্যসমূহকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু অণুজীব বিজ্ঞানীগণ ভাইরাসের জীব বৈশিষ্ট্যসমূহকে প্রাধান্য দেন।

আরও পড়ুন :- জিন কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ