উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য?

পৃথিবী বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আবাসস্থল, যা বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত। আমরা জানি যে উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু আমরা সেগুলি সবই জানি না। 

যখন আমরা উদ্ভিদ বলি, তখন আমরা সবুজ জিনিসের কথা চিন্তা করি যা তাদের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে। একইভাবে, আপনি যখন 'প্রাণী' শব্দটি শুনবেন, তখন আপনি একটি সঠিক অঙ্গ সিস্টেমের সাথে একটি সু-বিকশিত শরীর সহ জীবের কথা ভাবতে পারেন। এইভাবে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য করা সহজ।

উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য :-

১. উদ্ভিদ দেহ গঠনকারী কোষ জড় কোষ প্রাচীরবিশিষ্ট। প্রাণী দেহ গঠনকারী কোষে কোন জড় কোষ প্রাচীর থাকে না।

২. উদ্ভিদ কঠিন খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। এরা তরল ও গ্যাসীয় খাদ্য শোষণ প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করে। সবুজ উদ্ভিদ ( ক্লোরোপ্লাস্ট এর উপস্থিতির কারণে) নিজ খাদ্য প্রস্তুত করে। প্রাণী কঠিন ও তরল খাদ্য গলধঃকরণ করে। কোন খাদ্য তৈরি করতে পারে না।

৩. উদ্ভিদ দেহে কোন সুগঠিত পরিপাকতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র, রেচনতন্ত্র ইত্যাদি নেই। প্রাণীতে এসব তন্ত্র আছে। 

৪. উদ্ভিদ সাধারণতঃ স্থান ত্যাগ করতে পারে না। প্রাণী সাধারণত স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে পারে।

৫. উদ্ভিদ দেহের বৃদ্ধি, মূল ও শাখা-প্রশাখার শীর্ষে ঘটে। প্রাণীর বৃদ্ধি সকল অঙ্গে ঘটে থাকে।


উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মধ্যে সাদৃশ্য:-

  • উভয়ই উদ্দীপনায় সাড়া দেয়।
  • জীবিত সত্তা উভয়ই শ্বাস নেয়, প্রজনন করে, বৃদ্ধি পায়।
  • উদ্ভিদ এবং প্রাণী পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
  • তাদের গঠনের মৌলিক একক হল ইউক্যারিওটিক কোষ।
  • বায়ু এবং জল বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক প্রয়োজন।
  • তারা সঠিকভাবে বৃদ্ধি এবং বিকাশ করে।

উদ্ভিদ কাকে বলে?

যেসব জীবের দেহ মূল, কান্ড, পাতায় বিভক্ত এবং যাদের অধিকাংশই সূর্যের আলো থেকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে এবং একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে না তাদেরকে উদ্ভিদ বলে। যেমন – আম গাছ, জাম গাছ, কাঁঠাল গাছ ইত্যাদি।

এক কথায় বলা যায়, যা মাটি ভেদ করে উঠে কিন্তু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে না তাকে উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন – মরিচ, জাম, আম,লিচু, সুপারি গাছ ইত্যাদি।

উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য :-

  • উদ্ভিদের মূল, কান্ড, পাতা ও শাখা-প্রশাখা রয়েছে।
  • এরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে পারে না।
  • এরা মূলের সাহায্যে মাটিতে আটকে থাকে।
  • সূর্যের আলো ও পানি ব্যবহার করে এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারে।
  • এরা দেখতে পায় না, শুনতে পায় না এবং ঘ্রাণ নিতে পারে না।
  • সূর্যালোক থেকে শক্তি গ্রহণ করে।
  • বেশিরভাগ উদ্ভিদ মাটিতেই প্রোথিত হয়।
  • এরা তুষারময় পাহাড়ের ঢাল থেকে শুষ্ক, গরম মরুভূমি পর্যন্ত, পৃথিবীর প্রায় সবজায়গায় বেঁচে থাকতে পারে।
  • সূর্যের আলো ও পানি ছাড়া উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না।
  • উদাহরণঃ ধান, গম, কাঁঠাল গাছ, ভুট্টা, আম গাছ ইত্যাদি।

উদ্ভিদের প্রকারভেদ

উদ্ভিদকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো –

  1. অপুষ্পক বা ক্রিপটোগ‍্যামস উদ্ভিদ (Cryptogams)
  2. সপুষ্পক বা ফ্যানারােগ্যামস উদ্ভিদ (Phanerogams)

প্রাণী কাকে বলে :-

যে সকল জীব পরভোজী, সচল, নির্দিষ্ট দেহাকৃতি বিশিষ্ট, উত্তেজনায় সাড়া প্রদান করে এবং সেলুলোজ নির্মিত কোষ প্রাচীর থাকে না তাদেরকে সাধারণত প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

আরও পড়ুন:- কোষ কাকে বলে?

প্রাণীর বৈশিষ্ট্য :-

নিম্নে প্রাণীর কতকগুলি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল-

  • প্রাণী সাধারণত নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে না। এরা পরভোজী বা হলজোয়িক পুষ্টি পদ্ধতিতে পুষ্টি সাধন করে।
  • প্রাণী দেহে পরিপাক, রেচন, রক্ত সংবহন ও প্রজনন সংঘটিত হয়।
  • এরা সচল অর্থাৎ সাধারণত চলাচলে সক্ষম।
  • সংবেদী অঙ্গের মাধ্যমে প্রাণী দ্রুত সাড়া প্রদান করতে সক্ষম।
  • এদের দৈহিক বৃদ্ধি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘটে।
  • এদের কোষে কোষ প্রাচীর থাকে না।
  • প্রাণী কোষে সেন্ট্রিওল থাকে না।
  • প্রাণী দেহে নাইট্রোজেনঘটিত রেচন পদার্থ ইউরিয়া তৈরি হয়।

উপসংহার :-

এই প্রসঙ্গে, আমরা মূল পয়েন্টগুলির অধ্যয়ন করেছি যার থেকে আমরা বলতে পারি উদ্ভিদ প্রাণী থেকে পৃথক। আমরা বলতে পারি যে, কয়েকটি বিষয়ে মিল থাকলেও উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

আরেকটি বিষয় হল বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখার জন্য উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই তারা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ