শৈবাল কাকে বলে :-
শৈবাল সমাঙ্গদেহা বিভাগের অন্তর্গত ক্লোরোফিল সমন্বিত এক প্রকার প্রাচীনতম নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ। শৈবালের দেহ থ্যালাসের ন্যায় কিন্তু দেহকোষে ক্লোরোফিল থাকাতে এরা স্বভোজী।অর্থাৎ আলোকের উপস্থিতিতে এবং পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সহায়তায় এরা নিজেরা নিজেদের দেহকোষে খাদ্য (শর্করা) প্রস্তুত করতে সক্ষম।
শৈবালের দেহকোষে প্রধান রঞ্জক পদার্থ সবুজ বর্ণের ক্লোরোফিল উপস্থিত থাকলেও অনেক সময় নানা রকম ভিন্ন রঞ্জক পদার্থ দিয়ে এরা আবৃত থাকে। ঐ সব রঞ্জক পদার্থের উপর ভিত্তি করে শৈবালের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। শৈবালের দেহকোষে সুগঠিত ও স্বতন্ত্র নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং অন্যান্য কোষ অঙ্গাণু থাকে। প্রোক্যারিয়োটিক হওয়ায় নীলাভ সবুজ শৈবাল বর্তমানে সায়ানো ব্যাকটেরিয়া হিসেবে বিবেচিত।
শৈবাল কখনও এককভাবে, কখনও দলবদ্ধভাবে নালা নর্দমা, পুকুর, হ্রদ, নদী, সাগর, এক কথায় পৃথিবীর সমস্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে রয়েছে এদের প্রায় ত্রিশ হাজার প্রজাতি।
বসবাসের প্রকৃতি অনুযায়ী এদের বিভিন্ন নাম দেয়া হয়। যেমন-
জলাশয়ে পানির নিচে মাটিতে আবদ্ধ শৈবালকে বেনথিক শৈবাল বলা হয়।
আরও পড়ুন :- দ্বিপদ নামকরণ কাকে বলে?
পাথরের গায়ে জন্মানো শৈবালকে লিখোফাইটিক শৈবাল বলা হয়।
উচ্চশ্রেণির জীবের টিস্যুর অভ্যন্তরে জন্মানো শৈবালকে এন্ডোফাইটিক শৈবাল বলা হয়।
যে সমস্ত শৈবাল অন্যান্য উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদ অথবা অন্য শৈবালের গায়ে জন্মায় তাদের এপিফাইটিক শৈবাল বলা হয়।
সম্পূর্ণ ভাসমান এককোষী শৈবালদেরকে ফাইটোপ্লাঙ্কটন বলা হয়।
শৈবালের হাজার হাজার প্রজাতির মধ্যে আকার, আকৃতি ও গঠনে বহু পার্থক্য থাকলেও কতিপয় মৌলিক বৈশিষ্ট্যে এরা একই রকম। তাই এরা শৈবাল নামে পরিচিত।
শৈবাল তিনটি প্রক্রিয়ায় জনন কার্য সম্পন্ন করে। যেমন-
ক) অঙ্গজ জনন,
খ) অযৌন জনন এবং
গ) যৌন জনন ।
শৈবালের বৈশিষ্ট্য :-
শৈবালে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়১. এরা সবাই অপুষ্পক ।
২. এরা স্বভোজী অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার নিজেরা নিজেদের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে।
৩. এরা প্রকৃতকোষী, এককোষী অথবা বহুকোষী হয়। এরা সমাজদেহী উদ্ভিদ অর্থাৎ এদেরকে মূল, কান্ড এবং পাতায় বিভক্ত করা যায় না।
৪. এদের দেহে ভাস্কুলার টিস্যু (পরিবহন টিস্যু) থাকে না।
৫. অধিকাংশ শৈবালের জননাঙ্গ এককোষী। কোন কোন শৈবালের জননাঙ্গ বহুকোষী হয়। জননাঙ্গ বহুকোষী হলে তা বন্ধ্যা কোষের স্তর দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে না।
৬. এদের রেণুথলি (স্পোরাঞ্জিয়া) সব সময় এককোষী।
৭. এদের জাইগোট স্ত্রীজননাঙ্গে থাকা অবস্থায় কখনও বহুকোষী ভ্রূণে পরিণত হয় না।
৮. এদের কোষ প্রাচীর সাধারণত সেলুলোজ ও পেকটিন দিয়ে গঠিত।
৯. গ্যামিটের মিলনের পরেও এদের বহুকোষী ভ্রূণ গঠিত হয় না।
১০. সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া এদের সঞ্চিত খাদ্য শর্করা।
আরও পড়ুন :- ছত্রাক কাকে বলে?
শৈবালের গঠন :-
শৈবালের গঠনকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-ক) বাহ্যিক গঠন এবং
খ) কোষীয় গঠন।
ক) বাহ্যিক গঠন :
এরা আণুবীক্ষণিক থেকে অনেক দীর্ঘাকার হয়। বাদামি শৈবাল ৬০ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ বা লম্বা হয়। যেমন- Macrocystis sp। এককোষী শৈবাল যাদের ফ্ল্যাজেলা থাকে তারা সচল, যেমন- Chlamydomonas এবং যাদের ফ্ল্যাজেলা থাকে না তারা নিশ্চল হয়, যেমন- Chlorella। কোন কোন শৈবালের দেহে পর্ব মধ্যপর্ব উপস্থিত, যেমন- Chara কোন কোন শৈবালের দেহ লম্বা পাতার ন্যায়, যেমন- Uiva। সর্বোপরি শৈবালের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠনে প্রচুর পার্থক্য বিদ্যমান।খ) কোষীয় গঠন :
সব শৈবালই প্রকৃতকোষী। শৈবাল কোষের গঠন প্রায় উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদ কোষের ন্যায়। এদের কোষের বাইরে সেলুলোজ নির্মিত জড় কোষ প্রাচীর থাকে। কোষ প্রাচীরের ভেতরের দিকে কোষ ঝিল্পী বিদ্যমান থাকে। কোষ ঝিল্পী দিয়ে আবৃত থাকে সাইটোপ্লাজম। সাইটোপ্লাজমে বিদ্যমান থাকে সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, পাইরিনয়েড, রাইবোসোম ইত্যাদি অঙ্গাণু এবং সঞ্চিত খাদ্য।আরও পড়ুন :- ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.