লিপিড কি :-
উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক পদার্থের নাম লিপিড।লিপিড কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সমন্বয়ে গঠিত কিন্তু এখানে তুলনামূলকভাবে কার্বোহাইড্রেট হতে কম পরিমাণে অক্সিজেন থাকে।
লিপিড সম্পৃক্ত বা অসম্পৃক্ত যৌগিক পদার্থ। এটি পানিতে অদ্রবণীয় কিন্তু ইথার, জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয়। লিপিড সাধারণত গ্লিসারল ও ফ্যাটি অ্যাসিডের এস্টার।
লিপিডের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানি অপেক্ষা কম। সেজন্য লিপিড পানিতে ভাসমান থাকে। সাধারণ তাপমাত্রায় কতিপয় লিপিড শক্ত থাকে কিন্তু ১০°-২০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কতিপয় লিপিড তরল থাকে।
উদ্ভিদ দেহে ফল ও বীজে অধিক পরিমাণে লিপিড সঞ্চিত দ্রব্য হিসেবে থাকে। সরিষা, সয়াবিন, তিল, চিনাবাদাম, রেড়ি বা ভেরেন্ডা, নারিকেল, পাম অয়েল বীজ ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ দ্রব্যে উদ্ভিজ্জ ফ্যাট এবং মাছ, মাংস, মাখন, দুধ, ঘি, চর্বি, ডিম ইত্যাদি দ্রব্যে প্রাণীজ ফ্যাট পাওয়া যায়।
সাধারণভাবে গ্লিসারল এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের সমন্বয়ে লিপিড গঠিত হয়। ফসফোলিপিড-এ গ্লিসারল ও ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়া ফসফরাস এবং নাইট্রোজেন বেস থাকে। গ্লাইকোলিপিড-এ ফ্যাটি অ্যাসিড, স্যুগার ও নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ থাকে। মোম জাতীয় লিপিডে গ্লিসারল এর পরিবর্তে অ্যালকোহল বা কোলেস্টেরল থাকে।
লিপিডের বৈশিষ্ট্য :-
লিপিড পানিতে প্রায় অদ্রবণীয়, এটি বর্ণহীন, স্বাদহীন এবং গন্ধহীন পদার্থ। এরা ইথার, অ্যালকোহল, বেনজিন, ক্লোরোফরম, অ্যাসিটোন, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি দ্রবণে দ্রবণীয়।এরা ফ্যাটি অ্যাসিডের এস্টার হিসেবে বিরাজ করে। লিপিড পানির চেয়ে হালকা, তাই এটি পানিতে ভাসে। হাইড্রোলাইসিস শেষে এরা ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়। লিপিডের আণবিক ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে এদের গলনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়।
লিপিডের কাজ :-
১. চর্বি ও তেল জাতীয় লিপিড উদ্ভিদদেহে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে জমা থাকে। বিভিন্ন তেল বীজের (যেমন সরিষা, ভিল, সয়াবিন ইত্যাদি) অঙ্কুরোদগমকালে লিপিড খাদ্যরূপে গৃহীত হয়। এদের বিজারণকালে অধিক ATP তৈরি হয়। ফসফোলিপিড ও গ্লাইকোলিপিড সেল মেমব্রেন ও অন্যান্য কোষ অঙ্গাণুর মেমব্রেন গঠনকারী পদার্থ হিসেবে কাজ করে।২. মোম জাতীয় লিপিড পাতার বহিরাবরণে স্তর অর্থাৎ কিউটিকল সৃষ্টি করে অতিরিক্ত প্রস্বেদন রোধ করে।
৩. কতিপয় এনজাইমের প্রোসথেটিক গ্রুপ হিসেবে ফসফোলিপিড কাজ করে। এছাড়া ফসফোলিপিড আয়নের বাহক হিসেবেও কাজ করে।
৪. সালোকসংশ্লেষণে গ্লাইকোলিপিড বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৫. প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়ে লিপোপ্রোটিন গঠন করে এবং লিপোপ্রোটিন শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকে।
লিপিডের শ্রেণিবিভাগ :-
গঠন প্রকৃতি অনুসারে লিপিড প্রধানত তিন প্রকার। যথা-ক) সরল লিপিড,
খ) যৌগিক লিপিড এবং
গ) উৎপাদিত লিপিড।
নিম্নে কয়েক প্রকার লিপিড সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো
আরও পড়ুন :- কোষ বিভাজন কাকে বলে?
ক) সরল লিপিড :-
যে সকল লিপিডের বিশ্লেষণে স্নেহ পদার্থ ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায় না তাদেরকে সরল লিপিড বলা হয়। সরল লিপিড দু'প্রকার। যথা-১. স্নেহদ্রব্য :
ফ্যাটি অ্যাসিডের গ্লিসারল এস্টারই স্নেহদ্রব্য। এতে তিন অণু ফ্যাটি অ্যাসিডের সাথে এক অণু গ্লিসারল যুক্ত হয়। একে ট্রাইগ্লিসারাইডও বলা হয়। ট্রাইগ্লিসারাইড দু'প্রকার। যথা-
i. চর্বি :
যে সকল ট্রাইগ্লিসারাইড সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে সাধারণ তাপমাত্রায় (যেমন ২০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায়) কঠিন অবস্থায় বিরাজ করে তাদেরকে বলা হয় চর্বি। যেমন- উদ্ভিজ্জ চর্বি, নারিকেল তেল ও পামওয়েল।
ii. তেল :
যে সকল ট্রাইগ্লিসারাইড অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে সাধারণ তাপমাত্রায় (যেমন- ২০° সেলসিয়াস) তরল অবস্থায় বিরাজ করে তাদেরকে বলা হয় তেল। যেমন- সাধারণ ভোজ্জ তেল। এর গলনাঙ্ক খুব কম।
চর্বি ও তেলের কাজ :-
ফল ও বীজে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে জমা থাকে। বীজের অঙ্কুরোদগমকালে কার্বোহাইড্রেট এ পরিবর্তিত হয়ে বর্ধিষ্ণু চারার খাদ্য ও শক্তি যোগায়।
২. মোম :
ফ্যাটি অ্যাসিড যখন ট্রাই হাইড্রিক অ্যালকোহলের পরিবর্তে মনোহাইড্রিক অ্যালকোহলবিশিষ্ট উপাদানের সাথে এস্টারীভূত হয় তখন তাকে মোম বলা হয়।
কোন কোন উদ্ভিদে প্রাপ্ত মোম ২৪ থেকে ৩৬ কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট হয়। মৌচাক থেকেও প্রাকৃতিক মোম পাওয়া যায়।
মোমের বৈশিষ্ট্য :-
মোম পানিতে অদ্রবণীয় এবং রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়, কারণ এদের হাইড্রোকার্বন চেইন এ কোন ডবল বন্ড থাকে না। সাধারণ তাপমাত্রায় মোম কঠিন অবস্থায় বিরাজ করে।
ফ্যাটি অ্যাসিড যখন ট্রাই হাইড্রিক অ্যালকোহলের পরিবর্তে মনোহাইড্রিক অ্যালকোহলবিশিষ্ট উপাদানের সাথে এস্টারীভূত হয় তখন তাকে মোম বলা হয়।
কোন কোন উদ্ভিদে প্রাপ্ত মোম ২৪ থেকে ৩৬ কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট হয়। মৌচাক থেকেও প্রাকৃতিক মোম পাওয়া যায়।
মোমের বৈশিষ্ট্য :-
মোম পানিতে অদ্রবণীয় এবং রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়, কারণ এদের হাইড্রোকার্বন চেইন এ কোন ডবল বন্ড থাকে না। সাধারণ তাপমাত্রায় মোম কঠিন অবস্থায় বিরাজ করে।
খ) যৌগিক লিপিড :-
যে সকল লিপিড সরল লিপিডের সাথে কিছু জৈব ও অজৈব পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি তাদেরকে বলা হয় যৌগিক লিপিড। এটি স্নেহ এবং দেহহীন জাতীয় যৌগ। এরা তিন প্রকার। যথা- আরও পড়ুন :- শ্বসন কি? এর কাজ?
১. ফসফোলিপিড :
গ্লিসারল, দু'অণু ফ্যাটি অ্যাসিড ও এক অণু ফসফেটের সমন্বয়ে গঠিত লিপিডকে বলা হয় ফসফোলিপিড।
ফসফোলিপিড এক প্রকার যৌগিক লিপিড অর্থাৎ এ লিপিড়ে অস্নেহ পদার্থ মিশ্রিত থাকে। ফসফোটাইডিক অ্যাসিড একটি সরলতম ফসফোলিপিড কিন্তু ইহা উদ্ভিদে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। এটি অন্যান্য ফসফোলিপিড তৈরির মধ্যবর্তী বস্তু হিসেবে কাজ করে।
লেসিথিন, কেফালিন, প্লাজমালোজেন ইত্যাদি ফসফোলিপিড। ফসফোলিপিডের বিশেষ উপাদান হলো ফসফোটাইডিক অ্যাসিড। এর ফসফেট অংশটি কোলিন দ্বারা এস্টারীভূত হলে ফসফোলিপিডটি লেসিথিন নামে পরিচিত হয়। অনুরূপভাবে সেরিন হাইড্রোব্রিল দ্বারা এস্টারীভূত হলে কেফালিন উৎপন্ন করে।
ফসফোটাইডিক অ্যাসিডের ফসফেট বর্গটি ইথানল অ্যামাইন দ্বারা এস্টারীভূত হলে তাকে কেফালিন বলা হয়। সেল এনভেলাপ, মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট, টনোপ্লাস্ট, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, নিউক্লিয়ার এনভেলাপ ইত্যাদি পর্দা ফসফোলিপিড সংবলিত।
ফসফোলিপিডের কাজ :-
কোষ ঝিল্লী এবং বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণুর ঝিল্লীর গাঠনিক পদার্থ হিসেবে কাজ করে। আয়ন বাহক হিসেবে কাজ করে। কয়েকটি এনজাইমের প্রোসথেটিক গ্রুপ হিসেবে ফসফোলিপিড থাকে। ফসফোলিপিড রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। কোষের ভেদ্যতা ও পরিবহন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
২. গ্লাইকোলিপিড :
যে লিপিডসমূহে গ্লিসারণের আলফা অবস্থানের হাইড্রোক্সিল গ্রুপের সাথে গ্লাইকোসাইডিক বন্ধনী দ্বারা গ্লুকোজ বা গ্যালাকটোজ যুক্ত থাকে তাকে গ্লাইকোলিপিড বলা হয়।
উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণকারী অঙ্গে ফসফোলিপিড অপেক্ষা গ্লাইকোলিপিড বেশি পরিমাণে সঞ্চিত থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টের মেমব্রেনে গ্লাইকোলিপিড অধিক পরিমাণে থাকে।
বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে সূর্যমুখী ও তুলার বীজ থেকে গ্লাইকোলিপিড শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
গ্লাইকোলিপিডের কাজ :-
সালোকসংশ্লেষণকারী অঙ্গাণু গঠনে গ্রাইকোলিপিডের ভূমিকা থাকে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
৩. সালফোলিপিড :
যে সকল গ্লাইকোলিপিডের সাথে সালফার যুক্ত থাকে তাদেরকে বলা হয় সালফোলিপিড। উদ্ভিদে সালফোলিপিড প্রচুর পরিমাণে থাকে। তবে ক্লোরোপ্লাস্টে এটি সীমিত আকারে থাকে।
১. ফসফোলিপিড :
গ্লিসারল, দু'অণু ফ্যাটি অ্যাসিড ও এক অণু ফসফেটের সমন্বয়ে গঠিত লিপিডকে বলা হয় ফসফোলিপিড।
ফসফোলিপিড এক প্রকার যৌগিক লিপিড অর্থাৎ এ লিপিড়ে অস্নেহ পদার্থ মিশ্রিত থাকে। ফসফোটাইডিক অ্যাসিড একটি সরলতম ফসফোলিপিড কিন্তু ইহা উদ্ভিদে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। এটি অন্যান্য ফসফোলিপিড তৈরির মধ্যবর্তী বস্তু হিসেবে কাজ করে।
লেসিথিন, কেফালিন, প্লাজমালোজেন ইত্যাদি ফসফোলিপিড। ফসফোলিপিডের বিশেষ উপাদান হলো ফসফোটাইডিক অ্যাসিড। এর ফসফেট অংশটি কোলিন দ্বারা এস্টারীভূত হলে ফসফোলিপিডটি লেসিথিন নামে পরিচিত হয়। অনুরূপভাবে সেরিন হাইড্রোব্রিল দ্বারা এস্টারীভূত হলে কেফালিন উৎপন্ন করে।
ফসফোটাইডিক অ্যাসিডের ফসফেট বর্গটি ইথানল অ্যামাইন দ্বারা এস্টারীভূত হলে তাকে কেফালিন বলা হয়। সেল এনভেলাপ, মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট, টনোপ্লাস্ট, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, নিউক্লিয়ার এনভেলাপ ইত্যাদি পর্দা ফসফোলিপিড সংবলিত।
ফসফোলিপিডের কাজ :-
কোষ ঝিল্লী এবং বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণুর ঝিল্লীর গাঠনিক পদার্থ হিসেবে কাজ করে। আয়ন বাহক হিসেবে কাজ করে। কয়েকটি এনজাইমের প্রোসথেটিক গ্রুপ হিসেবে ফসফোলিপিড থাকে। ফসফোলিপিড রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। কোষের ভেদ্যতা ও পরিবহন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
২. গ্লাইকোলিপিড :
যে লিপিডসমূহে গ্লিসারণের আলফা অবস্থানের হাইড্রোক্সিল গ্রুপের সাথে গ্লাইকোসাইডিক বন্ধনী দ্বারা গ্লুকোজ বা গ্যালাকটোজ যুক্ত থাকে তাকে গ্লাইকোলিপিড বলা হয়।
উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণকারী অঙ্গে ফসফোলিপিড অপেক্ষা গ্লাইকোলিপিড বেশি পরিমাণে সঞ্চিত থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টের মেমব্রেনে গ্লাইকোলিপিড অধিক পরিমাণে থাকে।
বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে সূর্যমুখী ও তুলার বীজ থেকে গ্লাইকোলিপিড শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
গ্লাইকোলিপিডের কাজ :-
সালোকসংশ্লেষণকারী অঙ্গাণু গঠনে গ্রাইকোলিপিডের ভূমিকা থাকে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।
৩. সালফোলিপিড :
যে সকল গ্লাইকোলিপিডের সাথে সালফার যুক্ত থাকে তাদেরকে বলা হয় সালফোলিপিড। উদ্ভিদে সালফোলিপিড প্রচুর পরিমাণে থাকে। তবে ক্লোরোপ্লাস্টে এটি সীমিত আকারে থাকে।
গ) উৎপাদিত লিপিড :-
যৌগিক লিপিডের আর্দ্রবিশ্লেষণের ফলে যে লিপিড় উদ্ভুত হয় তাদেরকে উৎপাদিত লিপিড বলা হয়। এর অপর নাম উদ্ভূত লিপিড। যেমন- স্টেরয়েড, টারপিনস, রাবার ইত্যাদি।আরও পড়ুন:- রাইবোসোম কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.