দুটি জীব নিজ নিজ প্রয়োজনে ঘনিষ্ঠভাবে একত্রে অবস্থান করে। এরা উভয়ে একে অপরের উপকার করে। তাদের এ অবস্থান ও সম্পর্ককে মিথোজীবীতা এবং জীব দুটিকে মিথোজীবী জীব বলা হয়।
লাইকেন এর ছত্রাকটি থ্যালয়েড এর প্রধান অংশ গঠন করে। এটি শৈবালকে আশ্রয় দেয়। লাইকেনের মোট ভরের ৫-১০% ভর শৈবালের। শৈবাল থেকে উৎপাদিত খাদ্য খেয়ে ছত্রাক জীবন ধারণ করে। লাইকেন স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিষমপৃষ্ঠ এবং অপুষ্পক উদ্ভিদ। বিভিন্ন গবেষণায় এ পর্যন্ত ১৭,০০০ লাইকেন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন :- প্রোটিন কাকে বলে?
লাইকেন গাছের বাকল, পাতা, ক্ষয়প্রাপ্ত গুঁড়ি, মাটি, দেয়াল, পাথর, পর্বতগাত্র ইত্যাদি বস্তুর উপর জন্মায়। তুন্দ্রা অঞ্চল, মরু অঞ্চল, নীরস পর্বতগাত্রসহ সমস্ত প্রতিকূল অবস্থানে এরা জন্মাতে পারে।
ক) ক্রাসটোজ লাইকেন,
খ) ফোলিয়োজ লাইকেন এবং
গ) ফ্রুটিকোজ লাইকেন।
ক) ক্রাসটোজ লাইকেন :
এরা চ্যাপ্টা, ক্ষুদ্রাকার এবং পোষক বস্তুর সাথে নিবিড়ভাবে লেগে থাকে। এরা পাহাড় পর্বত, প্রস্তর খন্ড, পুরাতন অট্টালিকা, উদ্ভিদের বাকল প্রভৃতি অবলম্বনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংলগ্ন থাকে।
যেমন- Cryptothecia rubrocincta, Diploicia canescens
খ) ফোলিয়োজ লাইকেন :
এ ধরনের লাইকেন দেখতে অনেকটা বিষমপৃষ্ঠ পাতার ন্যায়। এরা প্রশস্ত এবং এদের কিনারা খাজকাটা ও আন্দোলিত থাকে। এরা পাহাড় পর্বত, প্রস্তর খন্ড, পুরাতন অট্টালিকা, উদ্ভিদের বাকল প্রভৃতি অবলম্বনের গাত্রে জন্মায়। এ সকল লাইকেনের থ্যালাসের কেন্দ্রিয়াঞ্চল অবলম্বনের সাথে লেপ্টে থাকে কিন্তু এদের প্রান্তভাগ খোলা থাকে।
যেমন- Flavoparmelia caperata, Parmotrema tinctorum
গ) ফ্রুটিকোজ লাইকেন :
অধিক শাখা প্রশাখাবিশিষ্ট এবং জটিল দেহের লাইকেনকে বলা হয় ফ্রুটিকোজ লাইকেন। এ ধরনের লাইকেন চ্যাপ্টা বা দন্ডের ন্যায়, কেবল গোড়ার অংশ নির্ভরশীল বস্তুর সাথে লেগে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা অবলম্বনের গায়ে ঝুলন্তভাবে অবস্থান করে।
যেমন- Cladonia leporina, Letharia columbiana
আরও পড়ুন :- ছত্রাক কাকে বলে?
পাহাড় পর্বতের গাত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে লাইকেন ছাড়া অন্য কোন উদ্ভিদ জন্মায় না। সেখানে লাইকেনের মৃত দেহাবশেষ থেকে হিউমাস গঠিত হয়। উক্ত হিউমাস পাথরের সাথে মিশে মাটি তৈরি করে। সেখানে ধীরে ধীরে অন্যান্য উদ্ভিদ পর্যায়ক্রমে জন্মাতে শুরু করে। অর্থাৎ লাইকেনে জেরোসেরির সূচনা ঘটে।
পশুর খাদ্য :
এগুলো বলগা হরিণ এবং গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তুন্দ্রা অঞ্চলে বরফাচ্ছাদিত মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারী লাইকেনের ঘন আস্তরণ রেইনডিয়ার মস নামে পরিচিত।
কীটপতঙ্গের খাদ্য :
কীটপতঙ্গের লার্ভার খাদ্য হিসেবে লাইকেন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন- রং, লিটমাস পেপার, ঔষধ, সুগন্ধি, ট্যানিন, অ্যালকোহল, ন্যাপথালিন, কর্পূর ইত্যাদি দ্রব্য লাইকেন থেকে উৎপাদন করা যায়।
মানুষের খাদ্য :
অধিকাংশ লাইকেনে লাইকেনিন নামক কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতির কারণে মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নরওয়ে, সুইডেন ও আইসল্যান্ডের অধিবাসীরা Cerraria standica নামক লাইকেনটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
ঔষধ তৈরি :
জন্ডিস, ডায়রিয়া, জলাতঙ্ক এবং নানাবিধ চর্ম রোগের ঔষধ তৈরিতে লাইকেন ব্যবহার করা হয়।
বিষাক্ত লাইকেন : বিষাক্ত লাইকেন ভক্ষণ করে মানুষ ও গবাদি পশুর মৃত্যু ঘটতে পারে।
অট্টালিকার ক্ষতিসাধন : পুরাতন অট্টালিকার গায়ে বসবাসকারী লাইকেনের ক্রিয়ার ফলে অট্টালিকার যথেষ্ট ক্ষতি হয়।
বিবিধ ক্ষতিসাধন : মার্বেল পাথরের তৈরি মূল্যবান ভাস্কর্য, স্মৃতিসৌধ, মিনার, মন্দির ইত্যাদিতে বসবাসকারী লাইকেন পাথরে ক্ষয় সাধন করে এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে।
লাইকেন কাকে বলে :-
নির্দিষ্ট প্রজাতির শৈবাল (যেমন- এককোষী শৈবাল বা সায়ানোব্যাকটেরিয়া) এবং নির্দিষ্ট প্রজাতির ছত্রাক (যেমন- স্যাক বা ক্লাব ফানজাই) এর ঘনিষ্ঠ সহাবস্থান এবং পারস্পরিক সম্পর্কের কারণে এক বিশেষ প্রকৃতির থ্যালয়েড গঠন করে। যাকে লাইকেন (Lichen) বলা হয়।লাইকেন এর ছত্রাকটি থ্যালয়েড এর প্রধান অংশ গঠন করে। এটি শৈবালকে আশ্রয় দেয়। লাইকেনের মোট ভরের ৫-১০% ভর শৈবালের। শৈবাল থেকে উৎপাদিত খাদ্য খেয়ে ছত্রাক জীবন ধারণ করে। লাইকেন স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিষমপৃষ্ঠ এবং অপুষ্পক উদ্ভিদ। বিভিন্ন গবেষণায় এ পর্যন্ত ১৭,০০০ লাইকেন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন :- প্রোটিন কাকে বলে?
লাইকেন গাছের বাকল, পাতা, ক্ষয়প্রাপ্ত গুঁড়ি, মাটি, দেয়াল, পাথর, পর্বতগাত্র ইত্যাদি বস্তুর উপর জন্মায়। তুন্দ্রা অঞ্চল, মরু অঞ্চল, নীরস পর্বতগাত্রসহ সমস্ত প্রতিকূল অবস্থানে এরা জন্মাতে পারে।
লাইকেনের প্রকারভেদ :-
প্রাকৃতিক পরিবেশে বিভিন্ন আকৃতির লাইকেন পাওয়া যায়। বাহ্যিক গঠনগতভাবে লাইকেন তিন প্রকার। যথা-ক) ক্রাসটোজ লাইকেন,
খ) ফোলিয়োজ লাইকেন এবং
গ) ফ্রুটিকোজ লাইকেন।
ক) ক্রাসটোজ লাইকেন :
এরা চ্যাপ্টা, ক্ষুদ্রাকার এবং পোষক বস্তুর সাথে নিবিড়ভাবে লেগে থাকে। এরা পাহাড় পর্বত, প্রস্তর খন্ড, পুরাতন অট্টালিকা, উদ্ভিদের বাকল প্রভৃতি অবলম্বনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংলগ্ন থাকে।
যেমন- Cryptothecia rubrocincta, Diploicia canescens
খ) ফোলিয়োজ লাইকেন :
এ ধরনের লাইকেন দেখতে অনেকটা বিষমপৃষ্ঠ পাতার ন্যায়। এরা প্রশস্ত এবং এদের কিনারা খাজকাটা ও আন্দোলিত থাকে। এরা পাহাড় পর্বত, প্রস্তর খন্ড, পুরাতন অট্টালিকা, উদ্ভিদের বাকল প্রভৃতি অবলম্বনের গাত্রে জন্মায়। এ সকল লাইকেনের থ্যালাসের কেন্দ্রিয়াঞ্চল অবলম্বনের সাথে লেপ্টে থাকে কিন্তু এদের প্রান্তভাগ খোলা থাকে।
যেমন- Flavoparmelia caperata, Parmotrema tinctorum
গ) ফ্রুটিকোজ লাইকেন :
অধিক শাখা প্রশাখাবিশিষ্ট এবং জটিল দেহের লাইকেনকে বলা হয় ফ্রুটিকোজ লাইকেন। এ ধরনের লাইকেন চ্যাপ্টা বা দন্ডের ন্যায়, কেবল গোড়ার অংশ নির্ভরশীল বস্তুর সাথে লেগে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা অবলম্বনের গায়ে ঝুলন্তভাবে অবস্থান করে।
যেমন- Cladonia leporina, Letharia columbiana
আরও পড়ুন :- ছত্রাক কাকে বলে?
লাইকেনের গুরুত্ব :-
লাইকেনের উপকারী এবং অপকারী উভয় ভূমিকাই রয়েছে। যথাউপকারী ভূমিকা :-
জেরোসেরি :পাহাড় পর্বতের গাত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে লাইকেন ছাড়া অন্য কোন উদ্ভিদ জন্মায় না। সেখানে লাইকেনের মৃত দেহাবশেষ থেকে হিউমাস গঠিত হয়। উক্ত হিউমাস পাথরের সাথে মিশে মাটি তৈরি করে। সেখানে ধীরে ধীরে অন্যান্য উদ্ভিদ পর্যায়ক্রমে জন্মাতে শুরু করে। অর্থাৎ লাইকেনে জেরোসেরির সূচনা ঘটে।
পশুর খাদ্য :
এগুলো বলগা হরিণ এবং গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তুন্দ্রা অঞ্চলে বরফাচ্ছাদিত মাটি অথবা পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারী লাইকেনের ঘন আস্তরণ রেইনডিয়ার মস নামে পরিচিত।
কীটপতঙ্গের খাদ্য :
কীটপতঙ্গের লার্ভার খাদ্য হিসেবে লাইকেন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন- রং, লিটমাস পেপার, ঔষধ, সুগন্ধি, ট্যানিন, অ্যালকোহল, ন্যাপথালিন, কর্পূর ইত্যাদি দ্রব্য লাইকেন থেকে উৎপাদন করা যায়।
মানুষের খাদ্য :
অধিকাংশ লাইকেনে লাইকেনিন নামক কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতির কারণে মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নরওয়ে, সুইডেন ও আইসল্যান্ডের অধিবাসীরা Cerraria standica নামক লাইকেনটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
ঔষধ তৈরি :
জন্ডিস, ডায়রিয়া, জলাতঙ্ক এবং নানাবিধ চর্ম রোগের ঔষধ তৈরিতে লাইকেন ব্যবহার করা হয়।
অপকারী ভূমিকা :-
আশ্রয় দাতা উদ্ভিদের ক্ষতিসাধন : Cladonia, Amphiloma, Usnea প্রভৃতি লাইকেনের কোন কোন প্রজাতি তাদের আশ্রয়দাতা উদ্ভিদের ক্ষতি করে।বিষাক্ত লাইকেন : বিষাক্ত লাইকেন ভক্ষণ করে মানুষ ও গবাদি পশুর মৃত্যু ঘটতে পারে।
অট্টালিকার ক্ষতিসাধন : পুরাতন অট্টালিকার গায়ে বসবাসকারী লাইকেনের ক্রিয়ার ফলে অট্টালিকার যথেষ্ট ক্ষতি হয়।
বিবিধ ক্ষতিসাধন : মার্বেল পাথরের তৈরি মূল্যবান ভাস্কর্য, স্মৃতিসৌধ, মিনার, মন্দির ইত্যাদিতে বসবাসকারী লাইকেন পাথরে ক্ষয় সাধন করে এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে।
আরও পড়ুন :- শৈবাল কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.