এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম কাকে বলে:-
পরিণত কোষের সাইটোপ্লাজমে যে জালিকা বিন্যাস দেখা যায় তাকে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বা অন্তঃপ্লাজমীয় জালিকা বলা হয়।পোর্টার এবং তাঁর সঙ্গীরা (১৯৪৫) সর্বপ্রথম যকৃত কোষে এটি আবিষ্কার করেন।
সাইটোপ্লাজমীয়োঝিল্লী, নিউক্লিয়োঝিল্লী অথবা কোষ ঝিল্লী হতে এদের উৎপত্তি। অধিকাংশ কোষে এ অঙ্গাণু পাওয়া যায়। তবে যকৃত, অগ্ন্যাশয় এবং অন্তঃকলা কোষে বেশি থাকে।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম কত প্রকার ও কি কি :-
মূলত গঠন ও কাজের ভিত্তিতে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামকে ভাগ করা হয়।ক) গঠনগতভাবে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম তিন প্রকার। যথা-
- সিস্টার্নি,
- ভেসিকল এবং
- টিউবিউল।
এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হয়েছে -
সিস্টার্নি :
এরা লম্বা, চ্যাপ্টা, অশাখান্বিত, নলের ন্যায় এবং মোটামুটি সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত। এদের ব্যাস সাধারণত ৪০-৫০ মিলিমাইক্রন।
ভেসিকল:
এরা গোলাকার বা ডিম্বাকার এবং সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো থাকে। সাধারণত ২৫-৫০ মিলিমাইক্রন ব্যাসবিশিষ্ট ।
টিউবিউল :
এরা নলাকার এবং শাখা-প্রশাখাযুক্ত। এরা ৩০-১০০ মিলিয়াইক্রন ব্যাসবিশিষ্ট।
আরও পড়ুন :- ক্লোরোপ্লাস্ট কি?
খ) কাজের ভিত্তিতে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম দু'প্রকার। যথা-
- মসৃণ এবং
- অমসৃণ।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গায়ে রাইবোসোম থাকলে তাকে অমসৃণ এবং রাইবোসোম না থাকলে তাকে মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম বলা হয়। অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম প্রোটিন সংশ্লেষণ ও পরিবহনে সাহায্য করে।
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের গঠন :-
নিউক্লিয়ো ঝিল্লী হতে কোষ ঝিল্লী পর্যন্ত এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের বিস্তৃতি এটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট আংশিক অনুপ্রবেশ্য ঝিল্লী দ্বারা আবৃত ফাঁকা স্থান বিশেষ। এরা সাধারণত শাখান্বিত তবে সমান্তরালভাবেও অবস্থান করতে পারে। রাসায়নিকভাবে লিপিড ও প্রোটিন দ্বারা এ ঝিল্লী গঠিত।অমসৃণ রেটিকুলামে আরএনএ এবং গাইঅক্সিসোম নামক ক্ষুদ্রাকার কণা থাকতে পারে। অমসৃণ রেটিকুলামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন অংশকে মাইক্রোসোম বলে।
আরও পড়ুন :- ক্রোমোজোম কাকে বলে?
মসৃণ ও অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর মধ্যে পার্থক্য :-
গঠন এবং কাজে দু'প্রকার এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ছকের মাধ্যমে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো-পার্থক্যের বিষয় | মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম | অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম |
---|---|---|
অবস্থান | সাধারণত কোষ ঝিল্লীর নিকটে অবস্থিত। | সাধারণত নিউক্লিয়াসের কাছাকাছি অবস্থিত। |
রাইবোসোম | মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে রাইবোসোম অনুপস্থিত। | অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে রাইবোসোম উপস্থিত। |
প্রাপ্যতা | সাধারণত লিপিড সংশ্লেষণকারী কোষে বেশি থাকে। | সাধারণত প্রোটিন সংশ্লেষণকারী কোষে বেশি থাকে। |
উৎপত্তি | অমসৃণ অন্তঃপ্লাজমীয় জালিকার রাইবোসোম বিলুপ্তির ফলে উৎপন্ন হয়। | নিউক্লিয়ার ঝিল্লী থেকে উৎপন্ন হয়। |
উপাদান | সাধারণত টিউবিউলস দিয়ে তৈরি। | সাধারণত সিস্টার্নি দিয়ে তৈরি। |
কাজ | লিপিড, গ্লাইকোজেন, হরমোন ইত্যাদি সংশ্লেষিত করে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম জমা রাখে। | প্রোটিন সংশ্লেষণ করে ও প্রোটিন সূত্রককে ভাঁজ করে যথার্থ আকৃতি প্রদান করে। |
এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের কাজ :-
১. এটি প্রোটোপ্লাজমের কাঠামো হিসেবে কাজ করে প্রোটোপ্লাজমকে দৃঢ়তা প্রদান করে।২. অমসৃণ রেটিকুলাম প্রোটিন সংশ্লেষণে সহায়তা করে।
৩. মসৃণ রেটিকুলামে লিপিড, গ্লাইকোজেন, হরমোন ইত্যাদি সংশ্লেষিত হয়।
৪. এনজাইম বিক্রিয়ার ক্ষেত্র বিস্তৃত করে।
৫. নালিকার অভ্যন্তরে বিভিন্ন ক্ষরিত বস্তু সঞ্চিত থাকে।
৬. নালিকার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পদার্থ কোষের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সঞ্চালিত হয়।
৭. লিপিড ও প্রোটিনের অন্তঃবাহক হিসেবে কাজ করে।
৮. কোষ প্রাচীরের জন্য সেলুলোজ তৈরি করে।
আরও পড়ুন :- কোষ প্রাচীর কাকে বলে?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.