দ্বিপদ নামকরণ কাকে বলে? দ্বিপদ নামকরণের গুরুত্ব?

প্রতিটি বস্তুরই একটি নাম আছে। পরিচিতির জন্য মানুষই এসব নামকরণ করেছে। নামই বস্তুটির পরিচয় বহন করে। নামটি জানার সাথে সাথে ঐ বস্তুটির অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধেও জানা সহজ হয়। বিজ্ঞানীগণ প্রতিটি জীব প্রজাতিরই একটি করে নাম দিয়েছেন।

মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম Homo sapiens,

দোয়েল পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus saularis,

বাঘ (রয়েল বেঙ্গল)-এর বৈজ্ঞানিক নাম Panthera tigris,

আম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica,

বট গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus benghalensis।

দ্বিপদ নামকরণ কাকে বলে :-

উপরে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিটি জীব-প্রজাতির নামই দু'টি পদ নিয়ে গঠিত। জীব প্রজাতির নামকরণের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এটি করা হয়ে থাকে। দু'টি পদ নিয়ে গঠিত কোন জীব-প্রজাতির নামকে বলা হয় দ্বিপদ নাম এবং দু'টি পদের সমন্বয়ে নাম দেয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় দ্বিপদ নামকরণ।


দ্বিপদ নামকরণের নীতিমালা :-

কতগুলো সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে দ্বিপদ নামকরণ করা হয়ে থাকে। উদ্ভিদ প্রজাতির (শৈবাল ও ছত্রাক সহ) নামকরণ করা হয়ে থাকে ICBN (International Code of Botanical Nomenclature: বর্তমানে ICN = (International Code of Botanical Nomenclature for Algae, Fungi & Plants) -এর নীতিমালা অনুযায়ী এবং প্রাণী প্রজাতির নামকরণ করা হয় ICZN ( International Code of Zoological Nomenclature)- এর নীতিমালা অনুযায়ী। কোড হলো নামকরণের নীতিমালা সংক্রান্ত একটি মুদ্রিত পুস্তক। নামকরণের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নীতিমালা নিম্নরূপ-
দ্বিপদ নামকরণ কাকে বলে

১. নামকরণের ভাষা হবে ল্যাটিন।

২. প্রতিটি জীব-প্রজাতির নামের দু'টি অংশ (পদ) থাকবে, প্রথম অংশ হলো গণ নাম এবং দ্বিতীয় অংশ হলো প্রজাতিক পদ।

৩. একই দ্বিপদ নাম কোন দু'টি প্রজাতির জন্য প্রযোজ্য হবে না, একটি দ্বিপদ নাম কেবল মাত্র একটি প্রজাতির জন্যই সুনির্দিষ্ট।

আরও পড়ুন :- শ্বসন কি?

৪. গণ নামের প্রথম অক্ষর বড় হাতের (Capital letter) হবে, প্রজাতিক পদ ছোট অক্ষরে (Small letter) হবে।

৫. ছাপানো হলে দ্বিপদ নাম ইটালিক (ডানদিকে একটু বাঁকা) বা মোটা অক্ষরে (Bold face) হবে। হাতে লিখলে দ্বিপদ নামের নিচে দু'অংশে দু'টি টানা দাগ দিতে হবে; যেমন- Homo sapiens বা Homo sapiens.

৬. দ্বিপদ নামের শেষে নাম প্রদানকারীর নাম উল্লেখ করতে হয়, যেমন- Mangifera indica L…, L. হলো লিনিয়াসের সংক্ষিপ্ত রূপ। এ নামটি লিনিয়াস দিয়েছিলেন।

দ্বিপদ নামকরণের গুরুত্ব :-

১. প্রতিটি উদ্ভিদ প্রজাতি বা প্রাণী প্রজাতির বিভিন্ন সাধারণ নাম থাকতে পারে। বিভিন্ন ভাষায় (বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, ইত্যাদি) এ নাম ভিন্নতর হয়। অনেক সময় এক ভাষাতেও একটি উদ্ভিদের একাধিক নাম থাকতে পারে, যেমন একই উদ্ভিদ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইক্ষু, আখ, গেন্ডারী, কুশাইর, উক, ইত্যাদি নামে পরিচিত। এসব নামে এ উদ্ভিদটিকে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। জীব প্রজাতির দ্বিপদ নাম তথা বৈজ্ঞানিক নাম ঐ জীব প্রজাতিকে একই নামে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দেয়।

২. দ্বিপদ নামের মাধ্যমে একটি প্রজাতির যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ করা হয়, তাই নামটি জানার সাথে সাথে ঐ প্রজাতির প্রাপ্তিস্থান, বিস্তার, বৈশিষ্ট্যাবলী, গুণাগুণ, ভেষজগুণ ও খাদ্যমান সবই জানা সম্ভব হয়।

৩. ঐ নির্দিষ্ট প্রজাতিটি বর্তমান বিশ্বে এখনও বিরাজমান, না কি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বা বিলুপ্তির পথে তাও এখন জানা সম্ভব।

৪. জীববিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন, রসায়ন, ফার্মেসি এসব বিষয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে গবেষণা করা হয়। এসব গবেষণা মূলত দ্বিপদ নাম নির্ভর অর্থাৎ প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম নির্ভর। বৈজ্ঞানিক নামের মাধ্যমে সব গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করতে হয়।

আরও পড়ুন:- ক্রসিং ওভার কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ