ক্রোমোসোম কাকে বলে? ক্রোমোজোম কয় প্রকার ও কি কি?

ক্রোমোসোম নিউক্লিয়াসের অন্যতম প্রধান বস্তু। প্রত্যেক নিউক্লিয়াসে প্রজাতির বৈশিষ্ট্যানুসারে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে।

আদি কোষে কোন সুগঠিত নিউক্লিয়াস না থাকাতে তাতে কোন সুগঠিত ক্রোমোসোম থাকে না। তবে এদের কোষে বিশেষ ধরনের নিউক্লিয়ো দ্রব্য প্রো-ক্রোমোসোম বা আদি ক্রোমোসোম যুক্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। 

বিশেষ রঞ্জক ব্যবহার করে আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে বিভাজনরত কোষে ক্রোমোসোম দেখা যায়।

ক্রোমোসোম কাকে বলে :-

কোষস্থ নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতাসম্পন্ন, রং ধারণকারী নিউক্লিয়োপ্রোটিন দ্বারা গঠিত যে সব সূত্রাকৃতির ক্ষুদ্রাঙ্গ বংশগতীয় উপাদান, মিউটেশন, প্রকরণ প্রভৃতি কাজে ভূমিকা রাখে তাকে ক্রোমোসোম বলা হয়।

সাধারণত ০.২৫-৫০ মাইক্রোমিটার এবং ব্যাস ০.২-২.০ মাইক্রোমিটার হয়। মানবদেহের ক্রোমোসোমের গড় দৈর্ঘ্য ৪-৬ মাইক্রোমিটার হয়।

আরও পড়ুন :- কার্বোহাইড্রেট কাকে বলে?

ক্রোমোসোম কে আবিষ্কার করেন :-

১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রাসবুর্গার (Strasburger) ক্রোমোসোম আবিষ্কার করেন তবে তিনি এর নামকরণ করেননি। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ওয়ালডেয়ার (Waldeyer) ক্রোমোসোম (Chroma-রং, Some-ধারণ) শব্দটি ব্যবহার করেন।

ক্রোমোসোমের সংখ্যা : 

প্রজাতির বৈশিষ্ট্যভেদে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ২ থেকে ১৬০০ পর্যন্ত হয়। পুষ্পক উদ্ভিদে সর্বনিম্ন সংখ্যক ক্রোমোসোম পাওয়া গেছে।

ক্রোমোসোমের আয়তন ও আকৃতি :

প্রতিটি ক্রোমোসোমের একটি সুনির্দিষ্ট আয়তন থাকে। প্রজাতি অনুসারে ক্রোমোসোমের দৈর্ঘ্য।

ক্রোমোসোমের অবস্থান :

ক্রোমোসোম নিউক্লিয়াসে থাকে। কখনও কখনও নিউক্লিয়াসের বাইরে সাইটোপ্লাজমেও থাকতে পারে।
ক্রোমোসোম কাকে বলে

ক্রোমোজোম কয় প্রকার ও কি কি? :-

বৈশিষ্ট্যানুসারে কোন কোষের ক্রোমোসোম মূলতঃ দু'প্রকার। যথা-

১. অটোসোম (দৈহিক সকল বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে) এবং
২. সেক্স ক্রোমোসোম (লিঙ্গ নির্ধারণ করে)।

এছাড়া ক্রোমোসোমে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ক্রোমোসোমকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়।

১. মধ্যকেন্দ্রিক (Metacentric) :

যে সকল ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি মাঝখানে অবস্থিত তাকে মধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় মধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমকে ইংরেজি V অক্ষরের মত দেখায়। মধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমের বাহু দুটির দৈর্ঘ্য মোটামুটি পরস্পর সমান থাকে।

২. উপমধ্যকেন্দ্রিক (Sub metacentric) :

যে সব ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি ঠিক মধ্যখানে না থেকে সামান্য দূরে এক পাশে থাকে তাদেরকে উপমধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় উপমধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমকে ইংরেজি L অক্ষরের মত দেখায়। উপমধ্যকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমের একটি বাহু অন্যটি থেকে সামান্য বড়।

আরও পড়ুন :- লাইসোজোম কাকে বলে?

৩. উপপ্রান্তকেন্দ্রিক (Acrocentric ) :

যে সকল ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি কোন এক প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থিত থাকে তাকে উপপ্রান্তকেন্দ্রিক ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় উপপ্রান্তকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমকে ইংরেজি J অক্ষরের মত দেখায়। এ সকল ক্রোমোসোমের এক বাহু অনেক লম্বা এবং অপর বাহু বেশ খাটো।

৪. প্রান্তকেন্দ্রিক (Telocentric) :

যে সব ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে প্রান্তে থাকে তাকে প্রান্তকেন্দ্রিক ক্রোমোসোম বলে। কোষ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় প্রান্তকেন্দ্রিক ক্রোমোসোমকে ইংরেজি I অক্ষরের মত দেখায়। এ ধরনের ক্রোমোসোম একবাহুবিশিষ্ট।

ক্রোমোসোমের ভৌত গঠন :- 

কোষ বিভাজনের মেটাফেজ পর্যায়ে ক্রোমোসোম অত্যন্ত সুগঠিত থাকে। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃষ্ট একটি আদর্শ ক্রোমোসোমের প্রধান অংশগুলো সংক্ষেপে নিচে বর্ণনা করা হলো

ক) ক্রোমাটিড : মেটাফেজ দশায় ক্রোমোসোম লম্বালম্বিভাবে দুটি সুতার ন্যায় অংশে বিভক্ত থাকে যাকে ক্রোমাটিড বলে।

খ) সেন্ট্রোমিয়ার : সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোসোমের অবিচ্ছেদ্য অংশ যা ক্রোমাটিড দুটিকে সংযুক্ত রাখে। সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানটি ক্রোমোসোমে একটি খাঁজের সৃষ্টি করে। এ খাঁজকে মুখ্য কৃষ্ণন বলে।

গ) কাইনেটোকোর : সেন্ট্রোমিয়ারের মধ্যে বহির্মূখী বিপরীত দিকে অবস্থিত গোলাকার বস্ত্রই কাইনেটোকোর। কোষ বিভাজনের সময় কোষের বিপরীত মেরু থেকে আগত স্পিন্ডল তন্ত্র এসে কাইনেটোকোরের সাথে সংযুক্ত হয়।

ঘ) বাহু : মুখ্য কুঞ্চনের উভয় দিকের লম্বা অংশদ্বয়কে ক্রোমোসোমের বাহু বলে। বাহু দুটি দৈর্ঘ্যে সমান বা অসমান হতে ক্রোমাটিডদ্বয় সেন্ট্রোমিয়ার দ্বারা সংযুক্ত থাকে।

ঙ) গৌন কুঞ্চন : সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়া কোন কোন ক্রোমোসোমের বাহুতে এক বা একাধিক গৌণ কুঞ্চন থাকতে পারে।

চ) ক্রোমোমিয়ার : মায়োটিক কোষ বিভাজনের প্রোফেজ দশায় ক্রোমাটিডের গায়ে ছোট ছোট গুটিকার ন্যায় যে বস্তু দেখা যায় তাকে ক্রোমোমিয়ার বলা হয়।

আরও পড়ুন :- ক্লোরোপ্লাস্ট কাকে বলে?

ছ) পেলিকল : ক্রোমোসোমের দেহ একটি পর্দা দ্বারা আবৃত বলে ধারণা করা হয়। একে পেলিকল বলে।

জ) ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স : পেলিকল দ্বারা আবৃত তরল অংশকে ধাত্র বা ম্যাট্রিক্স বলে। তবে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ম্যাট্রিক্স ও পেলিকলের অস্তিত্ব দেখা যায়নি বলে আধুনিক কোষ বিজ্ঞানীগণ ক্রোমোসোমে এগুলোর উপস্থিতি অস্বীকার করেন।

ঝ) স্যাটেলাইট : গৌন কুঞ্চনের পর ক্রোমোসোমের খুব ছোট গোলাকার অংশকে স্যাটেলাইট বলে। ইহা ক্রোমোসোমের প্রান্তের দিকে থাকে।

ঞ) টেলোমিয়ার : প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এইচ.জে. মুলার (H.J. Muller) ক্রোমোসোমের প্রান্তদেশে টেলোমিয়ার নামক একটি বিন্দুর অবস্থান কল্পনা করেন। তিনি ধারণা করেন টেলোমিয়ারের অবস্থানের কারণে ক্রোমোসোমের দুটি প্রান্ত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হতে পারে না। টেলোমিয়ার একটি ক্রোমোসোমের অখন্ডতা রক্ষা করে।

ক্রোমোসোমের রাসায়নিক উপাদান :-

ক্রোমোসোমের প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো-

ক) নিউক্লিক অ্যাসিড :

ক্রোমোসোমে দু'ধরনের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। যথা DNA এবং RNA।

খ) প্রোটিন :

প্রোটিন হলো ক্রোমোসোমের মূল কাঠামো গঠনকারী রাসায়নিক উপাদান। এ কাঠামোতে নিউক্লিক অ্যাসিডগুলো বিন্যস্ত থাকে। ক্রোমোসোমে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগ ক্রোমোসোমে দু'ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়। যথা- হিস্টোন ও নন হিস্টোন।

উল্লিখিত উপাদান ছাড়াও ক্রোমোসোমে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, লিপিড, আয়রন, এনজাইম এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান খুব অল্প পরিমাণে থাকে।

ক্রোমোসোমের কাজ :-

১. ক্রোমোসোম বংশগতির বৈশিষ্ট্যসমূহের ধারক ও বাহক। এ কারণে এরা বংশ পরম্পরায় জীবের বৈশিষ্ট্য ধারণ, বহন ও স্থানান্তর করে।

২. বিভক্তির মাধ্যমে কোষ বিভাজনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।

৩. সেক্স ক্রোমোসোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

৪. ক্রোমোসোমে অবস্থিত বংশগতির বাহক জিন, জীবের ব্লু-প্রিন্ট হিসেবে কাজ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ