ক্লোরোপ্লাস্ট কি বা কাকে বলে? ক্লোরোপ্লাস্ট এর গঠন ও কাজ কি?

ক্লোরোপ্লাস্ট কাকে বলে :-

সবুজ বর্ণের প্লাস্টিডকে বলা হয় ক্লোরোপ্লাস্ট। উদ্ভিদের জন্য ক্লোরোপ্লাস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গাণু।

পিম্পার ১৮৮৩ সালে সর্বপ্রথম উদ্ভিদ কোষে সবুজ বর্ণের প্লাস্টিড লক্ষ্য করেন এবং নাম দেন।

ক্লোরোপ্লাস্টের উৎপত্তি :

নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে পুরানো ক্লোরোপ্লাস্ট বিভাজনের মাধ্যমে নতুন ক্লোরোপ্লাস্ট এর সৃষ্টি হয়। উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে আদি প্লাস্টিড থেকে এদের উৎপত্তি হয়। আদি প্লাস্টিড ০.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট একটি গোলাকার বস্তু। প্রতিটি আদি প্লাস্টিডে ঘন স্ট্রোমা একটি দু'স্তরবিশিষ্ট পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরোফিল সৃষ্টি হওয়াতে আদি প্লাস্টিড ক্লোরোপ্লাস্টে পরিণত হতে থাকে।

আরও পড়ুন :- ডিএনএ কাকে বলে?
  

প্রতি কোষে সংখ্যা : 

প্রতি কোষে এদের সংখ্যা এক বা একাধিক। উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদে প্রতি কোষে ১০-৪০টি

আকার :

উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদ কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট সাধারণত লেন্সের ন্যায় যা ৩-৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদে বিভিন্ন আকারের (যেমন পেয়ালাকার, সর্পিলাকার, জালিকাকার, তারকাকার, আংটি আকার হয়) ক্লোরোপ্লাস্ট পাওয়া যায়।
ক্লোরোপ্লাস্ট কাকে বলে

ক্লোরোপ্লাস্ট এর গঠন :-

ক্লোরোপ্লাস্ট এর গঠন বেশ জটিল। এটি সাধারণত নিম্নলিখিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত।

i) আবরণী (Membrane) :

প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্ট লিপোপ্রোটিন দিয়ে গঠিত একটি দ্বিস্তরবিশিষ্ট বৈষম্যভেদ্য পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। গঠনের দিক থেকে পর্দাটি প্লাজমা মেমব্রেনের ন্যায়। পর্দাটি ক্লোরোপ্লাস্টের অভ্যন্তরস্থ বস্তুসমূহকে রক্ষা করে এবং ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন বস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে।

ii) স্ট্রোমা (Stroma) :

পর্দা বেষ্টিত ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে অবস্থিত স্বচ্ছ, দানাদার, অসবুজ, সমসত্ত্ব অর্ধতরল পদার্থটি হচ্ছে স্ট্রোমা। লিপোপ্রোটিন ও কিছু এনজাইম এর সমন্বয়ে স্ট্রোমা গঠিত। স্ট্রোমা থানার ধাত্র বা মাতৃকা হিসেবে কাজ করে।

আরও পড়ুন :- কোষ কাকে বলে?

iii) থাইলাকয়েড ও গ্রানাম (Thylakoid and Granum) :

থাইলাকয়েড খলে আকৃতির। স্ট্রোমাতে অসংখ্য থাইলাকয়েড থাকে। প্রতিটি থাইলাকয়েড দু'স্তরবিশিষ্ট ঝিল্পী দিয়ে আবৃত থাকে। কতকগুলো থাইলাকয়েড বা গ্রানাম চক্রে এক সাথে একটির উপর আরেকটি গ্রুপের ন্যায় থাকে। থাইলাকয়েডের এ স্তুপকে গ্রানাম (বহুবচনে গ্রানা) বলে। প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্টে সাধারণতঃ ৪০-৬০টি গ্রানা থাকে।

iv) স্ট্রোমা ল্যামেলি (Stroma lamellae ) :

দু'টি পাশাপাশি গ্রানার কিছু সংখ্যক থাইলাকয়েড বা গ্রানাম চক্র সূক্ষ্ম নালিকা দিয়ে যুক্ত থাকে। এগুলোকে স্ট্রোমা ল্যামেলি (এক বচনে স্ট্রোমা ল্যামেলাম) বলে।

v) সালোকসংশ্লেষণকারী একক ও ATP Synthases :

থাইলাকয়েড ঝিল্লী অসংখ্য গোলাকার বস্তু বহন করে। এদেরকে ATP Synthases বলে। এতে ATP তৈরির সব ধরনের এনজাইম থাকে। ঝিল্লীতে সালোকসংশ্লেষণকারী উপাদান বিদ্যমান থাকে।

প্রতি ইউনিটে ক্লোরোফিল, ক্লোরোফিল-b, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিলের প্রায় ৩০০-৪০০ অণু বিদ্যমান। এছাড়াও এতে ফসফোলিপিড, সালফোলিপিড, কুইনোন এবং বিভিন্ন ধরনের এনজাইম প্রভৃতি থাকে।

vi) ক্লোরোপ্লাস্ট ডিএনএ ও রাইবোসোম :

এতে 70s মানের আদি কোষীয় রাইবোসোম বিদ্যমান থাকে। এরা ক্লোরোপ্লাস্টের দরকারী এনজাইম সংশ্লেষণ করে।


ক্লোরোপ্লাস্টের রাসায়নিক উপাদান :-

রাসায়নিকভাবে লিপিড (ক্লোরোপ্লাস্টের শুষ্ক ওজনের ১০-২০%), প্রোটিন, ক্লোরোফিল, ক্যারোটিনয়েড, ডিএনএ, আরএনএ, কিছু এনজাইম ও কোএনজাইম এবং খনিজ পদার্থ নিয়ে ক্লোরোপ্লাস্ট গঠিত।

ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজ কি :-

১. সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানির সাহায্যে শর্করা প্রস্তুত করা ক্লোরোপ্লাস্টের প্রধান কাজ।

২. ক্লোরোপ্লাস্টের প্রয়োজনে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড তৈরি করে।

৩. সূর্যালোকের সাহায্যে ADP কে ATP তে (ফটোফসফোরাইলেশন) এবং NADP কে NADPH তে রূপান্তরিত করে।

৪. এনজাইম এর সাহায্যে প্রোটিন ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য তৈরি করে।

৫. ফটোরেসপিরেশন ঘটায়।

৬. সাইটোপ্লাজমিক বংশগতি ধারায় সহায়তা করে।

আরও পড়ুন:- ছত্রাক কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ