কার্বোহাইড্রেট কাকে বলে? কার্বোহাইড্রেট কত প্রকার ও কি কি? কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি? Replace কার্বোহাইড্রেট কি বা কাকে বলে? শর্করা কাকে বলে? কার্বোহাইড্রেট কত প্রকার ও কি কি? কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি?

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা হচ্ছে প্রাণিদেহের শক্তির মূল যোগানদার। প্রকৃতিতে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় উপাদান পাওয়া বেশ সহজ। এই জাতীয় উপাদানের বিশ্লেষণে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পাওয়া যায়। সাধারণত শর্করা জাতীয় উপাদান গাছপালার সবুজ অংশে সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানি হতে তৈরি হয়।

কার্বোহাইড্রেট কি বা কাকে বলে :-

হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন ২:১ অনুপাতে যুক্ত হয়ে কার্বনের সাথে যে যৌগ গঠন করে তাই কার্বোহাহইড্রেট। এটি মিষ্টি স্বাদযুক্ত। সে কারণে কার্বোহাইড্রেটকে শর্করা বলে।

আরও পড়ুন :- ব্যাকটেরিয়া কি?

কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সমন্বয়ে গঠিত যে সমস্ত জৈব যৌগে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত ২:১ তাদেরকে শর্করা বলা হয়।

কার্বোহাইড্রেটের সাধারন সংকেত Cx(H2O)y, যেখানে X ও Y এর মান একই হতে পারে বা ভিন্ন হতে পারে এবং ভিন্ন হলে Y এর মান X এর মান অপেক্ষা করা হয়।

কার্বোহাইড্রেট কত প্রকার ও কি কি :-

দুটি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেটকে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। যথা-

ক) কার্বোহাইড্রেটের স্বাদ এবং

খ) কার্বোহাইড্রেটের আণবিক গঠন, আণবিক ওজন ও রাসায়নিক ধর্ম।

ক) কার্বোহাইড্রেটের স্বাদ :

স্বাদের উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেটকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

স্যুগার- এরা স্বাদে মিষ্ট, দানাদার এবং পানিতে দ্রবণীয়। যেমন- গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ ইত্যাদি।

নন স্যুগার- এরা স্বাদে মিষ্ট নয়, অদানাদার এবং পানিতে অদ্রবণীয়। যেমন- স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন ইত্যাদি।

খ) কার্বোহাইড্রেটের আণবিক গঠন, আণবিক ওজন ও রাসায়নিক ধর্ম :


আণবিক গঠন, আণবিক ওজন ও রাসায়নিক ধর্ম ইত্যাদির ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেটকে প্রধানত ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

আরও পড়ুন :- গলগি বডি কাকে বলে?

১. মনোস্যাকারাইড (Monosaccharide),

২. ডাইস্যাকারাইড (Disaccharide),

৩. অলিগোস্যাকারাইড (Oligosaccharide) এবং

৪. পলিস্যাকারাইড (polysaccharide)।

এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হয়েছে -
কার্বোহাইড্রেট কাকে বলে
১. মনোস্যাকারাইড :

গ্রীক শব্দ mono অর্থ এক এবং saccharum অর্থ চিনি। শব্দ দুটির সমন্বয়ে monosaccharide শব্দটি তৈরি হয়েছে। সরল শর্করার একককে মনোস্যাকারাইড বলে।

যে সকল কার্বোহাইড্রেটকে হাইড্রোলাইসিস করলে অন্য কোন সরল কার্বোহাইড্রেট একক পাওয়া যায় না তাদেরকে মনোস্যাকারাইড বলা হয়।

আরও সহজ ভাবে বললে, যে সমস্ত শর্করাকে আর্দ্রবিশ্লেষণ করলে তাদের শর্করার গুণাগুণ বজায় থাকে না তাদের মনোস্যাকারাইড বলে।

৩ থেকে ১০ কার্বন পরমাণুযুক্ত সরল শর্করা মনোস্যাকারাইড শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। কার্বন সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এদের নামকরণ করা হয়। যেমন ট্রায়োজ, টেট্রোনষছ, পেন্টোজ, হেক্সজ, হেপ্টোজ, অকটোজ, ন্যানোজ, ইত্যাদি।

২. ডাইস্যাকারাইড :

মনোস্যাকারাইডের দুটি অণু একত্রে যুক্ত হয়ে গঠন করে ডাইস্যাকারাইড। যথা- সুক্রোজ, সেলোবায়োজ, ম্যালটোজ, ল্যাক্টোজ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :- প্রোটিন কাকে বলে?

৩. অলিগোস্যাকারাইড :

যে সব কার্বোহাইড্রেটকে হাইড্রোলাইসিস করলে ৩ থেকে ১০টি মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায় তাদেরকে অলিগোস্যাকারাইড বলা হয়।

তিনের অধিক মনোস্যাকারাইড গ্লাইকোসাইডিক লিংকেজ দ্বারা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। একটি মনোস্যাকারাইডের হাইড্রোক্সিল গ্রুপের সাথে অপর একটি মনোস্যাকারাইডের হাইড্রোক্সিল গ্রুপের সংযুক্তিকে গ্লাইকোসাইডিক লিংকেজ বলা হয়।

অলিগোস্যাকারাইডগুলোকে তাদের মধ্যে বিদ্যমান মনোস্যাকারাইডের সংখ্যা দিয়ে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। যেমন- তিনটি মনোস্যাকারাইড থাকলে ট্রাইস্যাকারাইড, চারটি মনোস্যাকারাইড থাকলে ট্রোস্যাকারাইড, পাঁচটি থাকলে পেন্টাস্যাকারাইড ইত্যাদি।

৪. পলিস্যাকারাইড :

গ্রীক শব্দ poly (অনেক বা বহু) এবং saccharum (চিনি/শর্করা) শব্দ দুইটির সমন্বয়ে polysaccharide শব্দটি তৈরি হয়েছে।

যে সকল কার্বোহাইড্রেটকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে দশের বেশি মনোস্যাকারাইড অণু পাওয়া যায় তাদেরকে পলিস্যাকারাইড বলা হয়।

স্টার্ট বা শ্বেতসার, গ্লাইকোজেন বা প্রাণীজ শ্বেতসার, সেলুলোজ, ডেক্সট্রিন, ইনিউলিন প্রভৃতি পলিস্যাকারাইডের উদাহরণ।

গঠনগত এককের ভিত্তিতে পলিস্যাকারাইডকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় -

i) গ্লুকোসান (glucosan) শুধুমাত্র গ্লুকোজ অণু ।

ii) ফ্রুক্টোসান (fructosan) : অধুমাত্র ফ্রুক্টোজ অণু দ্বারা গঠিত।

iii) গালোকটান (galactan) শুধুমাত্র গ্যাল্যাকটোজ অণু দ্বারা গঠিত ।

iv) হেক্সোসান ( hexasan) বিভিন্ন প্রকার ৬ কার্বন মনোস্যাকারাইড অণু দ্বারা গঠিত।

আরও পড়ুন :- ক্লোরোপ্লাস্ট কাকে বলে?

কার্বোহাইড্রেট এর কাজ কি :-

১. জীবদেহের শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। কারণ- এরা জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।

২. উদ্ভিদের সাপোর্টিং টিস্যুর গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।

৩.উদ্ভিদের দেহ গঠনকারী পদার্থগুলোর কার্বন কাঠামো প্রদান করে।

৪. হাড়ের সন্ধিস্থলে লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৫. উদ্ভিদদেহে সঞ্চয়ী পদার্থ হিসেবে বিরাজ করে।

৬. ক্যালভিন চক্র ও ক্রেবস চক্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ